এম মেহেদী সানি, অশোকনগর, আপনজন: দল-মত নির্বিশেষে সাধারণ মানুষের সমস্যা জানতে বিধায়ক আসবেন, মাইকিং করে প্রচার করা হয়েছিল অশোকনগর পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় । সেইমতো অশোকনগর রেল স্টেশন সংলগ্ন নবভারতী শিক্ষা নিকেতন প্রাঙ্গণে সাধারণ মানুষের জমায়েত লক্ষ্য করা যায় বিকাল থেকেই । সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে উপস্থিত হন অশোকনগরের বিধায়ক তথা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী । বিধায়ককে হাতের নাগালে পেয়ে রাস্তা, পানীয় জল, ড্রেন, বার্ধক্য ভাতা, বাড়ির সমস্যা সহ ব্যক্তিগত সমস্যাও জানানো শুরু করেন ওয়ার্ডের বাসিন্দারা । খোলা আকাশের নিচে সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন বিধায়ক । সমস্যা জেনে তাৎক্ষণিকভাবে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও ফোনালাপ এর মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করেন নারায়ণ গোস্বামী ।
তবে এ দিন নারায়ণ গোস্বামীর মানবিক উদ্যোগে এলাকারই এক অসহায় অসুস্থ ব্যক্তির চিকিৎসার দায়ভার নিজের কাঁধে নিয়ে নিজের গাড়িতে করে হাবড়া হাসপাতালে পাঠানোয় প্রশংসিত হচ্ছেন তিনি । ওয়ার্ডে বিধায়ক কর্মসূচি চলাকালীন বুধবার অশোকনগর পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের লেক পার্কেট বছর সত্তরের কানাই লাল বিশ্বাস টলোমলো শরীর নিয়ে বিধায়কের কাছে উপস্থিত হন । জানান, গত প্রায় ছয় বছর ধরে বিছানা সজ্জা । গত দু’বছর ধরে পেটের সমস্যা বেড়েছে গলা-বুক জ্বালা করে, খেতে পারেন না, তিন মেয়ে বিবাহিত খোঁজ নেন না কেউই, স্ত্রী বছর চৌষট্টির সবিতা বিশ্বাস পরের বাড়ি ২০০০ টাকা মাসিক বেতনে সংসারের কাজ করেন তাই দিয়ে চলে সংসার, বার্ধক্য ভাতা পান না । সমস্যা জেনে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন বিধায়ক, ফোন করেন হাবরা হাসপাতাল সুপারকে । গুরুত্ব সহকারে বৃদ্ধার সমস্যা খতিয়ে দেখার অনুরোধ জানান তিনি । বৃদ্ধাকে হাত ধরে নিজের গাড়িতে তুলে দেন হাবড়া হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য । বৃদ্ধার গায়ে শীত বস্ত্র না থাকায় নতুন শীতবস্ত্র কেনার জন্য টাকাও দেন তিনি । পরবর্তীতে যেকোনো রকমের চিকিৎসার খরচ এবং আনুষঙ্গিক খরচা নারায়ণ গোস্বামী দেবেন বলেও পরিবারকে আশ্বস্ত করেন । বিধায়কের গাড়িতে উঠতে উঠতে চোখের জল মুছে অসুস্থ বৃদ্ধ বিধায়ককে ‘বাবা’ বলে সম্বোধন করেন । বৃদ্ধের কথায়, ‘বাবার দয়ায় নতুন জীবন পেতে চলেছি ।’ পরে ‘ওয়ার্ডে বিধায়ক’ কর্মসূচি থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ খোকা পোদ্দারেরও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন বিধায়ক ।
দুয়ারে সরকারের অনুপ্রেরণা থেকে প্রশাসনিক প্রধানরা সাধারণ জনগণের কাছে পৌঁছে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছে । একুশে জুলাই এর প্রস্তুতি সভায় অশোকনগর শহীদ সদন প্রেক্ষাগৃহে ‘ওয়ার্ডে কর্মসূচি’ করার কথা ঘোষণা করেন বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী । অবশেষে বুধবার সেই কর্মসূচি সূচনা হলো । প্রথম দিন অশোকনগর পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডে ওই কর্মসূচিতে প্রায় শতখানিক মানুষ বিধায়কের কাছে সমস্যার কথা জানান । এ প্রসঙ্গে নারায়ণ গোস্বামী বলেন, ‘পর্যায়ক্রমিকভাবে অশোকনগর পৌরসভার ২৩ টি ওয়ার্ডেই এই কর্মসূচি হবে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির অনুপ্রেরণায় ‘ওয়ার্ডে বিধায়ক’ কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে । সাধারণ মানুষ বিভিন্ন সামাজিক, ব্যক্তিগত সমস্যা জানিয়েছেন । সমস্যা সমাধানের যথাযথ চেষ্টা করা হবে, সমস্যা কতটা সমাধান করা গেল সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে পত্র দিয়ে জানানো হবে ।’ তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক সংকীর্ণতা আমার নেই, আমি সবার বিধায়ক, আবার এটাও ঠিক আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শ নিয়ে চলি ।’ এদিনের কর্মসূচিতে রাজনৈতিক দল মত নির্বিশেষে সকলেই তাদের সমস্যার কথা জানান, স্থানীয় কাউন্সিলর বা এলাকার তৃণমূল নেতৃত্বদের বিরুদ্ধেও যদি কোনো অভিযোগ থাকে সেকথাও জানানোর অনুরোধ করে নারায়ণ গোস্বামী । স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বরা ওয়ার্ডে বিধায়ক কর্মসূচির আয়োজন করলেও তাদের উপস্থিত থাকা নিষেধ ছিল । কর্মসূচিতে ছিল না কোনো দলীয় পতাকা । সব মিলিয়ে বিধায়কের ব্যতিক্রমী উদ্যোগে এদিনের কর্মসূচিথেকে উপকৃত হলেন অশোকনগর পৌরসভার কুড়ি নম্বর ওয়ার্ডের বহু মানুষ ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct