আজিজুর রহমান, গলসি, আপনজন: ফেসবুক, ইউটিউব, এবং ইনস্টাগ্রাম—এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলো বর্তমানে যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে পরিচিত। এসব প্ল্যাটফর্ম আমাদের মত প্রকাশের, জ্ঞান বিনিময়ের এবং সৃজনশীলতা প্রকাশের অসাধারণ সুযোগ দেয়। তবে এগুলো যেমন ইতিবাচক পরিবর্তন আনছে, তেমনি অশালীন কনটেন্ট ও অনৈতিক কার্যকলাপের মাধ্যমেও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
বর্তমানে ফেসবুক, ইউটিউব, এবং ইনস্টাগ্রামে অনেকেই দ্রুত জনপ্রিয়তা অর্জনের জন্য অশালীন কনটেন্ট তৈরি করছেন। এসব কনটেন্টে খোলামেলা পোশাক, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি, এবং অশ্রাব্য ভাষার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে। অনেক কনটেন্ট নির্মাতা ইচ্ছাকৃতভাবে অশ্লীল বিষয় যোগ করছেন, যা কিশোর ও তরুণদের বিপথে পরিচালিত করছে। এতে শিশুদের মানসিক ও নৈতিক বিকাশেও বিরূপ প্রভাব পড়ছে। অনেক সময় হাস্যরসের আড়ালে নোংরা ও খারাপ শব্দের ব্যবহার দেখা যায়, যা তরুণ প্রজন্ম বিনোদনের নামে অনুসরণ করছে। ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে অশ্লীল মিম এবং ভিডিও শেয়ার করা হয়, যা সমাজের নৈতিক মানদণ্ডকে নষ্ট করছে। ইউটিউবে অনেক নির্মাতা দর্শকদের আকৃষ্ট করতে এমন কনটেন্ট তৈরি করছেন, যেখানে অশ্লীল ভাষা ও বিষয়বস্তু থাকে, যা তরুণদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
অশালীন কনটেন্টের মাধ্যমে শিশুরা অল্প বয়সেই যৌনতা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছে, যা তাদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের সময়ে ভুল ধারণা তৈরি করছে। এই ধরনের কনটেন্ট পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্কেও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। সহজে ফলোয়ার এবং অর্থ আয়ের জন্য অনেকেই এমন কনটেন্ট তৈরি করছেন, যা সমাজের জন্য ক্ষতিকর। এসব কনটেন্টের প্রভাব তরুণদের মধ্যে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং তারা এটিকে বিনোদন হিসেবে গ্রহণ করছে।
তবে ফেসবুক, ইউটিউব, এবং ইনস্টাগ্রামের ইতিবাচক দিকও রয়েছে। এসব প্ল্যাটফর্মে শিক্ষামূলক কনটেন্ট এবং সচেতনতামূলক ভিডিও শেয়ার করার সুযোগ রয়েছে। ইউটিউবে শিক্ষামূলক ভিডিও, রান্নার টিউটোরিয়াল, কলাকৌশল শেখার ভিডিও এবং গবেষণামূলক কনটেন্ট জনপ্রিয়। শিক্ষার্থীরা এই মাধ্যমে অনেক কিছু শিখতে পারছে, যা তাদের পড়াশোনায় সহায়ক হচ্ছে। ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে অনেক সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির কার্যক্রম পরিচালিত হয়, যেখানে মানুষ মতামত শেয়ার করতে এবং নতুন ধারণা জানতে পারে। যেকোনো সৃজনশীল চিন্তা বা শিল্পকর্ম সহজেই ভাইরাল হয়ে যায়, যা নতুন প্রজন্মের সৃষ্টিশীলতাকে উদ্দীপিত করছে।
প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজতর করেছে, তবে এর অপব্যবহার বিপজ্জনক হতে পারে। যেমন এক সময় চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ বেড়েছিল, এখন সাইবার অপরাধের প্রবণতা বেড়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রতারণার প্রচেষ্টা বাড়ছে, যা মানুষের আর্থিক ক্ষতি ঘটাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং এবং অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারণার হারও বেড়েছে। তাই প্রযুক্তির সুফল পেতে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে এবং এর নেতিবাচক প্রভাব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে হবে।
ফেসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে সমাজের উপকার হবে। আমাদের উচিত অশালীন কনটেন্ট বর্জন করে শিক্ষামূলক, সামাজিক এবং সৃজনশীল কনটেন্ট তৈরি করা। এতে সমাজের নৈতিক মান বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সঠিক দিকনির্দেশনা পাবে। দায়িত্বশীলভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে এটি প্রযুক্তির উন্নয়নের একটি মাইলফলক হতে পারে, অন্যথায় এর নেতিবাচক প্রভাব সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে পারে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct