আপনজন ডেস্ক: অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সভাপতি মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ রহমানি বলেছেন তিনি “যে কোনও মূল্যে” প্রস্তাবিত ওয়াকফ বিলের বাস্তবায়ন বন্ধ করবেন এবং এআইএমপিএলবি সদস্যরা এই কারণে তাদের জীবন দিতেও দ্বিধাবোধ করবেন না। উত্তরপ্রদেশের কানপুরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় সাইফুল্লাহ দাবি করেন, সরকারের লক্ষ্য বোর্ডের অধিকারকে সীমাবদ্ধ করা। কারণ সরকারের কাছে সর্বাধিক সংখ্যক ওয়াকফ সম্পত্তি অবৈধ দখলে রয়েছে। তিনি বলেন,
এটি আমাদের জন্য জীবন-মৃত্যুর বিষয় এবং আমাদের যে কোনও মূল্যে এটি (ওয়াকফ বিল) বন্ধ করা উচিত। প্রয়োজনে দেশের মুসলিমরা জেলগুলি এমনভাবে ভরাবে যে সরকারের অপরাধীদের রাখার কোনও জায়গা থাকবে না। পার্সেনাল ল বোর্ডের প্রধান আরও বলেন, প্রয়োজনে আমরা নিজেদের জীবন দিতে দ্বিধা করব না।
উল্লেখ্য, গত ২৮ জুলাই ওয়াকফ (সংশোধনী) বিল সংসদে পেশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু বিরোধী দলগুলোর তীব্র আপত্তির মুখে তা যৌথ সংসদীয় কমিটিতে (জেপিসি) পাঠানো হয়।
প্রস্তাবিত ওয়াকফ বিলে ওয়াকফ বোর্ডগুলির কর্তৃত্বকে সীমাবদ্ধ করার লক্ষ্য রয়েছে, যা তাদের কোনও সম্পত্তি বা অঞ্চলকে “ওয়াকফ সম্পত্তি” হিসাবে মনোনীত করার অনুমতি দেয়। এতে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম ও মুসলিম মহিলাদের প্রতিনিধিত্বেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এই মাসের গোড়ার দিকে, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন এআইএমপিএলবি-র একটি প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করেছিলেন, যার পরে এ হেমন্ত সোরেন বলেছিলেন, “সংসদে ওয়াকফ সংশোধনী বিল ২০২৪ সমর্থন করবেন না, যদি উপস্থাপিত হয়”।
জানা যায়, বোর্ডের সভাপতি সাইফুল্লাহর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল ৯ অক্টোবর ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে ও ল বোর্ড প্রস্তাবিত ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করেছে কেন তার কারণ ব্যাখ্যা করে। কানপুরে এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সাইফুল্লাহ বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার ওয়াকফ সংশোধণী বিল পাস করে ওয়াকফ সম্পত্তি দখলের পথ প্রশস্ত করবে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই কাজ সংবিধান, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো এবং দেশের বহুত্ববাদের বিরোধী।
সরকারের একমাত্র লক্ষ্য মুসলিমদের কাছ থেকে ওয়াকফ জমি ছিনিয়ে নেওয়া। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ওয়াকফ বোর্ড পরিচালনা যদি অমুসলিমরা করে তাহলে তারা কি আপনাদের মসজিদ ও কবরস্থানের প্রতি সহানুভূতি দেখাবে? এর ফলে আপনার জমি আপনার কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হবে। তাই এটা খুবই বিপজ্জনক আইন বলে মনে করেন তিনি।
সাইফুল্লাহ জানান, শুধু তামিলনাড়ুতেই মন্দিরের জমি আছে ৪,৭৮,০০০ একর। অন্ধ্রপ্রদেশে ৪,৬৮,০০০ একর মন্দিরের জমি রয়েছে। এই দুই রাজ্যেই ১০ লক্ষ একর মন্দিরের জমি রয়েছে। যদি গোটা দেশে মুসলিমদের ৬ লক্ষ একর ওয়াকফ জমি থাকে, তাহলে সমস্যা কোথায়?
তার আরও অভিযোগ, ওয়াকফ বোর্ডের কয়েকজন সদস্যকে আদালতে হেরে যাওয়ার জন্য এবং কোনও নথি জমা না দেওয়ার জন্য কেন্দ্র চাপ দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাইফুল্লাহ বলেন, ভেবে দেখুন। প্রায়শই ওয়াকফ মামলা চলে ওয়াকফ বোর্ড এবং সরকারের মধ্যে। এমন পরিস্থিতিতে সরকার চায় আমরা মামলায় হেরে যাই। তিনি অভিযোগ করেন, এমন একটি সময়ও এসেছে যখন ওয়াকফ বোর্ডের আধিকারিকদের মকদ্দমা হারানোর জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল। এমতাবস্থায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পাস হলে পুরো বিষয়টি যখন কালেক্টরের হাতে চলে যাবে, তখন তার কাছ থেকে কি ন্যায়বিচার আশা করা যায়? এটা কি আশা করা যায় যে মুসলমানদের তাদের অধিকার দেওয়া হবে?
ওয়াকফ বোর্ড ও সরকারের মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে কালেক্টর কি সরকারের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দেবেন? কারণ সংগ্রাহক তো স্বয়ং সরকার। তাই জান কুরবান করে ওয়াকফ বিলের বিরোধিতা করা হবে বলে সাইফুল্লাহ রহমানি ঘোষণা করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct