আপনজন ডেস্ক: আফগানিস্তানে তালেবান কর্তৃপক্ষ খুনের দায়ে দোষী সাব্যস্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে গারদেশ শহরের একটি স্টেডিয়ামে বুধবার গুলি করে মৃত্যুদণ্ডটি কার্যকর করা হয়। তালেবানদের ফের ক্ষমতায় ফেরার পর এটি ষষ্ঠ প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড। এএফপির প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এএফপির এক সাংবাদিক জানান, পাক্তিয়া প্রদেশের রাজধানী গারদেশে হাজারো দর্শকের সামনে ভুক্তভোগী পরিবারের একজন সদস্য সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির বুকে তিনটি গুলি করেন। মৃত্যুদণ্ডের আগের সন্ধ্যায় গভর্নরের অফিস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘এই ঘটনায় উপস্থিত থাকতে’ কর্মকর্তাদের ও সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানায়। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর আফগানিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘এক খুনিকে প্রতিশোধমূলক শাস্তি প্রদান করা হয়েছে।’ বিবৃতিতে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ আয়াজ আসাদ উল্লেখ করা হয়েছে।তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার অনুমোদনে এ মৃত্যুদণ্ডের আদেশ জারি করা হয় বলে আদালত জানিয়েছেন। বিবৃতিতে আরো জানানো হয়, তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দণ্ডিত ব্যক্তি আটক ছিলেন। তিনি হাবিবুল্লাহ সাইফ-উল-কাতাল নামের এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। মামলাটি তিনটি সামরিক আদালতে অত্যন্ত সঠিকভাবে ও একাধিকবার পর্যালোচনা করা হয়েছে। ভুক্তভোগী পরিবারকে মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, তবে তারা তা প্রত্যাখ্যান করে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সময় উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাসহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সিরাজুদ্দিন হাক্কানি উপস্থিত ছিলেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তালেবান শাসনকালে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড ছিল সাধারণ ঘটনা। তবে এএফপির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান ফের ক্ষমতায় আসার পর থেকে প্রকাশ্য মাত্র কয়েকটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০২২ সালে আখুন্দজাদা তালেবান সরকারের ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী বিচারকদের শাস্তি প্রদানের নির্দেশ দেন।এতে ‘চোখের বদলে চোখ’ নামে পরিচিত প্রতিশোধমূলক শাস্তি ‘কিসাস’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা হত্যার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান দেয়।এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি প্রকাশ্য মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পূর্বাঞ্চলীয় গজনি শহরে দুই ব্যক্তিকে পিঠে একাধিক গুলি করা হয় এবং এর কয়েক দিন পর উত্তরাঞ্চলীয় জওজান প্রদেশে অনুরূপ একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তালেবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে চুরির অপরাধ, ব্যভিচার ও মদ্যপানের ক্ষেত্রে মূলত দণ্ড হিসেবে বেত্রাঘাত প্রয়োগ করা হয়ে থাকে।জাতিসংঘ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন তালেবান সরকারের শারীরিক শাস্তি ও মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। অ্যামনেস্টির তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে মৃত্যুদণ্ডের প্রচলনে সবচেয়ে এগিয়ে ছিল চীন, ইরান, সৌদি আরব, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্র।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct