আপনজন ডেস্ক: বিজেপি নেতৃত্বাধীন মহায়ুতি মহারাষ্ট্রে ঐতিহাসিক ভূমিধসের মাধ্যমে ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল, যার ফলে ২৮৮ সদস্যের বিধানসভায় ২৩০টিরও বেশি আসন পাওয়ার পথে ছিল, এমভিএ-কে পুরোপুরি চূর্ণ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ৫০টিরও কম আসনে নেমে এসেছিল, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ডে জেএমএম প্রথম দল হিসাবে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল।
সবচেয়ে বড় বিষয় হল মহারাষ্ট্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট ভোট পেয়েছে ৪৯.৬ শতাংশ। যা গত বিধানসভা নির্বাচনের তুলনায় ১.৮৯ শতাংশ কম। গত বিধানসভার তুলনায় কম শতাংশ ভোট পেলেও আসন সংখ্যা অনেকটাই বাড়িয়ে নিতে পেরেছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট। অথচ, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট পেয়েছে ৩৫.৩ শতাংশ ভোট। কংগ্রেস জোটের ভোট ১২.৮৮ শতাংশ বাড়লেও তারা কিন্তু এবার আসন সংখ্যা বাড়ানো তো দূরের কথা অনেকটাই কমে গিয়েছে।
অপরদিকে ঝাড়খণ্ডে ইন্ডিয়া জোট পেয়েছে ৪৫.৩ শতাংশ ভোট, যা গতবারের তুলনায় ৮.৭৫ শতাংশ বেশি ভোট পেয়েছে। এনডিএ জোট ঝাড়খণ্ডে পেয়েছে ৪২.৩ শতাংশ, যা গতবারের থেকে ০.৬৭ শতাংশ কম। অন্যদিকে, আসাম, বিহার, ছত্তিশগড়, গুজরাট ও উত্তরাখণ্ডের ১৪টি রাজ্যের ৪৮টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও বিজেপি আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে বিজেপি সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। পশ্চিমবঙ্গে ৬টি কেন্দ্রের উপনির্বাচনে ছটিতেই বিজেপি হেরে গিয়েছে।
লোকসভার দুটি উপনির্বাচনের দুটিতেই কংগ্রেস প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন। কেরলের ওয়ানাডে কংগ্রেস প্রার্থী িপ্রয়াঙ্কা গান্ধি সিপিএমের সত্যান মুখেরিকে ৪ লক্ষ ১০৯৩১ ভোটে পরাজিত করেছেন। আর মহারাষ্ট্রের নান্দেড কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী চবন রবীন্দ্র বসন্তরাও বিজেপি প্রার্থী মান্তুকরাও মারুতরাওকে ১৪৫৭ ভোটে পরাজিত করেছে।
তবে, মহারাষ্ট্র বিধানসভায় এবার ইন্ডিয়া জোটের বিধায়ক সংখ্যা কমে গেলেও মুসলিম বিধায়কের সংখ্যা কমেনি। অল্প মার্জিনে একজন মিম বিধায়ক না হারলে ইন্ডিয়া জোটের দুর্দিনে বেড়ে যেত মুসলিম বিধায়কের সংখ্যা।
মহারাষ্ট্রের মানখুর্দ শিবাজি নগর বিধানসভা আসন থেকে সমাজবাদী পার্টির প্রার্থী আবু আসিম আজমি তার প্রতিদ্বন্দ্বী এআইএমআইএম প্রার্থী আতিক আহমেদ খানকে পরাজিত করেছেন। আবু আসিম আজমি ১২ হাজার ৭৫৩ ভোটে এআইএমআইএম প্রার্থীকে পরাজিত করেছেন। এই নিয়ে পরপর চারবার তিনি বিধায়ক হলেন। ভিওয়ান্ডি পূর্ব বিধানসভা আসন থেকে এসপি প্রার্থী রইস কাসাম শেখ জয়ী হয়েছেন। তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী শিবসেনা (শিন্দে দল) প্রার্থী সন্তোষ মাঞ্জেয়া শেঠিকে ৫২হাজার ১৫ ভোটে পরাজিত করেছেন। কাগাল বিধানসভা আসন থেকে, এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) প্রার্থী মুশরিফ হাসান মিয়ালাল তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এনসিপি (শারদ পাওয়ার গোষ্ঠী) প্রার্থী ঘাটগে সমরজিৎসিংহ বিক্রমসিংহকে ১১ হাজার ৫৮১ ভোটে পরাজিত করেছেন। শিবসেনার (উদ্ধব গোষ্ঠী) শিবসেনার (উদ্ধব বালাসাহেব ঠাকরের) একমাত্র মুসলিম প্রার্থী হারুন খান বিজেপি প্রার্থী ড. ভারতী লাভকারকে ১৬০০ভোটে পরাজিত করেছেন। সানা মালিক, প্রাক্তন মন্ত্রী নবাব মালিকের মেয়ে এবং এনসিপি (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) প্রার্থী, মহারাষ্ট্রের অনুশক্তি নগর বিধানসভা আসন থেকে জয়ী হয়েছেন। শেষ রাউন্ডে তিনি তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বরা ভাস্করের স্বামী ফাহাদ আহমেদকে ৩ হাজার ৩৭৮ ভোটে পরাজিত করেন। কংগ্রেস প্রার্থী সাজিদ খান পাঠান মহারাষ্ট্রের আকোলা পশ্চিম বিধানসভা আসন থেকে ১ হাজার ২৮৩ ভোটে জয়ী হয়েছেন। মালাড পশ্চিম বিধানসভা আসন থেকে কংগ্রেস প্রার্থী আসলাম রঞ্জন আলি শেখ তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থী বিনোদ শেলারকে ৬ হাজার ২২৭ ভোটে পরাজিত করেছেন। এআইএমআইএম প্রার্থী মুফতি মোহাম্মদ ইসমাইল আব্দুল খালিক মালেগাঁও কেন্দ্রীয় বিধানসভা আসন থেকে পুনরায় বিজয়ী হয়েছেন। তিনি কংগ্রেস প্রার্থী আসিফ শেখ রশিদকে মাত্র ৭৫ ভোটে পরাজিত করেন।
সিলোদ কেন্দ্র থেকে শিবসেনা (শিণ্ডে) প্রার্থী আবদুস সাত্তার শিবসেনা (উদ্ধব) প্রার্থী বাঙ্কার সুরেশ পাণ্ডুরামকে ২৪২০ ভোটে হারিয়েছেন।
মুম্বাদেবী বিধানসভা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী আমিন প্যাটেল শিবসেনা (শিণ্ডে) প্রার্থী সােইনা মনীষকে ৩৪৮৪৪ ভোটে পরাজিত করেছেন।
ঝাড়খণ্ড বিধানসভায় ২০১৯ সালে চারজন মুসলিম বিধায়ক ছিলেন। এবার সেই চারজন। রাজমহল কেন্দ্রে থেকে ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা প্রার্থী সেখ তাজুদ্দিন বিজেপি প্রর্থী অনন্তকুমার ওঝাকে ৪৩৪৩২ ভোটে হারিয়েছেন। মধুপুর থেকে ঝাড়খণ্ড মুক্তিমোর্চা প্রার্থী হাফিজুল হাসান বিজেপির গঙ্গানারায়ণ সিংকে ২০০২৭ ভোট পরাজিত করেছেন। পাকুড় কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী নিশাত আলম আজসু পার্টির আজহার ইসলামকে
৮৬০২৯ ভোটে হারিয়েছেন। অার জামতারা কেন্দ্র থেকে কংগ্রেস প্রার্থী ইরফান আনসারি বিজেপি প্রার্থী সীতা মুর্মুর বিরুদ্ধে ৪৩৬৭৬ ভোটে জয়ী হয়েছেন।
অপরদিকে, দেশের কয়েকটি রাজ্যের উপনির্বাচনে মাত্র দুজন মুসলিম প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের সিশামউ বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচনে সমাজবাদী পার্টির নাসিম সোলাঙ্কি বিজেপির সুরেশ আওয়াস্থিকে ৮৫৬৪ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের হাড়োয়া কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস প্রয়াত হাজি নুরুল ইসলামের পুত্র সেখ রবিউল ইসলাম আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলামকে ১ লক্ষ ৩১৩৮৮ ভোটে পরাজিত করেছেন। এই কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস মাত্র ১৩৫৭০টি ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct