পাশারুল আলম: সম্প্রতি ইতালির একটি আদালত যে, জেলুজালেম নিয়ে যে রায় দিয়েছেন তা আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং আল-আকসার অধিকারের জন্য যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমের মর্যাদা সম্পর্কে একটি ইতালীয় আদালতে একটি মামলা হয়। জেলিজালেম ইসরাইলের রাজধানী এই প্রোপাগান্ডা বিরুদ্ধে ছিল এই মামলা। এই রায় জেরুজালেম ইসরাইলের রাজধানী নয় এই বলে আদালত জানিয়েছে।এই রায় আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংবাদিকতার নীতিশাস্ত্র এবং দীর্ঘস্থায়ী ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এই যুগান্তকারী রায়, যা বলে যে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দেওয়া আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে এবং এই বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচারের নিন্দা করে। আন্তর্জাতিক নিয়ম এবং সাংবাদিকতার দায়িত্ব মেনে চলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এর রায়ের ফলে ভূ-রাজনীতি, মিডিয়ার জবাবদিহিতা এবং মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার, বিশেষ করে আল-আকসা মসজিদের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্ব পূর্ণ অধ্যায়।
ইতালি, জাতিসংঘের বেশিরভাগ সদস্য রাষ্ট্রের মতো, পূর্ব জেরুজালেমকে একটি আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত অঞ্চল এবং শহরটির উপর ইসরায়েলের একতরফা দাবিকে স্বীকৃতি দেয় না। ইতালীয় আদালতের রায় এই অবস্থানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘের রেজুলেশনের প্রতি ইতালির প্রতিশ্রুতিকে শক্তিশালী করে। যেমন নিরাপত্তা পরিষদের ৪৭৮ নম্বর রেজোলিউশন যা পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের সংযুক্তির বিরোধিতা করে। এই রায় বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত নীতির বৈচারিক অনুমোদনের প্রতীক । যা পূর্ব জেরুজালেম ফিলিস্তিনের একটি অংশ, মধ্যপ্রাচ্যে ভারসাম্যপূর্ণ কূটনীতির একটি মেইল স্টোন হিসেবে ইতালির ভূমিকাকে আরও দৃঢ় করে।
পশ্চিমা মিডিয়া যে ভাবে জেরুজালেম কে নিয়ে প্রোপাগান্ডা ছড়ায় তার জবাবদিহিতা দেওয়ার রাস্তা খুলেছে। জেরুজালেমের অবস্থা সম্পর্কে মিথ্যা তথ্য সংশোধন করার জন্য মিডিয়া সংস্থাগুলির রায়ের আদেশ জনমত এবং নীতি গঠনে সাংবাদিকতার ভূমিকাকে তুলে ধরেছে। ভুল প্রচারের জন্য মিডিয়া আউটলেটগুলিকে দায়বদ্ধ রাখার মাধ্যমে এই রায়টি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণকে প্রভাবিত করবে। এমন পক্ষপাতদুষ্ট আখ্যান এবং প্রচারকে হ্রাস করবে। এই নজির শুধুমাত্র সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতা রক্ষা করে না বরং সংবেদনশীল ভূ-রাজনৈতিক ইস্যুতে জনসম্মুখে বাস্তবিক নির্ভুল তথ্য উপস্থাপনের ভিত্তি নিশ্চিত করবে।
১. ইসরাইল এবং তার মিত্রদের জন্য একটি রাজনৈতিক বার্তা
এই রায়টি পরোক্ষভাবে জেরুজালেমের উপর ইসরায়েলের দাবিকে চ্যালেঞ্জ করে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ, যে দেশগুলি ২০১৭ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছিল তার একতরফা নীতিকে সমর্থন করে এমন দেশগুলির সমালোচনা হিসাবে বিবেচিত হবে এই রায়। এই রায় জেরুজালেমের বিতর্কিত মর্যাদা পুনর্নিশ্চিত করেছে। রায়টি বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একতরফা ঘোষণার উপর আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখার গুরুত্ব সম্পর্কে একটি বার্তা দিয়েছে। ইসরায়েলের দাবিকে বৈধতা দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে আরো জটিল করে তুলবে।
২. আল-আকসা এবং ফিলিস্তিনি অধিকারের জন্য মামলা শক্তিশালী একটি উপাদান হিসেবে কাজ করবে। শুধু তাই নয়, মুসলিম সম্প্রদায় এবং আল-আকসা অধিকারের উপর প্রভাব বিস্তার করবে। একথা সর্বজনবিদিত যে, জেরুজালেম মুসলমানদের জন্য অপরিসীম ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব বহন করে। আল-আকসা মসজিদ ইসলামের অন্যতম পবিত্র স্থান। যদিও আদালত স্পষ্টভাবে ফিলিস্তিনি অধিকার বা আল-আকসাকে সম্বোধন করেনি। তবে জেরুজালেমকে বিতর্কিত এলাকা হিসেবে স্বীকার করা মুসলিমদের দাবিকে স্পষ্টভাবে সমর্থন করে। এটি পূর্ব জেরুজালেমের সার্বভৌমত্ব এবং আল-আকসার সুরক্ষার জন্য ফিলিস্তিনিদের দাবির নৈতিক ও আইনি ভিত্তিকে শক্তিশালী করতে পারে।
যেমন গতকাল আইসিসি রায়ের পর বিশ্বের বহু দেশ ইসরাইল সম্পর্কে তাদের অবস্থান বদল করেছে, তেমনি
এই রায় ইসরালিদের অবৈধ বসতি স্থাপন কার্যক্রম বন্ধ করতে এবং পূর্ব জেরুজালেমে আরও দখল থেকে বিরত থাকার জন্য ইসরায়েলের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে পারে। ফিলিস্তিনি-পন্থী আন্দোলন এবং মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী কূটনৈতিক পদক্ষেপের পক্ষে ওকালতি করার জন্য এই রায়ের সুবিধা নিতে পারবে। যা ফিলিস্তিনিদের অধিকারকে সম্মান এবং অধিকারের দাবিকে সমুন্নত করবে।
ইতালীয় আদালতের এই রায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নতুন চেতনা অনুরণিত হতে পারে। বিশেষ করে ফিলিস্তিনের আত্মনিয়ন্ত্রণকে সমর্থনকারী দেশ এবং সংস্থাগুলির মধ্যে। আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে জেরুজালেমকে ভাগ করার প্রচেষ্টা ধাক্কা খাবে। এই রায় মুসলিম সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বব্যাপী সংহতি বৃদ্ধি করতে পারে এবং সংঘাতের একটি ন্যায্য সমাধানের আহ্বানকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এই রায়ের বিস্তৃত মূল্যায়ন করতে গেলে দেখা যাবে যে, ইতালীয় আদালতের রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনি ও নৈতিক নজির স্থাপন করে। আন্তর্জাতিক আইনের গুরুত্ব, সত্যবাদী সাংবাদিকতা এবং জেরুজালেম প্রশ্নে বিশ্বব্যাপী সংহতির ওপর জোর দেয়। যদিও একমাত্র রায়টি ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপ পরিবর্তন করতে পারে না বা ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের সমাধান করতে পারে না, এটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের একটি সমালোচনামূলক অনুস্মারক হিসাবে কাজ করবে। এর প্রভাব নির্ভর করবে মুসলিম দেশগুলো, ফিলিস্তিনপন্থী উকিল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই রায়কে কতটা কার্যকরভাবে পুঁজি করে সংলাপ এগিয়ে নিতে এবং ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে চলতে চাপ দিতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ইতালীয় আদালতের রায় আন্তর্জাতিক আইন সমুন্নত রাখা এবং মিডিয়ার জবাবদিহিতা প্রচারের দিকে একটি প্রশংসনীয় পদক্ষেপ। যদিও বর্তমান যুদ্ধ বিধ্বস্ত অঞ্চল হিসাবে এর তাৎক্ষণিক প্রভাব সীমিত হতে পারে। কিন্তু জেরুজালেম সম্পর্কিত বিশ্বব্যাপী সচেতনতা এবং সংহতিকে প্রভাবিত করার সম্ভাবনাকে অবমূল্যায়ন করা যায় না। সংলাপ, জবাবদিহিতা এবং আইনি নীতির প্রতি আনুগত্যকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে, রায়টি ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে ন্যায়বিচার ও শান্তির জন্য বৃহত্তর সংগ্রামে অবদান রাখবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct