নিজস্ব প্রতিবেদক, খলতপুর, আপনজন: রাসূল সা.-এর আর এক নাম আল আমীন। সেই নামেই হাওড়ার খলতপুরে গড়ে উঠেছে আল-আমীন মিশনের মূল ক্যাম্পাস। সেই খলতপুর ক্যাম্পাসে ৯ ও ১০ নভেম্বর মহানবী সা.-এর জীবনচরিত আলোচনার পাশাপাশি, কেরাত, গজল, আজান, বক্তব্য ও কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সঙ্গে ছিল মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও নিট পরীক্ষায় খলতপুর ক্যাম্পাসের কৃতীদের সংবর্ধনা। কয়েকজন উজ্জ্বল প্রাক্তনীদেরও সম্মাননা জ্ঞাপন করা হয়।
প্রথম দিন মিশনের দুই ছাত্রের কুরআন তেলাওয়াত ও তার তর্জমার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুভারম্ভ ঘটে। আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম। উপস্থিত ছিলেন মিশনের সুপারভাইজার সেখ মারুফ আজম-সহ মিশনের আধিকারিকগণ। প্রারম্ভিক বক্তব্যে এম নুরুল ইসলাম মহানবী সা.-এর জীবনকথা ও আদর্শ অনুশীলনে সাফল্যের পথ সহজ হয় বলে মন্তব্য করেন। ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমাদের জীবনের যে অভিজ্ঞতা, নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে যে শিক্ষা, যে উপলব্ধি অর্জন করেছি তার নির্যাসই আমরা তোমাদের দিতে পারি। উল্লেখ্য, এর পর এম নুরুল ইসলাম মিশনের অন্য শাখায় পুনর্মিলন উৎসবে যোগ দিতে রওনা দেন। সুপারভাইজার সেখ মারুফ আজম তাঁর আলোচনায় ধার্মিকতা ও আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ধার্মিকতা বাদ দিয়ে কেবলই বিজ্ঞানের ওপর ভর করে পূর্নাঙ্গ মানুষ হওয়া যায় না। নিটে সফলদের উদ্দেশ্যে বলেন, মানুষের সেবার জন্য মানুষের পাশে থেকে মানবিক চিকিৎসক হওয়ার সাথে সাথে বড়ো মাপের মানুষও হতে হবে।
সিরাতুন্নাবী সা. বিষয়ে এবছরের একমাত্র আলোচক ছিলেন বিশিষ্ট ইসলামি পণ্ডিত ও আলিয়া মাদ্রাসার ভূতপূর্ব শিক্ষক মাওলানা মনজুর আলম। দ্বিতীয় দিন সকালে গার্লস ক্যাম্পাসের আলোচনায় তিনি মাতৃজাতির গুরুত্ব বিষয়ে বলেন, তাদের সম্মান দেওয়ার প্রশ্নে আমরা ব্যর্থ। এক্ষেত্রে কন্যার প্রতি পিতা হিসেবে নবীর ভালোবাসা আমরা ভুলে গেছি। নবীচরিত বারবার পড়তে হবে আমাদের। নবীচরিত পড়লে আমরা উপলব্ধি করতে পারতাম তিনি কেবলই মুসলমানদের নবী নন, ধর্ম বর্ণ ও জাতি নির্বিশেষে সকল মানুষের নবী। হারাম জিনিষকে বর্জন, প্রতিবেশীর সঙ্গে সদাচার, নিজ ও অপরের জন্যে একই জিনিস পচ্ছন্দ করা, জিহ্বাকে সংযত রাখা ও অট্টহাসি না-করা প্রভৃতি সবকিছুই ঈমানের অংশ। বয়েজ ক্যাম্পাসে তিনি শিক্ষার গুরুত্ব বিষয়ে কোরআন, হাদিসের আলোকে বক্তব্য রাখেন। ইকরা শব্দের অনন্যতা নিয়ে তিনি বলেন মানুষের জীবনের প্রথম ও শেষ কাজ পড়াশোনা করা। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আমেরিকার তৃতীয় রাষ্ট্রপতি টমাস জেফারশন, মহারাষ্ট্রের অষ্টম মুখ্যমন্ত্রী আবদুর রহমান আন্তুলে প্রমুখের উল্লেখ করেন শিক্ষাগ্রহণের মহত্ব বোঝাতে। তিনি জোর দিয়েই বলেন, মহানবী সা. জগৎগুরু অর্থাৎ পৃথিবীর শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। মোটিভেশন্যাল বক্তা আবেদিন হক আদি ছাত্র-ছাত্রীদের অনুপ্রানিত ও উদ্বুদ্ধ করতে পড়াশোনার জন্যে জরুরি পদ্ধতি অনুসরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন।
এছাড়া একঘেয়েমি কাটাতে ও মনঃসংযোগ বাড়ানোর প্রক্রিয়া বিষয়ে তিনি উৎসাহিত করেন। বিকেলের পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন উদয়নারায়ণপুর থানার ওসি সৌমেন গাঙ্গুলি এবং কাজী খলিল উল্লাহ, ট্রেজারি অফিসার, উলুবেড়িয়া। উভয় অতিথিই তাদের বক্তব্যে শিক্ষা প্রসারে আল-আমীনের গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের প্রশংশা করেন। সান্ধ্যকালীন অনুষ্ঠানে মিশনের তিনজন উজ্জ্বল প্রাক্তনী জাহাঙ্গীর মল্লিক ( জেনারেল ম্যনেজার, ডব্লিউবিএমডিএফসি), ডা. বিলকিস খাতুন (উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হসপিটাল) এবং ডা. মুজিবর রহমান (চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, মালদা)-কে সম্মানিত করা হয়। তাঁদের উপস্থিতি ও বক্তব্যে পড়ুয়াদের উৎসাহ বেড়ে হয়ে যায়। প্রথম দিন থেকে বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত অতিথিদের হাত দিয়ে মিশনের কৃতী ছাত্র-ছাত্রীদের সংবর্ধিত করা হয়। জানা গেল, এবছর নিটে সফল মিশনের মোট ১০ জন ছাত্র-ছাত্রী দেশের বিভিন্ন এইমস-এ ভর্তির সুযোগ পেয়েছে যার মধ্যে ৮ জনই খলতপুর ক্যাম্পাসের। মিশনের বয়েজ ও গার্লস ক্যাম্পাসে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রী ছাড়াও অভিভাবক-অভিভাবিকা, মিশনের শিক্ষক-শিক্ষিকা, কর্মচারীদের উপস্থিতি ছিল দেখার মতো। শিক্ষা ও অফিসিয়াল কর্মের বাইরের বিভিন্ন পরিষেবা প্রদানকারী কর্মীদের অনুষ্ঠানে মিশনের তরফে পুরস্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে উপস্থিত ছিলেন মহম্মদ আলমগীর বিশ্বাস, সেখ নুরুল আলম, নাসিমা পারভিন প্রমুখ আধিকারিক ও খলতপুর হাই মাদ্রাসার শিক্ষক সেখ সাবির আলী প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct