২০১৯ সাল, লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় গেলেন নরেন্দ্র মোদি বিপুল জয় লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাতারাতি ২ জন সাংসদ বেড়ে হয়ে গেল ১৮ জন। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা ব্যানার্জি থাকা সত্ত্বেও শুরু হয়ে গেল শ্বাসকষ্ট। একশ্রেণীর নেতারা ঘর থেকে বের হতে পারল না মানুষের ক্ষোভের জন্য আরেক দল নেতা সুযোগ বুঝে ঠিক করল যে তারা অন্য দলের সাথে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ মজবুত করবে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রথম আগমন ঘটে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবে প্রশান্ত কিশোরের। তার জনসংযোগ কর্মসূচি গুলি প্রভূত সাড়া ফেলে এবং এই সময়েই প্রশাসনে ঠিক ২০২১ এর নির্বাচনের আগে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন “লক্ষ্মীর ভান্ডার” প্রকল্প। লিখেছেন তন্ময় সিংহ।
২০১৯ সাল, লোকসভা নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের জন্য ক্ষমতায় গেলেন নরেন্দ্র মোদি বিপুল জয় লাভ করে। পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাতারাতি ২ জন সাংসদ বেড়ে হয়ে গেল ১৮ জন। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের মমতা ব্যানার্জি থাকা সত্ত্বেও শুরু হয়ে গেল শ্বাসকষ্ট। একশ্রেণীর নেতারা ঘর থেকে বের হতে পারল না মানুষের ক্ষোভের জন্য আরেক দল নেতা সুযোগ বুঝে ঠিক করল যে তারা অন্য দলের সাথে গিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ মজবুত করবে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে প্রথম আগমন ঘটে নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসাবে প্রশান্ত কিশোরের। তার জনসংযোগ কর্মসূচি গুলি প্রভূত সাড়া ফেলে এবং এই সময়েই প্রশাসনে ঠিক ২০২১ এর নির্বাচনের আগে মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করেন “লক্ষ্মীর ভান্ডার” প্রকল্প। সরাসরি বাংলার সমস্ত মা-বোনেদের হাতে ৫০০-১০০০ টাকা পৌঁছে দেওয়া. প্রকল্পটি জার ই মস্তিষ্কপ্রসূত হোক না হোক না কেন, ক্ষমতার স্বপ্ন দেখতে থাকা বিজেপি বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি এবং ক্ষমতার চিতো বামপন্থীরা বিষয়টিকে ভিক্ষা হিসেবেই ধরে নিয়েছিল। ফলাফল ঐতিহাসিকভাবে তৃণমূলের জয় ২০২১ এর নির্বাচনে তারপর ২০২৪ এর লোকসভা পর্যন্ত বারংবার এই প্রকল্পটি পশ্চিমবঙ্গে সফলভাবে রূপায়িত হয়েছে। হরিয়াানা তে হারা বাজি জিতে আসার পর ঝাড়খন্ড আর মহারাষ্ট্রেও এর উপরে বাজি করে ক্ষমতায় ফেরার স্বপ্ন দেখছে শাসক।
বিজেপির সাথে মমতা ব্যানার্জির রাজনীতির ফারাক যাই থাকুক না কেন, লক্ষ্মীর ভান্ডার জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ মাস্টার দেশের প্রধান দল প্রায় হারতে বসা মধ্যপ্রদেশের শিবরাজ সিংহ চৌহানের হাত দিয়ে “লাডলি বহেনা” নাম দিয়ে দিদির লক্ষ্মীর ভান্ডার মধ্যপ্রদেশে চালু করে সুফল তোলেন তারা। মুখ্যমন্ত্রীর শিবরাজ সিং চৌহান না ফিরতে পারলেও লক্ষ্মী লাভ হয় মধ্যপ্রদেশের মেয়েদের। একই পথে হেঁটে হরিয়ানাতেও সমস্ত সমীক্ষায় পিছিয়ে পড়ার পরেও লক্ষ্মীর ভান্ডারের স্থানীয় সংস্করণ “হর ঘর হর গৃহিণী” চালু করে ক্ষমতায় ফিরেছে নয়াব সিং সাহানি। এর সুফল পেয়েছে হরিয়ানাতে বিজেপি সরকার বিপুল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সত্ত্বেও পুনঃ নির্বাচিত হয়ে।
একই পথের পথিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে এই প্রকল্প প্রয়োগ করতে চেয়েছে তামিলনাড়ুতে ও অন্ধপ্রদেশে। ২০২৪ এর নির্বাচনে সুভদ্রা যোজনা হাত ধরে বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে ওড়িশাতে। কংগ্রেস থেকে বিজেপি তে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এবং বর্তমান হিন্দুত্বের পোস্টার বয় হিমন্ত বিশ্ব শর্মা ও আসামে ঘোষণা করেছে অরুনোদয় স্কিম মেয়েদের জন্য। হিমাচল প্রদেশে কংগ্রেস সরকার ঘোষণা করেছে মহিলাদের জন্য প্রত্যেক মাসে মাসিক সম্মান পেয়ারি বহেনা, আবার কর্নাটকে গৃহলক্ষ্মীর হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছে কংগ্রেস। তেলেঙ্গানা তেও সাথে সাথে কোন শর্ত ছাড়াই মহিলাদের একাউন্টে টাকা পাঠানোর এই স্কিমটি জনপ্রিয় হয়েছে। এছাড়াও রাজস্থানে লাখপতি যোজনা এবং উড়িষ্যার সুভদ্রা যোজনা স্বল্প সঞ্চয় মেয়েদের লোন দেওয়ার প্রকল্প। আসন্ন দিল্লি নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানুয়ারির থেকেই চালু করেছেন এই প্রকল্প আবার উত্তরপ্রদেশে যোগীর ঝুলির থেকেও এই প্রকল্প বেরোবে বলেও খবর।
এই প্রকল্প সফলতার আলো দেখতে পারবে কিনা ঝাড়খন্ড ও মহারাষ্ট্রে তার জন্য আমাদের আর অপেক্ষা করতে হবে কিছু ঘন্টা। কেন্দ্রে প্রবল ক্ষমতা সম্পন্ন বিজেপি সরকারের সক্রিয় উপস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই তথা মহারাষ্ট্রের ক্ষমতার অলিন্দে যখন বালাসাহেব ঠাকরের দল ভেঙ্গে দু’ভাগ হয়ে গেল এবং শারদ পাওয়ারের দল দু’ভাগ হয়ে গেল , পেছনের দরজা দিয়ে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের হাত থেকে বিধায়কদের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের হাতে চলে গেল, এবং দেশের নির্বাচন কমিশন এবং আইন রক্ষক সংস্থাগুলি অনেকটাই চুপচাপ তাদের ভূমিকা পালন করল। তখন থেকে মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে স্লোগান ছিল সহানুভূতির। সেই সহানুভূতির উপর ভর করে ২০২৪ এর নির্বাচনে সারা রাজ্যে ভালো ফল করেছে উদ্ধব ঠাকরে, শারদ পাওয়ার ও কংগ্রেস। সেই সহানুভূতিতেই দাঁড়িয়ে ২০২৪ এর বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করতে চাই এই জোট। মরিয়া চেষ্টা হিসেবে একনাথ সিন্ধে, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ ও অজিত পাওয়ারেরা ভরসা করেছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মাস্টার্স স্ট্রোক লক্ষ্মীর ভান্ডারের স্থানীয় সংস্করণ লাডলি বহেনার উপর। আজ পর্যন্ত যে রাজ্যেই এই প্রকল্পটি সফল রূপায়ণ হয়েছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মহিলা ভোট পেয়েছে রুপায়নকারী দল। ঝাড়খন্ডে হেমন্ত সরেন জেল থেকে বেরোনোর পর, স্টপগ্যাপ মুখ্যমন্ত্রী চম্পাই সরেন বিজেপির জালে ধরা পড়ার পর ভরসা করেছেন তার দিদির এই স্কীমটির উপরেই। আপাতত এক্সিট পোলের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তাতে দেখা যাচ্ছে দু পক্ষই ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা ধরে রাখতে পারছে প্রবল প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সত্ত্বেও।
এই একই পথে হেঁটে বাজি লাগিয়েছেন হেমন্ত সরেন ও একনাথ সিন্ধে। মানুষের সেন্টিমেন্ট এবং প্রতিষ্ঠান বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজ্যের মহিলাদের একাউন্টে সরাসরি টাকা ট্রান্সফার করে নির্বাচনী বইতরনি পার করতে সক্ষম হয় কিনা বলবে সময়। তবে মহিলাদের সরাসরি টাকা দেওয়ার এই স্কিম আমাদের ভারতীয় সমাজের দৈন্য দশা কে চিহ্নিত করে। সামান্য মাসিক নির্ভরযোগ্য আয়ের সুযোগ যে আমাদের দেশের মহিলারা পাচ্ছেন না এই স্কীম গুলির উপর তাদের ভরসার সেটাই প্রমাণ করে। এখন দেখার বিভিন্ন কেন্দ্র ও রাজ্যের সরকার, আগামী দিনে সমাজের প্রত্যেকের সশক্তিকরনের উপরে বেশি ভরসা করে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী উপর করার প্রয়াস করে না সরাসরি এইভাবে বেনিফিট ট্রান্সফার করে জনপ্রিয় রাজনীতি করে ভোটব্যাঙ্ক নিশ্চিত করে, এটাই লক্ষ্মীদের ভবিষ্যতে র জন্য লাখ টাকার প্রশ্ন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct