জাফর আলি মোল্লা , ভোপাল, আপনজন: মধ্যপ্রদেশে ভোপালের তাজুল মসজিদ সংলগ্ন এইনখেড়ির ঘাসিপুরা এলাকায় তবলিগী জামাতের চারদিনের বিশ্ব ইজতেমার রবিবার ছিল তৃতীয় দিন। ইজতেমা কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে এদিন প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ মুসল্লি এই বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। এদিন বিভিন্ন ওলামায়ে কেরাম তথা তবলিগি জামাতের শীর্ষ ব্যক্তিত্বরা তাদের বক্তৃতায় ইসলামি মূল্যবোধে জীবনযাপন এবং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার পাশাপাশি সামাজিক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য বিশেষ আহ্বান জানান।
শনিবার ফজরের নামাজের পর মেওয়াত থেকে মাওলানা উমর মানির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুরু হয় আলামি তবলিগি ইজতেমার দ্বিতীয় দিন। তিনি মানুষকে ন্যায়ের পথে চলার আহ্বান জানান। এ ছাড়া একে অপরের সঙ্গে ভালো আচরণ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
জোহরের পর বক্তব্য রাখেন দিল্লি থেকে মৌলানা ইউসুফ। তিনি বলেন, সুদ থেকে টাকা নেবেন না, দেবেনও না। আল্লাহর ওপর ভরসা থাকলে যেকোনো পথ সহজ হয়ে যায়। তাবলিগ ইজতিমার তৃতীয় দিনে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে ওলামাদের বয়ান। এসব বক্তৃতায় তাবলিগ জামাত ও মুসলমানদের তালিম (শিক্ষা), ভ্রাতৃত্ববোধ, সামাজিক সম্প্রীতি এবং আল্লাহর (আল্লাহর) ইবাদত ও পালনের জন্য জোরালোভাবে উৎসাহিত করা হয়। মাওলানা জামশেদ সাহেব ইসলামী জীবনের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি ঈমানের দৃঢ়তা এবং ইসলামী সংস্কৃতি ও ধর্ম প্রচারের গুরুত্বের ওপর জোর দেন। মাওলানা বলেন, দ্বীনের কাজ শুধু দায়িত্ব নয়, এটি একটি ইবাদত, যা মানুষকে আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। মাওলানা মঞ্জুর সাহেব তার বক্তৃতায় তাওহীদ ও ইখলাসের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, মুসলমানদের উচিত সর্বাবস্থায় আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখা এবং তাদের সকল কাজে তাঁর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেওয়া। দিল্লি মারকাজ থেকে আগত তবলিগি জামাতের আমির মাওলানা সাদ কান্ধলভি প্রতিদিনই এই ইজতেমায় ভাষণ দেন। মাওলানা সা’দ সাহেবের বক্তব্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইসলামী নীতি-নৈতিকতা ও সমাজ সংস্কার। তিনি তার বক্তব্যে সামাজিক সম্প্রীতির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার বক্তব্য ইসলামী ঐক্য ও উম্মাহর উন্নতির উপর ভিত্তি করে। তিনি বলেন, আজকের যুগে মুসলমানদের নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে পারস্পরিক ঐক্য জোরদার করতে হবে। তিনি আরও বলেন, প্রত্যেক মুসলমানকে দ্বীন প্রচারে ভূমিকা রাখতে হবে। সেবার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ হয়।তিনি বলেন, ইসলাম শুধু উপাসনার ধর্ম নয়, এটি এমন একটি ধর্ম যা মানব জীবনের প্রতিটি দিক পরিচালনা করে। মাওলানা তাদের চরিত্রের মাধ্যমে ইসলামের সঠিক বাণী অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান। তার মূল বার্তাটি ছিল বিশ্বাসীদের মানবতার প্রতি সদয় হওয়ার আহ্বান জানানো। আর মুসলমানদের উচিত তাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করে পারস্পরিক ঐক্য গড়ে তোলা।
ইজতিমায় অংশগ্রহণকারী বিদেশী জামাতের সাথে দ্বিভাষিক লোকেরাও উপস্থিত থাকে, তারা তাদের ওলামাদের বক্তব্যের সারাংশ ব্যাখ্যা করে। একইভাবে সাংকেতিক ভাষায় বধির ও বোবা জামাতীদের বক্তব্যও ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। ইজতিমা কমিটির মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর ড. উমর হাফিজের মতে, এ বছর ২৩টি দেশের ১৪২ জন জামাতি ইজতিমায় এসেছেন। বিদেশি জাামতের জন্য তিন স্তরের নিরাপত্তা রয়েছে, যার প্রতিটি স্তরে ৫০জন স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়। তাদের ডিউটি আট ঘন্টা স্থায়ী হয়। এখানে উপস্থিত পুলিশ চৌকি থেকেও বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে। বিদেশি দল যেই আসুক না কেন, ভারত তাদের আয়োজক। এখানে তাদের যাতে কোনো সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে তবলিগি জামাত ভোপালের বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিয়েছে। এছাড়া যেসব দেশ থেকে তবলিগি জামাতের দল এসেছে, সেগুলি হল ফ্রান্স, মিশর, সুদান, উজবেকিস্তান, মালয়েশিয়া, জার্মানি, বাংলাদেশ, সৌদি আরব, কিরগিজস্তান, মরক্কো, মায়ানমার, তিউনিসিয়া, কেনিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, ইরাক, ব্রিটেন, সেনেগাল, থাইল্যান্ড। এভাবে ২৩টি দেশের ১৪২টিরও বেশি জামায়াত অংশগ্রহণ করেছে। তবে এ বছর পাকিস্তান থেকে কোনও তবলিগি জামাত আসেনি।
ইজতেমা কমিটি জানিয়েছে, প্রায় ৩৫০টি নিকাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে ইজতেমায়।
ইজতেমার স্থান সম্পর্কে ড. ওমর বলেন, ইজতেমার প্রধান দুটি দিক রয়েছে- অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক। বাহ্যিক দিকটির মধ্যে ট্র্যাফিক এবং পার্কিংয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। পার্কিং এলাকা গত বছরের তুলনায় ৩০০ একরে বাড়ানো হয়েছে। এ ছাড়া এবার ৬১টির পরিবর্তে ৬৬টি পার্কিং লট করা হয়েছে। একই সঙ্গে ভেতরের এলাকা ৩০০ একর এলাকা ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে প্যান্ডেল, ফুড জোন, জরুরি এলাকা, ওয়াজুখানা, গোসলখানা এবং অন্যান্য সুবিধা, যা গত বছরের তুলনায় ৫০ একর বেশি। আমাদের মোট আয়তন ৬০০ একর, যা ইজতেমার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এছাড়া ইজতেমা সাইটে একটি মেকানিক গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। ইজতেমার আসার যানবাহন ৫০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কোথাও খারাপ হয়ে গেলে সেগুলি সারিয়ে ইজতেমা স্থলের কাজে নিয়োজিত রয়েছেন তারা। এই মর্মে হেল্পলাইন নম্বর দিয়ে পোস্টাারও লাগানো হয়েছে। ফোন করলেই গাড়ি সারাই মিস্ত্রিরা সেখানে চলে যাবে।
সোমবার সকালে আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে চারদিনের এই বিশ্ব ইজতেমা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct