আপনজন ডেস্ক: আদিবাসীদের উন্নয়ন ও তাদের বিভিন্ন সমস্যা্ খতিয়ে দেখতে সোমবার নবান্নে বিশেষ বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আদিবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা খতিয়ে দেখতে সোমবার পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চার মন্ত্রীকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেছেন।
প্রশাসন আদিবাসীদের কাছ থেকে বিভিন্ন অভিযোগ পেয়েছে যে তারা জাতিগত শংসাপত্র পেতে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে, যখন তাদের জমি অসাধু লোকেরা দখল করে নিয়েছে।
রাজ্য আদিবাসী উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিটি গঠন করেছেন। এই প্যানেলে রয়েছেন অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ ও উপজাতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বুলু চিক বারাইক, পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন পরিষদের প্রতিমন্ত্রী এবং স্বাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী সন্ধ্যা রানী টুডু, খাদ্য ও সরবরাহ প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি এবং বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।
এই কমিটি আদিবাসীদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সমস্যা, অভাব অভিযোগের কথা শুনবে।
সূত্রের খবর, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীদের আদিবাসীদের বাসভবন পরিদর্শন এবং রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও উন্নত করার নির্দেশ দিয়েছেন। কমিটির সদস্যদের আদিবাসীদের জমি জোর করে জবরদখলের বিষয়টির দিকেও নজর রাখতে বলা হয়েছিল এবং কেউ যাতে এটি করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছিল। আদিবাসীদের উন্নয়ন যাতে কোনও কারণে বাধাগ্রস্ত না হয়, তা খতিয়ে দেখারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পর্যটন বিকাশের ক্ষেত্রে জঙ্গলমহল ও সুন্দরবন এলাকা হোম স্টে তৈরিতে গুরুত্ব দিচ্ছে রাজ্য। তাই বৈঠকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে হোমস্টে স্থাপন করার বিষয়ে বিশেষ নির্দেশ দিয়েছেন।
আলোচনায় উঠে আসে, সেখানে আদিবাসী অধ্যূষিত গ্রামগুলিতে বাইরে থেকে লোকেরা এসে হোম স্টে তৈরি করছেন। তাতে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষের তেমন কোনও লাভ হচ্ছে না। তাই যেসমস্ত আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ হোম স্টে তৈরি করতে ইচ্ছুক, তাদের সরকারি অনুদান দিয়ে সাহায্য করার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে। পর্যটনের পাশাপাশি আদিবাসীদের জনজীবনে তাদের খাদ্যাভ্যাস ও নিজস্ব আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য তা যাতে আদিবাসী সমাজে বিশেষ ছাপ ফেলতে পারে তার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। জানা গেছে, রাজ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায় ৪০টি জনগোষ্ঠী আছে। তাদের সবাইয়ের কথা মাথায় রেখে উন্নয়ন পরিকল্পনা করবে রাজ্য সরকার। যদিও ইতিমধ্যে আদিবাসী সম্প্রদায়ের উন্নতিকল্পে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। নবান্নে সূত্রে খবর মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে জানিয়েছেন, এর আগে আদিবাষী উন্নয়ন যে যে বৈঠক হয়েছিল তাতে রাজ্যের আদিবাসী উন্নয়ন উপদেষ্টা কমিটির তরফে যে সমস্ত দাবির কথা জানানো হয়েছিল, তার প্রায় সিংহভাগই রাজ্য সরকারের তরফে পূরণ করা হয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রী এদিনের বৈঠকে রাজ্য সরকারের প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনার কথা তুলে ধরেন। বিশেষ করে রাজ্যে যে আদিবাসীদের উন্নয়নের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার টাকা দিচ্ছে না সে কখা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রের আর্থিক সাহায্য না পেলেও রাজ্যের আদিবাসীদের সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারের দরজা সব সময় খোলা রয়েছে। বিভিন্ন আদিবাসী মানুষের কাছে আরও বেশি করে পৌঁছনোর লক্ষ্যে আদিবাসী এলাকাগুলিতে তৃণমূল বিধায়কদের আরও সক্রিয় করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় শাসক দল সেভাবে ভোট পায়নি। আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভার আগে তাই আদিবাসীদের মন পেতে মমতা বিশেষ উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।
উল্লেখ্য, রাজ্যের আদিবাসী সম্প্রদায়ের সার্বিক উন্নয়ন নিয়ে এদিনের বৈঠকে রাজ্য সরকারের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল বিজেপির আদিবাসী সাংসদ খগেন মুর্ম ও বিজেপি নেতা দশরথ মুর্মুকে। তারা অবশ্য বৈঠকে অংশ নেননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct