এম এস ইসলাম , বর্ধমান, আপনজন: বটুকেশ্বর দত্ত ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯১০ সালের ১৮ই নভেম্বর ব্রিটিশ ভারতের অবিভক্ত বর্ধমান জেলার খণ্ডঘোষ থানার ওঁয়ারি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৫ সালের ২০শে জুলাই শহীদ-এ-আজম বন্ধু ভগৎ সিং-এর মায়ের কোলে মাথা রেখে তিনি মৃত্যুবরণ করেন দিল্লির এক হসপিটালে। তিনি ভগৎ সিংয়ের সঙ্গে ১৯২৯ সালের ৮ই এপ্রিল দিল্লির কেন্দ্রীয় সংসদ ভবনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তাদের লক্ষ্য ছিল কারো ক্ষতি করা নয়, বরং ইংরেজ সরকারকে ‘বধিরকে শোনাতে উচ্চকণ্ঠ’ বার্তা পৌঁছানো। গ্রেপ্তার হওয়ার পর বটুকেশ্বর দত্ত জেলে অত্যন্ত কঠোর পরিস্থিতিতে জীবনযাপন করেন এবং রাজবন্দীদের অধিকারের জন্য ১১০ দিনের দীর্ঘ অনশন করেন।
ভগৎ সিং-এর সঙ্গী হিসেবে বটুকেশ্বর দত্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। পার্লামেন্টে বোমা ফেলা ও সান্ডারসন হত্যা মামলায় ভগৎ সিং-এর ফাঁসি হয়ে যায়, এবং বটুকেশ্বর দত্তকে আন্দামানের সেলুলার জেলে বন্দি করা হয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও তিনি দীর্ঘদিন মুক্তি পাননি। ইংরেজ সরকারের সঙ্গে ভারতীয় রাজনীতিকদের চুক্তি অনুযায়ী তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
স্বাধীন ভারতের এই বিপ্লবীর শেষ জীবন ছিল বেদনাদায়ক। টিবি রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি গভীর দারিদ্র্যে দিন কাটান। স্বাধীন ভারতে তেমন কোনো সম্মান বা সাহায্য না পেয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য পরিবহণ ব্যবসা শুরু করলেও অভাব-অনটনের সঙ্গে জীবন সংগ্রাম করতে হয়। তার শেষকৃত্য ভগৎ সিং-এর সমাধির পাশে পাঞ্জাবের ফিরোজপুরে সম্পন্ন হয়। মৃত্যুর পর ভারত সরকার তাকে রাজকীয় সম্মাননা জানায়। দিল্লি থেকে হেলিকপ্টারে তার গ্রামের বাড়ির মাটি নিয়ে গিয়ে পাঞ্জাবে ভগৎ সিং এর সমাধির পাশে পৌঁছানো হয়। ভারত সরকার প্রথমবারের মতো তিন দিন জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে রাখে ।
বর্তমানে বীর বিপ্লবী বটুকেশ্বর দত্তের স্মৃতি সংরক্ষণের লক্ষ্যে একটি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটি তৈরি হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার প্রায় এক কোটি টাকা খরচ করে একটি মিউজিয়াম নির্মাণ করেছে। ১৮ নভেম্বর তার জন্মদিন উপলক্ষে খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে বিপ্লবীর জন্মস্থান সাজিয়ে তোলা হয়েছে। বটুকেশ্বর দত্ত স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে মধুসূদন চন্দ্র জানান, এই বিশেষ দিনটি স্মরণীয় করে রাখতে পূর্ব বর্ধমানের জেলা শাসক আয়েশা রাণী সহ অন্যান্য সরকারি আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন। বটুকেশ্বর দত্তের কন্যা ভারতী দত্ত পাটনায় বসবাস করছেন এবং তিনি স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। খণ্ডঘোষের ওঁয়ারি গ্রামে এক সময় ভগৎ সিং ও বটুকেশ্বর দত্ত আত্মগোপন করেছিলেন। সেই স্থানটি সংরক্ষণ করে সেখানে একটি ডেমো বিল্ডিং নির্মাণ করা হয়েছে। এই এলাকায় সাজ সাজ রব উঠেছে তার জন্মদিন উপলক্ষে।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct