কাওসার আলম ব্যাপারী: মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গার অপ্রীতিকর ঘটনা রাজ্যবাসীকে শংকিত করেছে। মুসলিমরা অন্তঃকরণ থেকে বিশ্বাস করে মহান আল্লাহ একমাত্র স্রষ্টা। তারা একমাত্র তারই এবাদত করে। সেই মহান স্রষ্টার প্রতি অপমানজনক ভাষা প্রয়োগ কোনো সৎ বিবেকবান মানুষ সহ্য করতে পারবেনা। যারা এ কাজটি সংঘটিত করেছে এবং যারা করতে সাহায্য করেছে তারাই মহা অপরাধী। এর জন্য অভিযোগের তীর ভারতবর্ষের একটি স্বঘোষিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তির প্রতি। যদিও বিষয়টি এখনো তদন্ত সাপেক্ষ। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, যেখানে সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তির রাজনৈতিক ক্ষমতা খুবই কম সেখানে কি ‘নির্দিষ্ট শক্তিশালী শক্তির’ সহযোগিতা না পেয়ে এরকম কাজ ওরা করতে সাহস পাবে? হয়তোবা রাজনৈতিক নয়তোবা প্রশাসনিক ‘অভয়’ কোনো না কোনোভাবে পেয়ে এরকমটা করার দুঃসাহস পেয়ে যায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট, বিভিন্ন সরকারি ঘোষণা, বিভিন্ন সুবিধায় কারো জন্য ৫০০ কারো আবার জন্য ১০০০ বা কারো জন্য নিজস্ব ওয়াকফ সম্পত্তি থেকে ভাতা প্রদান, কারো জন্য সরকারি কোষাগার থেকে। কখনো বা কোটি কোটি টাকা নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষদের ধর্ম পালনের জন্য দেওয়া হয়, কারো জন্য বছরে দুটি বড় বড় ধর্মীয় উৎসবে একদিনের ছুটি কোনমতেই ভিক্ষে দেওয়া হয়। সাম্প্রদায়িক বিষবাত বিভিন্ন কাজে পরিষ্কার।
এরপরেও কিছু স্বঘোষিত ধর্মীয় ঠিকাদার যারা নিজেদের নিজস্ব ধর্মের রাহাবার হিসেবে পরিচয় দেয় তারা উত্তর প্রদেশ,গুজরাট, উত্তরাখন্ড, আসাম, মণিপুর, ত্রিপুরায় নেক্কারজনক হিংস্রতার বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ আওয়াজ তোলেন কিন্তু এই বাংলায় একই রকম ঘটনা ঘটলে ভিজে বিড়াল হয়ে কম্বলের ভেতরে লুকিয়ে পড়েন। এখানে দরবারী গন্ধে পকেট হয়তোবা ফুলে ওঠে তাই। ‘সংখ্যালঘুদের’ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থাকে অপকৌশলী নিজস্ব রাজনৈতিক আঙ্গিনায় পরিণত করা হচ্ছে। প্রতিষ্ঠিত পরিচিত স্বঘোষিত সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মিটিং মিছিল করার সুযোগ পাচ্ছে বহাল তবিয়তে কিন্তু ‘সংখ্যালঘুদের’ পক্ষে কথা বলা রাজনৈতিক দলগুলোকে তাদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানে বাঁধা সৃষ্টি করছেন সেই স্বঘোষিত রাহাবারেরা।
‘সংখ্যালঘুদের’ জনপ্রতিনিধি হতে দেয়া হচ্ছে না এই বলে, তারা ভোটে দাঁড়ালে নাকি সাম্প্রদায়িক অপশক্তি এই বাংলায় এসে যাবে। তারা তো ক্ষমতায় আসেনি, তাহলে কেন সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ বারবার নষ্ট হচ্ছে? কেন সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ নষ্ট করার মূল কারিগরদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না? চরম সাম্প্রদায়িক হিংস্রতা দেখানো সেই ব্যক্তি গুলোকে কেন বড় বড় জায়গায় ‘এই’ শাসন আমলে জায়গা হচ্ছে এই রাজ্যে? সাম্প্রদায়িক জামা গায়ে দিয়ে বড় বড় সাম্প্রদায়িক এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করে জামা বদলিয়ে বড় নেতা বনে যাচ্ছে কেন? আর সংখ্যালঘুদের বেলায় বলা হয়, “আপনারা বড় নেতা হলে ওরা ভোট দেবে না”! আর এই বলে গলির সভাপতি সেক্রেটারি বানিয়ে রাখছেন। গলির সভাপতিরা এতটুকু পেয়ে নিজের পক্ষে কথা বলার লোকগুলোকে টুঁটি চেপে ধরছে।
ভোটের সময় চরম বিরোধিতা করে হারানোর সব রকম চেষ্টা করা ব্যক্তির বাড়িতে রাজ্যের শাসকের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী চা খেয়ে আসে উচ্চ মানের উপহার সহ, আর ‘সংখ্যালঘুর রাহবারদের’ বাড়িতে সামান্য একটি জেলা সভাপতির কিছু ফলমূল গেলে আপ্লুত ! আসলে বিরোধিতা বিরোধিতা খেলা খেলে ‘সংখ্যালঘুদের’ ভোট যন্ত্রে পরিণত করা হচ্ছে। ভোট আসলে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির ভয় দেখিয়ে ভোট বৈতরণী পার হওয়ার একটি সহজ কৌশল। সংখ্যালঘুদের বোকামি চরম থেকে চরম আকারে পৌঁছে গেছে। কোনটা তুলে ধরব কোনটা বাদ দেবো সেটাই কঠিন। যে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি নিজেদেরকে ঘোষণা দিয়ে জাহির করে, সেই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে ‘সংখ্যালঘুরা’ আর্থিক সহযোগিতা দেয় বিভিন্ন ভাবে। সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘সংখ্যালঘুরা’ নিজেদের বাচ্চাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে কথিত ‘আদর্শ’ মানুষ গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেখানে স্পষ্টতই সাম্প্রদায়িক বিভেদ মূলক শিক্ষার বাতাবরণ রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানের টাকা দিয়ে সংখ্যালঘুদের ধ্বংসের জাল বোনা হচ্ছে তারপরেও নিজস্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবহেলা করে ওখানে মানুষ গড়ার নামে অমানুষ গড়ে তুলার খপ্পরে ‘সংখ্যালঘুদের’ কথিত জ্ঞানীদের বিরাট অংশ।
সাম্প্রদায়িক অপশক্তিরা বারংবার সাম্প্রদায়িক বাতাবরণ নষ্ট করবে আর ‘সংখ্যালঘুদের’ বার বার সম্প্রীতির বাতাবরণ তৈরির চেষ্টায় নিয়োজিত থাকতে হবে। ওরা হুমকি দেবে, খুন করবে, গুম করবে , এবং নির্দিষ্ট সময়ে এসে জামা বদলে নেতা হয়ে ভোটে জিতে মন্ত্রিত্ব পাবে ! এ কেমন পলিটিক্স? নির্দিষ্টরা ভোট দিয়ে মসনদ টিকিয়ে রাখবে, ক্ষমতায় বসে শাসক নির্দিষ্টদের ভুলে যাবে এ কেমন সমতা? ঘটে যাওয়া ও চলমান বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ গুলো দেখলে মনে হয়, সম্প্রীতির বাতাবরণ ঠিক রাখার দায়িত্বটা যেন ‘সংখ্যালঘুদের’ উপরেই বর্তায়। সব দোষ যেন ঐ ‘সংখ্যালঘু’ হওয়াটাই!
*** মতামত লেখকের নিজস্ব
লেখক: পশ্চিমবঙ্গ নস্যশেখ উন্নয়ন পরিষদের কোচবিহার জেলা সভাপতি , নিরপেক্ষ প্রতিবাদী মঞ্চ তথা নিপ্রমের প্রতিষ্ঠাতা ও পরামর্শ পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি, ফাঁসিরঘাট সেতু আন্দোলন কমিটির সভাপতি
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct