আপনজন ডেস্ক: দিল্লির জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার নতুন উপাচার্য হচ্ছেন অধ্যাপক মাজহার আসিফ। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রপতি মাজহার আসিফকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করেছেন। মাজহার আসিফ বর্তমানে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজের অধ্যাপক। গত বছরের নভেম্বর থেকে পদটি শূন্য ছিল।
আসিফ জামিয়ার প্রথম মহিলা উপাচার্য নাজমা আখতারের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যার মেয়াদ ১২ নভেম্বর, ২০২৩ এ শেষ হয়েছিল, যার পরে অধ্যাপক ইকবাল হুসেনকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য নিযুক্ত করা হয়েছিল। পরে মে মাসে অধ্যাপক মোহাম্মদ শাকিলকে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেছেন, অধ্যাপক আসিফ পাঁচ বছরের জন্য অথবা ৭০ বছর বয়সে পৌঁছানো পর্যন্ত উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভারতের রাষ্ট্রপতি জামিয়া মিল্লিয়া ইসলামিয়ার পরিদর্শক হিসাবে নয়াদিল্লির জেএনইউয়ের স্কুল অফ ল্যাঙ্গুয়েজে অধ্যাপক মাজহার আসিফকে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ার উপাচার্য হিসাবে নিয়োগ করতে পেরে খুশি হয়েছেন। তার নিয়োগকে ঘিরে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে সংখ্যালঘু মহলে। বিশেষত বিজেপি এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের সাথে অধ্যাপক আসিফের অনুমিত ঘনিষ্ঠতা সম্পর্কিত বিষয়টি সামনে আসায়।
জামিয়া শুভাকাঙ্ক্ষীদের বেশ কয়েকজন সদস্য অধ্যাপক আসিফের অতীতের সংযুক্তির প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কিছু প্রাক্তন শিক্ষার্থী এবং বর্তমান শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রগতিশীল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তার দক্ষতা সম্পর্কে সন্দিহান। বিশেষ করে বিজেপি ও আরএসএস আয়োজিত অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আসিফের অংশগ্রহণের খবরের কারণে উদ্বেগ আরও বেড়েছে, যেসব সংগঠনের বিরুদ্ধে ভারতে বিভাজনের রাজনীতি প্রচারের অভিযোগ রয়েছে।
মুহাম্মদ নামে এক ছাত্র তার আপত্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি তাকে নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নই, তাই খুব বেশি খুশি হওয়ার দরকার নেই। এই মনোভাব সম্প্রদায়ের অন্যান্য কণ্ঠস্বরগুলির দ্বারা প্রতিধ্বনিত হয়েছে যারা অধ্যাপক আসিফের নিয়োগের পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে আশঙ্কা করছেন । এক ছাত্রের কথায়, বিজেপি ও আরএসএসের ঘনিষ্ঠ হওয়ার বিনিময়ে এই উপহার পেয়েছেন তিনি। জামিয়া সম্প্রদায়ের উচিত তার ওপর কড়া নজর রাখা। অন্যথায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় বিক্রি করে মিল্লাতের ক্ষতি করবে এমন আশঙ্কা রয়েছে।
সমালোচকরা বিজেপির অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে পাওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তি এবং বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়েছেন যা ইঙ্গিত দেয় যে তিনি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) এবং জাতীয় নাগরিক নিবন্ধক (এনআরসি) এর মতো বিতর্কিত ইস্যুতে বিজেপির অবস্থানকে সমর্থন করেছেন।
জেএনইউয়ের সেন্টার অফ পার্সিয়ান অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান স্টাডিজের অধ্যাপক ৫৩ বছর বয়সী আসিফ জেএনইউ থেকে স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং পোস্ট ডক্টরাল গবেষণাও করেছেন, তাঁর বিশেষত্বের ক্ষেত্র ছিল সুফিবাদ এবং ভারতের মধ্যযুগীয় ইতিহাস। জেএনইউয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি আরএসএস অনুমোদিত অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের (এবিভিপি) সদস্য ছিলেন।
জেএনইউতে যোগ দেওয়ার আগে আসিফ ১৯৯৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত গুয়াহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্সি স্টাডিজের ফ্যাকাল্টি মেম্বার হিসেবে কাজ করেছেন। তিনি জাতীয় শিক্ষানীতি (এনইপি) ২০২০ এর খসড়া কমিটির সদস্যও ছিলেন। ২০১৭ সালে জেএনইউয়ের সেন্টার অফ পার্সিয়ান অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান স্টাডিজে আসিফের নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানায় জেএনইউ টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন (জেএনইউটিএ)।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct