আপনজন ডেস্ক: ভারতকে তাদেরই মাটিতে ধবলধোলাই করে রীতিমতো উড়ছিল নিউজিল্যান্ড। একই সঙ্গে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে খেলার সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল। কিন্তু ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডের কাছে প্রথম টেস্টে হেরে সেই সম্ভাবনায় বড় ধাক্কা খেয়েছে নিউজিল্যান্ড। এরপর আইসিসির কাছ থেকে দুঃসংবাদ পাওয়ার পর স্বপ্ন আরও ফিকে হয়ে গেছে।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে মন্থর ওভার রেটের কারণে নিউজিল্যান্ডের ৩ পয়েন্ট কেটে নিয়েছে আইসিসি। এতে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট তালিকার চতুর্থ থেকে পঞ্চম স্থানে নেমে গেছে কিউইরা। একই কারণে সফরকারী ইংল্যান্ডেরও ৩ পয়েন্ট কাটা গেছে। এখানেই শাস্তির শেষ নয়। দুই দলের খেলোয়াড়দের ম্যাচ ফির ১৫ শতাংশ জরিমানাও করা হয়েছে।
আইসিসি জানিয়েছে, ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ড ও ইংল্যান্ড কাঙ্ক্ষিত ওভার রেটের চেয়ে ৩ ওভার পিছিয়ে ছিল। ম্যাচ শেষে আম্পায়াররা দুই দলের বিরুদ্ধেই মন্থর ওভার রেটের অভিযোগ আনেন। ম্যাচ রেফারি ডেভিড বুনের কাছে দুই অধিনায়ক নিউজিল্যান্ডের টম ল্যাথাম ও ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস অভিযোগ মেনে নেওয়ায় আনুষ্ঠানিক শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।
ম্যাচ রেফারির কাছে ‘দায় স্বীকার’ করলেও রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছেন স্টোকস। ইংলিশ অধিনায়কের দাবি, ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১০ ঘণ্টা আগেই শেষ হয়েছে। এরপরও মন্থর ওভার রেটের কারণে শাস্তি পাওয়া ঠিক নয়। আইসিসিকে এ–বিষয়ক নিয়ম পাল্টানোরও পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে আজ নিউজিল্যান্ড–ইংল্যান্ডকে জরিমানার খবরের শিরোনাম–সংবলিত একটি ছবি পোস্ট করেছেন স্টোকস। সেখানে আইসিসিকে উদ্দেশ্য করে তিনি ব্যঙ্গাত্মকভাবে লিখেছেন, ‘বাহ্ আইসিসি! নির্ধারিত সময়ের আরও ১০ ঘণ্টা আগেই ম্যাচ শেষ করেছি।’
ক্রাইস্টচার্চে ইংল্যান্ডকে ১০৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল স্বাগতিক নিউজিল্যান্ড। স্টোকসের দল চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনেই ৮ উইকেট হাতে রেখে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে। রান তাড়া করতে ইংল্যান্ডের সময় লাগে মাত্র ৫৩ মিনিট, খেলতে হয় ১২.৪ ওভার। ১০০–এর বেশি রান সফলভাবে তাড়ায় যা টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম।
ম্যাচ যখন শেষ হয়, তখন দেড় দিন বা চার সেশনের বেশি বাকি ছিল। এরপরও আইসিসি দুই দলকে জরিমানা করেছে কাঙ্ক্ষিত ওভার রেটের চেয়ে পিছিয়ে থাকার কারণে।
মন্থর ওভার রেটে আইসিসির এই শাস্তির কারণে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের খেলার আশা একরকম শেষ হয়ে গেলেও সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী স্টোকসের ইংল্যান্ড। ২০২৩–২৫ টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ চক্রে মন্থর ওভার রেটের কারণে এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি ২২ পয়েন্ট কাটা গেলে ইংলিশদের। নয়তো স্টোকসের দলও ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকত।
ইনস্টাগ্রামে আইসিসিকে ব্যঙ্গ করার পর আজ সংবাদ সম্মেলনেও এ নিয়ে কথা বলেছেন স্টোকস। তাঁর মতে, মন্থর ওভার রেটের এই নিয়ম আইসিসির পুনর্বিবেচনা করা উচিত। বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা খেলোয়াড়দের সঙ্গে ঠিকঠাক যোগাযোগ রক্ষা করছে না বলেও অভিযোগ তাঁর। ওয়েলিংটনে দ্বিতীয় টেস্ট সামনে রেখে তিনি বলেছেন, ‘দুই দলের দৃষ্টিকোণ থেকেই সবচেয়ে হতাশাজনক বিষয় হলো ম্যাচ আগেই শেষ হয়েছে এবং ফল এসেছে (এরপরও শাস্তি দেওয়া হলো)।’
স্টোকস আরও বলেছেন, ‘হতাশা আসলে গত বছরের অ্যাশেজেই ডালপালা মেলেছিল। সে সময়ই আমি প্রথমবারের মতো বিষয়টি (মন্থর ওভার রেটে জরিমানার নিয়ম) ম্যাচ রেফারি ও আম্পায়ারদের সামনে তুলে ধরেছিলাম।’
স্টোকসের দাবি, পেস–সহায়ক উইকেটে বেশি পেসার খেলানো হয় বলেই ওভার শেষ করতে দেরি হয়। তাই কোন ধরনের পিচে খেলা হচ্ছে, সেটার ওপর নির্ভর করে শাস্তি হওয়া উচিত, ‘আপনি বিশ্বের কোথায় আছেন (খেলছেন), সেটার ওপর নির্ভর করে। এখানে (যেখানে বেশি পেসার খেলানো হয়) এটা সব সময় একটি সমস্যা। এশিয়ায় ওভার রেট কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। কারণ, সেখানে অনেক স্পিনার খেলানো হয়।’
‘ফিল্ডিংয়ের সময় অনেক কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। বোলারের সঙ্গে ফিল্ডারদের জায়গা বদল নিয়ে আলোচনা করতে হয়। অধিনায়ক হওয়ায় আমাকে এই কাজ বহুবার করতে হয়। কখনো কখনো ওভারের ছয় বলেই ফিল্ডার সাজাতে হয়। কিন্তু তারা (আইসিসি) এটাকে বিবেচনায় নেয় না। তারা শুধু তাড়াতাড়ি বল করতে বলে। কিন্তু তাড়াহুড়া করলে তো চলবে না। কারণ, আমরা মাঠে খেলতে নেমেছি’—যোগ করেন স্টোকস।
বিষয়টি সুরাহা করতে আইসিসির সঙ্গে আলোচনায় বসতেও রাজি স্টোকস, ‘আপনি বিশ্বের যেখানেই যান, সময় ও নিয়ম সবার জন্য একই। কিন্তু খেলোয়াড়ের দৃষ্টিকোণ থেকে আমিই একমাত্র ব্যক্তি নই যে এই নিয়মের পরিবর্তন চাইছি। আমরা এই বিষয়ে আইসিসির সঙ্গে আরও আলোচনা করতে চাই।’
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct