সজল মজুমদার,আপনজন: প্রান্তিক জেলা দক্ষিণ দিনাজপুর। ঐতিহ্য মন্ডিত এই জেলা ১৯৯২ সালের ১ লা এপ্রিল গঠিত হয়েছিল। জেলার উত্তর ,পূর্ব এবং দক্ষিণ দিকে রয়েছে বাংলাদেশ রাষ্ট্র। প্রান্তিক জেলা হলেও সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চায় রাজ্যে উজ্জ্বলতর স্থান দখল করে আছে এই জেলা। জেলায় ঐতিহাসিক সময়ের পুরাকীর্তি, পুরাক্ষেত্র, মন্দির, মসজিদ, গির্জা এখনো অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। যদিও সংরক্ষণ রক্ষণাবেক্ষণ তেমন নিবিড়ভাবে এগুলোর হয় না বললেই চলে। জেলার ৮ টি ব্লকই প্রত্নতত্ত্ব সমৃদ্ধ। হরিরামপুর ব্লকের বৈরাটটা অত্যন্ত সমৃদ্ধ পুরা ক্ষেত্র। ইতিহাস বিজড়িত শমী বৃক্ষ এখনো জীবিত। রয়েছে কিচক কুন্ড। এখানকার সুবিশাল দীঘি গুলো বহু পুরোনো। চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি ।অন্যদিকে গঙ্গারামপুরের বানগর অন্যতম ইতিহাস প্রসিদ্ধ স্থান। পৌরাণিক কাহিনীর বান রাজার সাথে জড়িত সভ্যতার হদিশ এখানে পাওয়া যায়। সাথে গুপ্ত ও পাল যুগের একটা আভাস এখানে মেলে। রয়েছে কালদিঘি, ধল দীঘির মতো বৃহৎ জলভান্ডার। যাকে কেন্দ্র করে ইকো ট্যুরিজম এবং পরবর্তীতে সুস্থায়ী পর্যটনের ভাবনা ভাবা যেতেই পারে। পাশাপাশি তপন ব্লকের একটি বিখ্যাত পুরা ক্ষেত্র হল তপন দিঘী। পাল সেন যুগে খনন কাজ শুরু হয়। তবে বর্তমানে তপন দীঘির অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। সরকারি উদ্যোগে এটির সংরক্ষণ প্রক্রিয়াও অতি ধীর গতিতে চলছে। পাশাপাশি বংশীহারী থানার একডালা তে রয়েছে সুলতানি আমলের দুর্ভেদ্য দুর্গ। পীরপাল গ্রামে বক্তিয়ার খিলজির সমাধি। দেবকোটে আতা শাহের দরগা। আবার বালুরঘাট ব্লকের খাপুর ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের জন্য পরিচিত। এছাড়াও এখানে রয়েছে প্রাচীন সিংহবাহিনীর মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ইত্যাদি, ইত্যাদি। কিন্তু বিষয় হলো জেলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বহনকারী এই নিদর্শনগুলোকে কেন্দ্র করে সহনশীল উন্নয়নের ভাবনা কি ভাবা যেতে পারে না!!? অর্থাৎ আগামী কয়েক প্রজন্ম জেলার এই ঐতিহ্য গুলো যাতে স্বচক্ষে দেখতে পারে, অনুভব করতে পারে, স্পর্শ করতে পারে তার সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা এখন থেকেই সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে করা যেতেই পারে। জেলার সংস্কৃতিকে বহুল জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।উক্ত ইতিহাস বিজড়িত স্থানগুলোর আশেপাশে বসবাসকারী স্থানীয় বাসিন্দাদেরও উদাসীন ভাবনার পরিবর্তে দায়িত্বশীল ভাবনা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এছাড়ও উক্ত স্থানগুলোর ইকো ট্যুরিজম এবং সংরক্ষণশীল পর্যটন ভাবনাকে উন্নত করবার পর সহনশীল পরিবেশ ভাবনা বিষয়টি কাজে লাগাতে হবে। ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সুস্থায়ী পরিবেশ পর্যটন একে অপরের পরিপূরক। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার পর্যটন মানচিত্র অনেকটাই এগিয়ে যেতে পারে যদি জেলার ওইসব স্থানগুলোর সংস্কার, সংরক্ষণ করে সুনির্দিষ্ট জেলা টুরিস্ট গাইড ম্যাপ প্রকাশ করে প্যাকেজ ট্যুর হিসেবে জনসমক্ষে তুলে ধরা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় জনপ্রচারও প্রয়োজন। প্রয়োজন সরকারি, বেসরকারি স্তরে সদর্থক মানসিকতা।তাই জেলার ইতিহাস, সংস্কৃতি ঐতিহ্যমন্ডিত স্থানগুলোর উপযুক্ত সংস্কার, সংরক্ষণের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট স্থানগুলোর বাস্তুতান্ত্রিক ভারসাম্য অক্ষুন্ন রেখে স্থিতিশীল পরিবেশ পর্যটন চিন্তাভাবনাটির আশু প্রয়োগ অতি প্রয়োজন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct