আপনজন ডেস্ক: অবশেষে সোমবার রাতে আমরণ অনশন প্রত্যাহার করলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। একইসঙ্গে মঙ্গলবার থেকে যে অনির্দিষ্টকালীন স্বাস্থ্য ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল সেই আন্দোলনও আপাতত স্থগিত রাখল আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা। তবে, শনিবার আরজি কর হাসপাতালে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকরা।
সোমবার নবান্নতে টানা দু’ঘণ্টা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্ম তলায় অনশন মঞ্চে ফিরে জুনিয়র চিকিৎসকরা পরবর্তী আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ঠিক করতে বৈঠকে বসেন। ওই জিবি বৈঠকে অনশন আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে কি হবে না তা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয় আন্দোলনরত জুনিয়র চিকিৎসকদের মধ্যে। অধিকাংশ জন আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক এই পক্ষে বক্তব্য পেশ করে মুখ্যমন্ত্রী বৈঠকে যেভাবে সদিচ্ছা প্রকাশ করেছেন সে বিষয়টির ওপর জোর দেন। আবার অন্য পক্ষের কেউ কেউ মঙ্গলবার দুপুর দুটো পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন যতক্ষণ না মুখ্য সচিব আন্দোলনরত চিকিৎসকদের দাবি মেনে বিভিন্ন কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখার বিষয়ে লিখিত চুক্তি না পাঠান। কিন্তু বৈঠকে বেশীরভাগ জনই বলেন মুখ্যমন্ত্রী যেভাবে সদিচ্ছা প্রকাশ করছেন এরপর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার মত ইস্যু তাদের হাতে আর থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রীর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে এদিন নির্ধারিত সময়েই নবান্নে পৌঁছন জুনিয়র চিকিৎসকদের ১৭ সদস্যের প্রতিনিধিদল। যদিও গত শনিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে ১০ জন জুনিয়র চিকিৎসককে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। স্বচ্ছতা বজায় রাখতে এদিনের বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচার করা হয় সমাজমাধ্যমে। বেশ কয়েকবার বৈঠক যথেষ্টই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। জুনিয়র চিকিৎসকদের ১০ দফার মধ্যে অন্যতম দাবি ছিল রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের অপসারণ। এদিন বৈঠকের শুরুতেই স্বাস্থ্য সচিবের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তোলেন জুনিয়রর চিকিৎসকদের নেতা অনিকেত মাহাত। জবাবে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, অভিযোগ প্রমাণের আগে কাউকে দোষী বলা যায় না। আরজি করের ৪৭ চিকিৎসককে সাসপেন্ড নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন মুখ্যমন্ত্রী। সরাসরি আরজি করের অধ্যক্ষ তথা ‘সিপিএম ঘনিষ্ঠ’ মানস বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানতে চান, ‘কোনও আলোচনা না করে সাসপেন্ড কেন? এটাও কি থ্রেট কালচার নয়? কী ভাবে নিজে সিদ্ধান্ত নিলেন? রাজ্য সরকারকে জানানোর প্রয়োজন মনে করলেন না?’ জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের সময়ে ৫৬৩ জন চিকিৎসক চুটিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে প্র্যাকটিশ ও অস্ত্রোপচার করেছেন বলে রাজ্য সরকারের কাছে প্রমাণ রয়েছে। ওই প্রমাণের কথা উল্লেখ করে মমতা বলেন, ‘তোমরা যখন আন্দোলন করছ, কর্মবিরতি করছে, তখন ৫৬৩ জন আন্দোলন চলার সময় বেসরকারি হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা করে টাকা নিয়েছেন। তোমাদের ধর্মঘটের জন্য গত ৭০ দিনে রাজ্য সরকারের ৪৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে ওই টাকা খরচ হয়েছে। জনগণের টাকা অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে।’
জুনিয়র চিকিৎসকদের দাবি মেনে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘জেলায় জেলায় গ্রিভ্যান্স সেল তৈরি করা হবে। রোগী কল্যাণ সমিতিতেও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।’ বৈঠকের শেষ লগ্নে অনশন তুলে নেওয়ার জন্য জুনিয়র চিকিৎসকদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আন্দোলন শুরু করলে শেষও করতে হবে। মানবাধিকার কমিশনের দাবিতে ২১ দিন ধর্না করেছিলাম। যখন অনশন করেছিলাম, তখন প্রশাসনের তরফে কেউ আসেননি। শুধু তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী পিভি নরসিমা রাও দু’লাইনের চিঠি দিয়ে দাবি আলোচনার আশ্বাস দিয়ে অনশন প্রত্যাহার করতে বলেছিলেন। তাঁর প্রতি সম্মান রেখে অনশন তুলে নিয়েছিলাম। সিঙ্গুর নিয়ে ২৬ দিন অনশন করেছি। কেউ আসেনি।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct