আপনজন ডেস্ক: গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার আগে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক ও তা জোরদার করার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। এখন গাজা যুদ্ধের এক বছর পর সৌদি সরকার তার পুরনো শত্রু ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে।
বছরখানেক আগে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার একটি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। যে চুক্তি মধ্যপ্রাচ্যকে মৌলিকভাবে বদলে দিত এবং ইরান ও তার মিত্রদের আরো একঘরে করে রাখতো। আর স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টিও সামনে আসত না।
নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। খবরে বলা হয়েছে, এখন সেই চুক্তির বাস্তবায়ন আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক দূরের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এমনকি হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে হত্যার পর সেই চুক্তি এখন নিরাশার দোলাচলে। গাজা যুদ্ধ এখন যেদিকে মোড় নিয়েছে তাতে একটি শান্তি চুক্তির লক্ষ্যে দ্রুত আলোচনা শুরুর বিষয়টি সব মহলে গুরুত্ব পাচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি আরব তার পুরনো শত্রু ইরানের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। সেইসাথে দেশটি জোরালো কণ্ঠে বলছে, যেকোনো কূটনৈতিক চুক্তি তথা সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আগে ইসরাইলকে অবশ্যই স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র হিসেবে মেনে নিতে হবে। সৌদি সরকারের ক্ষেত্রে এটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন।
মধ্যপ্রাচ্যে এই মুহূর্তে একটা কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে। তবে নিশ্চিতভাবেই সেটা ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু যেভাবে পরিকল্পনা করেছিলেন, সেভাবে ঘটছে না। তিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বরাবরই বলে আসছেন যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তার প্রশাসন রিয়াদের সাথে চুক্তি করতে যাচ্ছে।
চলতি মাসেই উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে প্রথমবারের মতো বৈঠক করেছেন। এর আগে কখনো এমন বৈঠক হয়নি। এই উদ্যোগ নড়বড়ে ও প্রাথমিক স্তরের হলেও শুধুমাত্র এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান ধর্মীয় বৈরী ভাব দূর করবে না, বরং বৈরিতার কারণে এই অঞ্চলে রিয়াদ ও তেহরানের মধ্যে বিগত কয়েক দশকে যে রক্তপাত হয়েছে তা বন্ধ করার একটি সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি করবে। এরপর থেকেই তেহরানের কূটনৈতিক তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। সৌদি আরবও সফর করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। সফর করেছেন ইরাক ও ওমানে। যার লক্ষ্য দেশগুলোর মধ্যে বিদ্যমান উত্তেজনা প্রশমন করা। এর বাইরে তিনি, জর্ডান, মিসর ও তুরস্কও সফর করেছেন। ইরানি সংবাদ মাধ্যম ‘ইরনা’ জানিয়েছে, গত ১২ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী মিসর সফর করলেন। গত ১৮ অক্টোবর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি তুরস্ক সফর করেন। ইস্তাম্বুলে নেমেই তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার যে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং গাজা-লেবাননের যুদ্ধ ও বাস্তুচ্যুত মানুষের বিষয়ে এখন আমাদের মধ্যে অভিন্ন ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।’
ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু যখন বারবার ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি অস্বীকার করছেন, তখন সৌদি কর্মকর্তারা গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক ফোরামসহ সব জায়গাতেই দ্বী-রাষ্ট্র সমাধানের বিষয়টি তুলছেন। আরব বিশ্বের নেতা হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবের বক্তব্য স্পষ্ট। আর তা হলো, ইসরাইল যদি সৌদিকে পাশে পেতে চায় তাহলে একমাত্র পথ হলো-স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাও তাকে স্বীকৃতি দেয়া।
গাজার ধ্বংসস্তূপের নিচে জীবন্ত চাপা পড়া শিশুদের ছবি, মৃত সন্তানের সামনে মায়েদের আহাজারি এবং ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের জন্য খাদ্য প্রবেশে ইসরাইলি বাধাদানের চিত্র- এর সব কিছুই সৌদি আরবের নেতৃত্বকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ইস্যুকে উপেক্ষা করা অসম্ভব করে তুলেছে।
সৌদি ব্যবসায়ী ও রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ এবং নিওম প্রকল্পের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলি শিহাবি বলেন, ‘গাজা যুদ্ধ থেকে যেটা হয়েছে, তা হলো-এই অঞ্চলে ইসরাইলের অঙ্গীভূত হওয়ার বিষয়টি পিছিয়ে গেল।’
তিনি আরো বলেন, ‘সৌদি আরব দেখছে যে গাজার ঘটনার পর থেকে ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা ক্রমেই বিষাক্ত হয়ে উঠেছে। ইসরাইলিরা যদি তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করে এবং একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি না দেখায়, তাহলে এই অবস্থা খুব একটা বদলাবে না।’ তেহরান ও রিয়াদ সম্পর্কে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা গেলেও সৌদি আরব ও এর উপসাগরীয় মিত্ররা ইরানের কূটনৈতিক পদক্ষেপের আন্তরিকতা নিয়ে এখনও সন্দিহান। কারণ, ইরান হামাস ও হিজবুল্লাহর পাশাপাশি ইয়েমেনের হুতিদেরও অস্ত্র ও সমর্থন করে যাচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct