আপনজন ডেস্ক: ১১১—নেলসন’স নাম্বার! ক্রিকেটে সংখ্যাটা ‘অপয়া’ বলে মনে করেন অনেকে। প্রচলিত আছে, ভাইস–অ্যাডমিরাল নেলসন শেষ বয়সে গিয়ে একটি চোখ, একটি বাহু ও একটি পা হারিয়েছিলেন। প্রচলিত সেই ধারণা থেকেই ১১১ নিয়ে এমন কুসংস্কার!
তা হঠাৎ করে কেন নেলসন’স নাম্বার নিয়ে কথা বলা! আজ যে ভারতের প্রধান কোচ হিসেবে গৌতম গম্ভীরের ১১১তম দিন।
খেলোয়াড় হিসেবে দুটি বিশ্বকাপ জেতা গম্ভীর রোহিত শর্মা–বিরাট কোহলিদের কোচ হওয়ার পর অনেকে ভেবেছিলেন, রাহুল দ্রাবিড়ের পথ অনুসরণ করে তিনিও দলকে দারুণ কিছু সাফল্য এনে দেবেন। ভিন্ন অভিমতও ছিল। কেউ কেউ দাবি করেছিলেন, ভারতের কোচ হিসেবে খুব একটা সফল হতে পারবেন না গম্ভীর। মেয়াদ চার মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই ভারতীয় দল যতগুলো ব্রিবতকর রেকর্ড ও তেতো অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে গম্ভীরকে ভবিষ্যতের ব্যর্থ কোচ দাবি করা মানুষেরাই সঠিক প্রমাণিত হবেন!
গত ৯ জুলাই গম্ভীরকে প্রধান কোচের দায়িত্ব দেয় ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ৪৩ বছর বয়সী সাবেক এই ব্যাটসম্যানের কোচ হিসেবে যাত্রা শুরু হয় ২৭ জুলাই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি ম্যাচ দিয়ে। তখন থেকে গত পরশু নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ হওয়া পুনে টেস্ট পর্যন্ত তিন সংস্করণ মিলিয়ে গম্ভীরের অধীনে ১৩ ম্যাচ খেলেছে ভারত। জিতেছে ৮টি, হেরেছে ৪টি, টাই করেছে ১টি। জয়ের নিরিখে সাফল্যের হার ৬১.৫৪%, যেটাকে যথেষ্ট ভালোই বলা যায়।
কিন্তু গম্ভীরের কোচিংয়ে মাত্র ১৩ ম্যাচেই ভারত ৯টি বিব্রতকর রেকর্ড গড়েছে বা বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। এত অল্প সময়ে অন্য কোনো কোচের অধীনে ভারত এত বাজে অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছে কি না সন্দেহ।
শুরুটা অবশ্য ভালোই হয়েছিল। গম্ভীরের প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই শ্রীলঙ্কাকে তিন ম্যাচের সিরিজে ধবলধোলাই করে ভারত। তবে সনাৎ জয়াসুরিয়ার কোচিংয়ে লঙ্কানরা ওয়ানডে সিরিজেই গম্ভীরকে মুদ্রার উল্টো পিঠ দেখিয়ে দেয়। তিন ম্যাচের সিরিজটা ২–০ ব্যবধানে জিতে নেন আসালাঙ্কা–হাসারাঙ্গারা। অন্য ম্যাচটি হয় টাই। এটি ছিল ২৭ বছর পর শ্রীলঙ্কার কাছে ভারতের ওয়ানডে সিরিজ হার।
ওই সিরিজের তিন ম্যাচেই অলআউট হয়েছে ভারত। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের সব কটিতেই গুটিয়ে যাওয়ার ঘটনাও সেটি প্রথমবার। লঙ্কান স্পিনারদের বলে সিরিজজুড়ে হাপিত্যেশ করতে দেখা গেছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের। শ্রীলঙ্কার ছয় স্পিনার মিলে সিরিজে নিয়েছিলেন ২৭ উইকেট, যা তিন ম্যাচের কোনো ওয়ানডে সিরিজে স্পিনারদের বলে একটা দলের সবচেয়ে বেশি উইকেট হারানোর ব্রিবতকর রেকর্ড। তিন ম্যাচে ভারতের ৩০ উইকেটের মাত্র দুটি নিয়েছেন পেসার আসিতা ফার্নান্ডো, অন্য উইকেটটি রানআউট।
এ বছর ভারতের ওই তিনটি ওয়ানডে ম্যাচই ছিল। রোহিতের দল পরবর্তী ওয়ানডে ম্যাচ খেলবে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। এর অর্থ, ২০২৪ সালটা কোনো ওয়ানডে ম্যাচ না জিতেই শেষ করবে ভারত। দলটি সর্বশেষ এক পঞ্জিকাবর্ষে কোনো ওয়ানডে ম্যাচ জিততে ব্যর্থ হয়েছিল ৪৫ বছর আগে। ১৯৭৯ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকে ছিটকে পড়ে এস. ভেঙ্কটরাঘবন, সুনীল গাভাস্কার, মহিন্দর অমরনাথদের দল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct