আপনজন ডেস্ক: জমিয়তে উলেমায়ে হিন্দের পক্ষ থেকে সংবিধান রক্ষার বিষয়ে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে দিল্লির ইন্দিরা গান্ধি ইনডোর স্টেডিয়ামে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এর আহ্বানে ‘ভারতীয় সংবিধান সুরক্ষা’ শীর্ষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হল রবিবার। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সর্বভারতীয় সভাপতি মাওলানা আরশাদ মাদানির নেতৃত্বে আহুত এই সমাবেশের লক্ষ্য ছিল দেশের সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে মুসলিম নেতৃত্বকে এক মঞ্চে জড়ো করার বার্তা দেওয়া। মেমারি মাদ্রাসার মুহতামিম তথা জমিয়তে উলামার কেন্দ্রীয় ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য ক্বারী শামসুদ্দীন আহমাদের কুরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে এদিনের সমাবেশ শুরু হয়। এই সমাবেশে মাওলানা আরশাদ মাদানি দেশে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সরকার দেশের সাংবিধানিক মূল্যবোধকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে এমন পদক্ষেপ নিচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রস্তাবিত ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিষয়ে বিশেষভাবে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যার লক্ষ্য মুসলমানদের ধর্মীয় পরিচয় মুছে ফেলা। মাওলানা মাদানি বলেন, সরকারকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে ওয়াকফ সম্পত্তি শুধু সম্পত্তি নয় বরং মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও পরিচয়ের অংশ।
মাদানি বলেন, ওয়াকফ আমাদের পূর্বপুরুষদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত এবং এটি আল্লাহর মালিকানার একটি অংশ, যার উপর মসজিদ নির্মিত হয়েছে। আপনাদের (সরকার) উচিত তাদের রক্ষা করা, কারণ আমরা এই দেশে থাকি এবং আমরা বাইরে থেকে আসিনি। একজন হিন্দু যদি গুজ্জর হয়, তাহলে একজন মুসলমানও গুজ্জর... হিন্দুরা জাঠ; মুসলমানরাও জাঠ। তারা স্লোগান দেয় যে হিন্দু, মুসলিম এবং শিখরা পৃথক, কিন্তু আমরা বলি যে ‘হিন্দু, মুসলিম, শিখ এবং খ্রিস্টানরা সব হ্যায় ভাই ভাই’।
তিনি বলেন, ‘দিল্লিতে এমন অনেক মসজিদ রয়েছে, যার মধ্যে কয়েকটি ৪০০-৫০০ বছরের পুরনো। ভারতে একটি মহল আছে যারা এসব মসজিদ দখল করতে চায়। ৫০০ বছরের পুরনো নথি কে দিতে পারে? আইনে বলা আছে, ওয়াকফের জমিতে নির্মিত যে কোনও মসজিদই ওয়াকফের।
এদিনের ‘সংবিধান বাঁচাও কনভেনশন’-এ জমিয়ত প্রধান মাওলানা আরশাদ মাদানি আরও বলেন, দেশের মানুষ বিজেপিকে পরাজিত করেছে। তারা তাদের নীতি গ্রহণ করেনি। এই সরকার দুটি ক্রাচের উপর নির্ভরশীল একটি শক্তিশালী চন্দ্রবাবু এবং অন্যটি বিহারের নীতীশ কুমার। আমি তাকে (নাইডু) আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম; তিনি ক্ষমা চাইলেও তার দলের সহ-সভাপতি নবাব জানকে পাঠিয়েছেন। আমি এটিকে ইতিবাচকভাবে দেখছি, কারণ তিনি এখানে সমবেত জনগণের অনুভূতি প্রকাশ করবেন। মাদানি জোর দিয়ে বলেন, মুসলিমদের আবেগকে উপেক্ষা করে যদি ওয়াকফ বিল পাস করা হয়, তবে এটি কেন্দ্রের অন্যান্য শক্তির মতো ক্রাচেরও দায়িত্ব হবে। জমিয়ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই মাসের শেষে বা ডিসেম্বরে তারা চন্দ্রবাবু নাইডুর “এলাকায়” প্রায় পাঁচ লক্ষ মুসলমানের একটি সমাবেশ করবে এবং তার সামনে মুসলমানদের অনুভূতি তুলে ধরবে।
এদিনের সমাবেশে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি ওয়াকফ বিলকে মুসলমানদের পরিচয়ের জন্য হুমকি বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এই বিল পাস হলে মুসলমানদের মসজিদ, ঈদগাহ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থান সম্পর্কে প্রমাণ দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। এমনকি ৮০০ বছরের পুরানো মসজিদকেও রক্ষা করবে না।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct