রঞ্জন চক্রবর্তী: অমিত শাহ ঝাড়খণ্ডের একটি নির্বাচনী সভায় বলছেন সংখ্যালঘুরা ধর্ম পালন করে তাই সংরক্ষণ পাবে না। প্রত্যেকটি মানুষ কোন না কোন ধর্ম পালন করে। তাহলে যারা ধর্ম পালন করে তারা সংরক্ষণ পাবে না ? এসসি/এসটি/ ওবিসি প্রত্যেকেই ধর্ম পালন করে। মুসলিমরাও তাদের ধর্ম পালন করে। এস সি/ এস টি/ মুসলিম বাদে ওবিসিরা তারা তো হিন্দু ধর্ম পালন করে । আর এটাই প্রচলিত। যদিও আদিবাসীরা অর্থাৎ এসটিরা প্রকৃতির পূজারী। সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবিতে আন্দোলন করছে। তা সত্ত্বেও আদিবাসীরা হিন্দু ধর্মের বিভিন্ন পূজা-পার্বণে শুধু শামিল হচ্ছে না, নিজেরাও সেই সমস্ত পূজা পার্বণ সংগঠিত করছে । যে সমস্ত সংরক্ষিত অংশ হিন্দু ধর্ম পালন করছে তাদের ক্ষেত্রে কোন অসুবিধা নেই। সংরক্ষিত অংশের মধ্যে মুসলিমদের ঢোকালে হিন্দুদের সংখ্যাটা কমে যাবে, অতএব সেখানে মুসলিমদেরকে ঢোকানো যাবে না । এটাও অমিত বাবুর মতামত। মুসলিমদেরকে বাদ দিলেই বাদবাকি যারা থাকবে তাদের জন্য অমিত বাবুরা রাজপ্রাসাদ বানিয়ে দেবেন। কেন্দ্রে ১০ লক্ষ পদ শূন্য রয়েছে, চাকরি দেবার কোন নাম গন্ধ নেই । বছরে ২ কোটি বেকার কে চাকরি দিলে তো এতদিন কেউই বেকার থাকত না।এখন চাকরি বাকরি কিছুই দিতে পারছে না, সমস্ত জিনিসপত্রের দাম পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিসপত্রের দাম যখন আকাশ ছোঁয়া, GST সহ সরকারের ঘরে যখন কোটি কোটি টাকা ঢুকছে তখন বেকাররা হা হুতাশ করে বেড়াচ্ছে। বিদেশি ঋণ প্রায় ২০০ লক্ষ কোটি টাকা । প্রতিবছর ছয় লক্ষ কোটি টাকা ওই ধারের জন্য সুদ দিতে হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা বিজেপি ওয়ালারা তুলছে সেই টাকাগুলো যাচ্ছে কোথায়? ব্যাংক থেকে যে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা অণু উৎপাদক সম্পদে পরিণত হচ্ছে সেগুলোই বা যাচ্ছে কোথায়? আর ঝাড়খন্ডে গিয়ে সেখানকার ক্ষমতাসীন সরকারের দুর্নীতির কথা প্রচার করছে, বিজেপি ওয়ালাদের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি আড়াল করার জন্য এই নির্বাচনী প্রচার। যারা এক এক জনের পার্লামেন্টের প্রার্থীর পিছনে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করতে পারে তারা কোথা থেকে পয়সা গুলো জোগাড় করে, সেগুলো সহজেই আন্দাজ করা যায় এবং বর্তমানে CAG যে রিপোর্টগুলো দিচ্ছে সেখান থেকেও আন্দাজ করা যায়।
যাইহোক প্রশ্নটা হল, ধর্মভিত্তিক সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণ দেওয়ার প্রশ্ন। বিজেপি ওয়ালাদের কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিধান অনুযায়ী ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কেউ তো ধর্ম কর্ম করতে পারবে না। ক্ষত্রিয়রা যুদ্ধ করবে, বৈস্যরা ব্যবসা করবে এবং সম্পদ তৈরি করবে, আর শূদ্ররা গরু মহিষদের মতো পরিশ্রম করবে এবং তারা উচ্চবর্ণ বিশেষ করে ব্রাহ্মণ ক্ষত্রিয়দের পদ সেবা করবে। ধর্ম কখনোই তারা পালন করতে পারবে না। বেদের মন্ত্র যদি তাদের কানে ঢোকে তাহলে তাদের কানে গরম সর্ষের তেল দিতে হবে। এবারে দেখা যাচ্ছে মুসলিম এবং ব্রাহ্মণ বাদ দিয়ে বাদবাকি যারা তারা হিন্দু ধর্মের মধ্যে পড়লেও যেহেতু অমিতবাবুদের শাস্ত্র বিধান মতে কোন ধর্ম কর্ম করা হবে না ।তাই তাদের সকলকেই সংরক্ষণ দেওয়া হোক। এর মধ্যে বৌদ্ধ, জৈন, শিখ এদের কে সংরক্ষণ দিতে হবে। কারণ এরাও বিজেপি ওয়ালাদের মতে হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এই সমস্ত মানুষজনের ধর্ম পালন বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ধর্ম পালন মনে করা হবে না। এবারে যে সমস্ত জায়গায় মুসলিম মানেই ওবিসি (তামিলনাড়ু, কর্নাটক সহ আরো কিছু রাজ্য) সেখানে অমিত শাহের কথাটা কার্যকরী করার চেষ্টা হলে যেকোনো ধরনের অশান্তি হতে পারে বা একটি দাঙ্গা বা দাঙ্গার পরিবেশ তৈরি হতে পারে। এর ফলে বিজেপির মেরুকরণের উদ্দেশ্য সফল হতে পারে।
পশ্চিমবাংলায় হাইকোর্টের রায়ে বেশিরভাগ মুসলিম ওবিসি থেকে বাদ পড়েছে। এবারে মামলা গেছে সুপ্রিম কোর্টে। সুপ্রিম কোর্ট যদি ওই একই রায় বহাল রাখে তাহলে তা গোটা ভারতবর্ষের জন্য প্রযোজ্য হবে। বিজেপি এবারে এককভাবে ক্ষমতায় আসতে পারেনি, এইজন্য বিভিন্নভাবে মেরুকরণের চেষ্টা করছে যার মধ্যে একটা হল মুসলিমদেরকে ওবিসি থেকে বাদ দেওয়া, আর একটা হচ্ছে ওয়াকফ বোর্ডের সম্পত্তি দখল করা, পারলে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকরী করা। যার মধ্য দিয়ে এক বিরাট মেরুকরণের ব্যবস্থা বিজেপি হয়তো করার সুযোগ পেতে পারে। আমরা ঠিক জানিনা কোন অবস্থার মধ্য দিয়ে একটি মাত্র দল হিসেবে বিজেপি উঠে আসবে, কিন্তু তারা আপ্রাণ চেষ্টা করছে কাজটি করার। আদৌ তারা সফল হবে কিনা, বা সমস্ত গণতন্ত্র প্রিয় মানুষ তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে কিনা সেটা ইতিহাসই বলবে!
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct