আপনজন ডেস্ক: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধ করার অভিযোগে দখলদার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। এছাড়া একই অপরাধে দেশটির সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গালান্টের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি করেছে হেগের এই আদালত।
বৃহস্পতিবার এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গাজায় আগ্রাসন চলার মধ্যে এই প্রথম আন্তর্জাতিক আদালত নেতানিয়াহু বা কোনো ইসরায়েলি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করলেন। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছাড়াও হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। যদিও গত জুলাইয়ে তাদের এক বিমান হামলায় দেইফের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেছিল ইসরায়েল। তবে হামাস আজও এই তথ্য নিশ্চিত করেনি।
আইসিসি বলছে, ‘ক্ষুধাকে ব্যবহার করে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের জন্য এই দুইজনকে দায়ী করার যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে।’
‘দুইজনের প্রত্যেকের অন্যদের সাথে মিলে যৌথভাবে সহ-অপরাধী হিসেবে নিম্নলিখিত অপরাধের জন্য ফৌজদারি দায়বদ্ধতা রয়েছে: যুদ্ধের পদ্ধতি হিসেবে ক্ষুধার ব্যবহার এবং হত্যা, নিপীড়ন এবং অন্যান্য অমানবিক কাজের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন।’
নেতানিয়াহু কি গ্রেফতার হবেন?
নেতানিয়াহু, গ্যালান্ট এবং দেইফের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০২ সালে। নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত এই আন্তর্জাতিক আদালতের উদ্দেশ্য ছিল, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধের মতো নৃশংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনা। তবে এটি জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বিচার আদালত (আইসিজে) থেকে আলাদা। আইসিসির নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই। ফলে জারি করা গ্রেফতারি পরোয়ানা কার্যকর করার জন্য তারা তাদের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর উপর নির্ভর করে।
এই আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য মোট ১২৪টি দেশ ‘রোম স্ট্যাটিউট’ নামে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
এর মধ্যে ৩৩টি আফ্রিকান, ১৯টি এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয়, ১৯টি পূর্ব-ইউরোপীয়, ২৮টি ল্যাটিন আমেরিকান এবং ক্যারিবীয় এবং ২৫টি পশ্চিম ইউরোপীয় ও অন্যান্য রাষ্ট্র রয়েছে। তবে এটিকে আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়নি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন এবং ইসরায়েল। ইসরায়েল আইসিসির সদস্য দেশ না হওয়ায় এর ওপর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কোনো এখতিয়ার নেই বলে দাবি করে দেশটি।
তবে বৃহস্পতিবার গ্রেফতারি পরোয়ানা ঘোষণা করার সময় আইসিসি জানায় যে এর সদস্য রাষ্ট্র ‘ফিলিস্তিনের আঞ্চলিক বিচারিক এখতিয়ারের ভিত্তিতে’ ইসরায়েলের ওপর বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারে। যদিও কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া আইসিসি সাধারণত অনুপস্থিত আসামিদের বিচার করে না। যার অর্থ দাঁড়ায়, সম্ভবত নেতানিয়াহু এবং গ্যালান্ট আইসিসির কোনো সদস্য রাষ্ট্রে ভ্রমণ করা বা গ্রেফতার না হওয়া কিংবা দু’জনকে হেগে না আনা পর্যন্ত তাদের বিচারের মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা নেই। ফলে পরোয়ানা জারি হলেও নেতানিয়াহু কিংবা গ্যালান্টকে তাৎক্ষণিকভাবে গ্রেফতারের মুখোমুখি হতে হবে না। তবে এরপর থেকে তাদের জন্য যেকোনো দেশে ভ্রমণ করা জটিল হবে, একইসঙ্গে এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে ইসরায়েলকে আরও বিচ্ছিন্ন করার হুমকি তৈরি হলো।
আগের গ্রেফতারি পরোয়ানাগুলো কীভাবে কার্যকর হয়েছে?
আইসিসির সদস্যভুক্ত দেশগুলো যে সবসময়ই গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি কার্যকর করে, তেমনও না। যেমন, ইউক্রেনে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধেও গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি।
অথচ গত সেপ্টেম্বরে আইসিসির সদস্যভুক্ত দেশ মঙ্গোলিয়ায় রাষ্ট্রীয় সফরে গেলেও সেখানে তাকে গ্রেফতার করা হয়নি বরং সফরের সময় দেশটিতে তিনি উষ্ণ অভ্যর্থনা পান। তবে ২০২৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় অনুষ্ঠিত ব্রিকস সামিটে যাননি পুতিন। সেসময় দেশটির আদালত বলেছিল, পুতিনকে গ্রেফতার করা সরকারের দায়িত্ব।
এর আগে দারফুর অঞ্চলে যুদ্ধাপরাধের জন্য ২০০৯ সালে সুদানের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আইসিসি।
তবে ২০১৫ সালে বশির সাউথ আফ্রিকা গেলেও তাকে গ্রেফতার করেনি দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct