আপনজন ডেস্ক: শনিবার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনের ভোট গণনা। ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস উপনির্বাচনে নিজেদের ক্ষমতা জাহির করার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। তবে দুর্নীতি এবং আরজি করের শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জনরোষের উপর ভরসা রাখছে বিজেপি।
২০২৬ সালের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই উপনির্বাচনটি শেষ বড় অ্যাসিড টেস্ট। আরজি কর হাপাতালের এক পিজিডি চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদের জন্ম দিয়েছে।
মৃতের ন্যায়বিচার এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের দাবিতে জুনিয়র ডাক্তারদের নেতৃত্বে চলমান আন্দোলন এমন একটি রাজনৈতিক পরিবেশ তৈরি করেছে। যদিও এই বিক্ষোভকে গ্রামাঞ্চলের চেয়ে বেশি শহরকেন্দ্রিক হিসাবে দেখা হচ্ছে। তার কোনও প্রভাব পড়বে কিনা সেটা দেখার বিষয়।
ছয়টি আসনের মধ্যে মাদারিহাট ও সিতাই উত্তর বঙ্গে এবং বাকি চারটি তালডাংরা, মেদিনীপুর, হাড়োয়া ও নৈহাটি দক্ষিণ বঙ্গে। ২০২১ সালে এর মধ্যে ৫টি আসনে জয়ী হয়েছিল তৃণমূল, আর বিজেপি জিতেছিল একটি আসনে। এই বছরের শুরুর দিকে অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচনের পর ছয়টি আসন খালি হয়েছিল।
উপনির্বাচন প্রসঙ্গে তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, জনগণের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আমরা আশাবাদী বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়নমূলক উদ্যোগকে মানুষ ভোট দিয়েছেন। আমরা ছয়টির মধ্যে ছয়টিতেই জিতব বলে আশা করছি।
তৃণমূল কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, মনে হচ্ছে মাত্র ছ’টি বিধানসভা আসন, কিন্তু উপনির্বাচনের সময়টা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আশাবাদী যে আমরা ছয়টি আসনই জিতব। যদি তাই হয়, তাহলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে যে আর জি করের প্রতিবাদ ভোটারদের মনে কোনও প্রভাব ফেলেনি। বিক্ষোভও স্তিমিত হয়ে পড়েছে। সেটা মাথায় রেখে আমাদের দলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করবেন।
উল্লেখ্য, সোমবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলে বড়সড় রদবদলের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, যা ডিসেম্বরে ঘোষণা করা হবে।
বিজেপির কাছে ছয়টির মধ্যে তাদের জেতা আসন মাদারিহাট রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন। তারা জিতলে তাদের জন্য মুখ রক্ষা হবে। যদিও বিজেপি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ২৯৪ টি আসনের মধ্যে ৭৭ টি আসন জিতেছিল। এরপরে অবশ্য বিজেপির বেশ কয়েকজন বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেওয়ায় তাদের বিধায়ক সংখ্যা কমে যায়।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার কথায়, আমরা যদি মাদারিহাট ধরে রাখতে পারি তাহলে সেটা আমাদের জন্য দারুণ একটা পারফরম্যান্স হবে। জয় প্রমাণ করবে যে আমাদের বিরুদ্ধে এত প্রতিকূলতার পরেও মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে।
সিপিআইএম নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট এবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করলেও বাম-আইএসএফ জোটের উপর নির্ভর করছে। উপ-নির্বাচনে আসনগুলির মধ্যে পাঁচটি আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী দিয়েছিল (একটিতে সিপিআইএমএল লিবারেশনসহ) এবং একটি আসন আইএসএফকে তারা ছেড়ে দিয়েছিল।
২০২১ সালের পর প্রথমবার কংগ্রেস থেকে পৃথকভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা বামফ্রন্ট এই উপনির্বাচনকে তৃণমূল এবং বিজেপির প্রতি অসন্তোষের মধ্যে তার প্রাসঙ্গিকতা পরীক্ষা করার সুযোগ হিসাবে দেখছে। কংগ্রেসের নতুন রাজ্য সভাপতি শুভঙ্কর সরকারের নেতৃত্বে ছ’টি কেন্দ্রেই প্রার্থী দিয়েছে কংগ্রেস।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই বছর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস তার আধিপত্য বজায় রাখলেও বিজেপি এই দুটি বিধানসভা কেন্দ্র মাদারিহাট এবং মেদিনীপুরে যথাক্রমে ৯,০০০ এবং ১১,০০০ ভোটে এগিয়ে ছিল। অন্যদিকে সিতাই (২৯ হাজার), নৈহাটি (১৫ হাজার), তালডাংরা (৮ হাজার) ও হাড়োয়ায় ১ লক্ষ ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে তৃণমূল।
উপনির্বাচনের ফলাফল তৃণমূলের জন্য একটি পরীক্ষা হবে, যারা সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের ৪২ টি লোকসভা আসনের মধ্যে ২৯ টি আসন জিতে শক্তিশালী ফল করেছে। ভোট গণনাতেই বোঝা যাবে তৃণমূল তাদের শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে নাকি আরজি করের ঘটনায় উজ্জীবিত বিরোধীরা ভোটারদের সমর্থন আদায় করে চাপের মধ্যে রাখতে পেরেছে তৃণমূলকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct