এহসানুল হক, হাড়োয়া, আপনজন: বৃহস্পতিবার কালীপুজোর রাতে বসিরহাট মহাকুমার অন্তর্গত হাড়োয়ায় উপনির্বাচনের আগে চরমে উঠল তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। হাড়োয়ায় একটি কালীপুজোর অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে আক্রান্ত হলেন মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়িকা ঊষারানি মণ্ডল। কয়েকজন আহত হয় বলে খবর। অভিযোগ, বিধায়ককে গাড়ি থেকে নামিয়ে মারধরের ঘটনা ঘটে, তাতে বিধায়ক পায়ে চোট পান। অভিযুক্তরা প্রত্যেকেই তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত। তৃণমূল বিধায়ককে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই নানা শোরগোল দেখা দিয়েছিল দলে। এবার কালীপুজোর রাতে বিধায়ককে মারধরের অভিযোগ উঠল নিজের দলের লোকেদের বিরুদ্ধে। উল্লেখ্য,কয়েক মাস আগে মিনাখাঁর তৃণমূল বিধায়ক ঊষারানি মণ্ডলের বিজেপি ঘনিষ্ঠতা নিয়ে দলের মধ্যে বেশ জল্পনা তৈরি হয়েছিল। এমনকী তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভায় তাঁর অনুপস্থিতিও চোখে পড়েছিল অনেকেরই। যার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে প্রচণ্ড ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন শাসকদলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঊষারানীর নাম নিয়ে কড়া বার্তা দিয়ে সভা থেকে বলেছিলেন, “তৃণমূলের বিধায়ক থাকবেন কিন্তু মিটিংয়ে আসবেন না, এটা চলবে না। যতক্ষণ না ক্ষমা চেয়ে, পায়ে না ধরবে, ততক্ষণ ঊষারানি মণ্ডলের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। আপনাদের মতো লোক আমরা চাই না।” আর সেই ক্ষোভের আগুন মিটতে না মিটতেই ভয়ংকর ঘটনা ঘটল গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাতে।জানা গিয়েছে, গতকাল রাতে হাড়োয়া থানায় কালীপুজো হয়েছিল। সেখানে বিধায়ক এবং বিধায়কের স্বামীর মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল নিমন্ত্রণ থাকায় গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু ফেরার সময়ই ঘটে বিপদ। হাড়োয়ার টেম্পু স্ট্যান্ডের কাছে বিধায়কের গাড়ি লক্ষ্য করে ইঁট ছোড়া হয়।
শুধু তাই নয় বিধায়ককে গাড়ি থেকে টেনে নামিয়ে ব্যাটন দিয়ে মারা হয়। আক্রান্ত হয় তাঁর স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডলও। এই ঘটনায় সরাসরি আঙুল উঠছে তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেই অভিযোগ তুললেন বিধায়কের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মণ্ডল। এদিন বিধায়কের স্বামী মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল আরোও বলেন, আব্দুল খালেক মোল্লার নেতৃত্বে প্রায় ১০০ থেকে ২০০ লোক আমাদের উপর আক্রমণ করে, বিধায়ক সহ ১০ থেকে ১২ জন আমরা আক্রান্ত হয়। এমনকি পুলিশের সামনে থেকেই এই ঘটনা ঘটে। যদিও এই ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিয়েছেন হাড়োয়ার পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আব্দুল খালেক মোল্লা, তিনি উল্টে সাংবাদিকদের জানান, দেখুন মৃত্যুঞ্জয় মন্ডল এবং বিধায়িকা ঊষারানী মন্ডল তিনি হাড়োয়াতে কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রোগ্রামে উপস্থিত ছিলেন না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিনেই দল থেকে তাকে সাসপেন্ড করেছে। সেই রাগের কারণে ব্লক সভাপতি, প্রধানদের উপর অকত্য অত্যাচার করে যাচ্ছেন। কারণ তিনি নিজে তোলাবাজ,আবার তোলাবাজদের নিয়ে মাছের ভেড়ি সংক্রান্ত বিষয়ে এতটা জড়িয়ে গেছেন মানুষ তাকে আর পছন্দ করছে না। আরো অভিযোগ করেন, মোটা অংকের টাকা নিয়ে লোকের সঙ্গে বিট করিয়ে দেন। কিন্তু মানুষ চাইছে প্রকাশ্যে নিলামে অকশান হোক। বৃহস্পতিবার রাতে আমরা নারায়ণপুরে পাশের গ্রামে একটি কালীপুজো অনুষ্ঠানে গেছিলাম, সেখানে মৃত্যুঞ্জয় সহ বিধায়কের লোকজন আমাদের উপরে অতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। প্রধান মল্লিকা মন্ডলের উপরেও আক্রমণ করা হয়। সেখানে বন্দুকের গুলির খোল পাওয়া গিয়েছে। তিনি এই ঘটনায় পুলিশকেও দায়ী করছেন। এটা লজ্জার।এটা কোন গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব না, উনার লোকজন সরাসরি বিজেপির এজেন্ট হয়ে কাজ করেছে আমাদের কাছে প্রমাণ আছে। আজ মিনাখার বিধায়িকা এবং তার স্বামীর অত্যাচারে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গেছে, তাই এই আক্রমণ। যদিও এই বিষয়ে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান সরোজ ব্যানার্জি কোন কিছুই জানাতে চাননি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct