আপনজন ডেস্ক: আজ বুধবার পশ্চিমবঙ্গের ছয়টি বিধানসভা আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী ২৩ নভেম্বর ফলাফল ঘোষণা করা হবে। আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ ও খুন এবং বাংলার আবাস যোজনার আওতায় পাকা বাড়ি তৈরির জন্য সরকারের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তার সুবিধাভোগী নির্ধারণ করা নিয়ে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ নিয়ে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস যখন তীব্র বিক্ষোভের মুখোমুখি হচ্ছে তখন বিজেপি সহ বিরোধী দলগুলি কতটা উপনির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে সেই অপেক্ষায় রয়েছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যের যে ছটি বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সেগুলি হল: সিতাই, মাদারিহাট, নৈহাটি, হাড়োয়া, মেদিনীপুর ও তালডাংরা।
২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বর্তমান বিধায়করা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হওয়ার পরে ছয়টি আসনেই উপনির্বাচনের প্রয়োজন হয়েছিল। ২০২১ সালে বিজেপির মনোজ টিগ্গা মাদারিহাট বিধানসভায় জয়ী হয়েছিলেন। আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন তিনি। সিতাই কেন্দ্রের বিধায়ক জগদীশ চন্দ্র বর্মা বসুনিয়া সাংসদ হন। রাজ্যের প্রাক্তন পরিবহণ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে জয়ী হন। বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হাড়োয়ার তৃণমূল বিধায়ক হাজি শেখ নুরুল ইসলাম। গত সেপ্টেম্বর মাসে তিনি প্রয়াত হন। বিধায়ক জুন মালিয়া মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হন। বাঁকুড়া থেকে জয়ী হয়েছেন তালডাংরার তৃণমূল বিধায়ক অরূপ চক্রবর্তী। কিন্তু এই উপনির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে তখন চর্চিত বিষয়গুলির মধ্যে রয়েছে আরজি কর হাসপাতালে ইন্টার্ন খুন প্রসঙ্গ, আবাস যোজনা বাড়ি বরাদ্দ ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ এবং কলকাতা হাইকোর্ট কর্তৃক তৃণমুল সরকারের আমলে স্বীকৃতি পাওয়া ওবিসি তালিকা বাতিল।
তবে, রাজ্যের যে ছটি বিধানসভা কেন্দ্রে আজ উপনির্বাচনে অনুষ্ঠিত হবে তার মধ্যে অন্যতম নজরকাড়া হল হাড়োয়া। বসিরহাটে নারী নিপীড়ন নিয়ে বিজেপি যেভাবে হইচই করে চলেছে তাতে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের হাড়োয়া বিধানসভা নির্বাচনে তার আদৌ প্রভাব পড়বে কিনা সেটা নিয়েই যত জল্পনা। যদিও বিগত লোকসভা নির্বাচনে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূলের শক্তি অটুট ছিল। আর যে বিজেপিকে নিয়ে এত আলোচনা সেই বিজেপি বিধানসভা নির্বাচনে তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছিল। গত বিধানসভা নির্বাচনে প্রয়াত হাজি নুরুল ইসলাম ৫৭.৩৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন। দ্বিতীয় স্থানে থাকা আইএসএফ প্রার্থী কুতুবুদ্দিন ফতেহ পেয়েছিলেন ২১. ৭৪ শতাংশ, আর বিজেপির রাজেন্দ্র সাহা পেয়েছিলেন ১৬.৯৪ শতাংশ। উল্লেখ্য, হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটারদের ৬৫.৭ শতাংশ। অবশ্য তফশিলি জাতির ভোটারদের হার ১৫.৬ শতাংশ। তার উপরই ভর করে চলতে চায় বিজেপি। তবুও আশায় দিন গুনছে যদি আইএসএফ মুসলিম ভোটে থাবা বসিয়ে তাদের ভাগ্য খুলে দেয়। কারণ, উপনির্বাচনে আইএসএফের সঙ্গে সিপিএমের জোট হলেও কংগ্রেসের সঙ্গে জোট হয়নি। কংগ্রেস আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। যদিও এবারের হাড়োয়া উপনির্বাচনে যে ৯জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তারা হলেন, রফিকুল ইসলাম (নির্দল), বিমল দাস (নির্দল), নওশাদ আলি (নির্দল), সেখ আজিমুদ্দিন (নির্দল), হাবিব রেজা চৌধুরি (কংগ্রেস), বিমল দাস (বিজেপি), আবদুল নইম মল্লিক (ওয়েলফেয়ার পার্টি), সেখ রবিউল ইসলাম (তৃণমূল) ও পিয়ারুল ইসলাম (আইএসএফ)। এদের মধ্যে নির্দল প্রার্থী নিরক্ষর। আর বিজেপি প্রার্থী বিমল দাস ক্লাস এইট পাশ। তৃণমূল প্রার্থী প্রযাত হাজি নুরুল পুত্র সেখ রবিউল ইসলাম রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় তেকে এমএ। আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলাম কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ এলএলবি। ডব্লুপিআই প্রার্থী আবদুল নইম মল্লিক মাধ্যমিক, কংগ্রেসের হাবিব রেজা মাধ্যমিক, নির্দল আজিমুদ্দিন এইচএস, নির্দল নওশাদ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ ও নির্দল রফিকুল ইসলাম মাধ্যমিক। অর্থনৈতিক দিক থেকে সবচেয়ে ধনী তৃণমূল প্রার্থী সেখ রবিউল ইসলামের সম্পত্তির পরিমাণ ৮৮ লক্ষ ৪৪ হাজার ২৪১ টাকা। কংগ্রেস প্রার্থী হাবিব রেজা চৌধুরির সম্পত্তি ৬০ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা। আইএসএফ প্রার্থী পিয়ারুল ইসলামের সম্পত্তির পরিমাণ ১১ লক্ষ ৬৭ হাজার ২০৫ টাকা। ডব্লুপিআই প্রার্থী নইম মল্লিকের সম্পদের পরিমাণ ৪ লক্ষ ৫ হাজার টাকা। বিজেপি প্রার্থী বিমল দাসের সম্পত্তি ৯ লক্ষ ৯৯ হাজার ৫৫৫ টাকা। সবচেয়ে গরিব নির্দল প্রার্থী বিমল দাসের সম্পত্তির পরিমাণ মাত্র ৭০ হাজার টাকা। রাজ্যের মধ্যে হাড়োয়া এমন এক কেন্দ্র যেখানে সংখ্যালঘু প্রার্থীরা সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতার দিক থেকে সংখ্যাগুরুদের প্রার্থীদের থেকে এগিয়ে। উল্লেখ্য, ওবিসি বাতিলের পর এই প্রথম কোনও নির্বাচন হচ্ছে রাজ্যে। তাতে কী প্রভাব পড়ে সেটাই দেখার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct