এম মেহেদী সানি, স্বরূপনগর, আপনজন: জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে বাম আমলে নির্মিত টিপির বাঁধ কেটে দিলেন জলমগ্ন দুর্গতরাই ৷ উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরূপনগর ব্লকের চারঘাট এলাকায় ইছামতী এবং যমুনার সংযোগস্থল টিপি মৌজায় চড়া পড়ে গিয়েছে। ওই এলাকায় বাম আমলে যমুনার নদীর পাড়ের দিকে এক মাটির স্থায়ী বাঁধ দেওয়া হয়েছিল। যেটি টিপির বাঁধ নামে পরিচিত। স্থানীয়দের দাবি যে বাঁধের কারণে প্রায় প্রতিবছরই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার স্বরুপনগর, গাইঘাটা, গোবরডাঙ্গা, হাবড়া, বনগাঁ এলাকার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে ৷ এ বছর পরপর নিম্নচাপের দরুন জলমগ্ন এলাকার পরিমাণ অন্যান্য বারের তুলনায় অনেকটা বেশি ৷ বিস্তীর্ণ জলমগ্ন এলাকাবাসী কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবেন তা বুঝে উঠতে পারছেন না, পাশাপাশি কাজকর্ম হারিয়ে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে হিমশিম অবস্থা অনেকের। এখনও অনেকে ত্রাণ শিবিরে জলবন্দি হয়ে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের পক্ষ থেকে একদিকে যেমন দাবি ওঠে ইছামতী ও তার শাখা নদী গুলি সংস্কার করার জন্য, অন্যদিকে চারঘাটে ইছামতী এবং যমুনার সংযোগস্থল টিপির বাঁধ কেটে দেওয়ারও দাবি ওঠে ৷ যদিও ওই জল যন্ত্রণা নিরসনে প্রশাসনিক উদাসীনতার অভিযোগ উঠেছে বারবার ৷ তবে রবিবার একেবারেই ভিন্ন চিত্র ধরা পড়ে, জলযন্ত্রণার ক্ষোভ থেকে জলবন্দি মানুষেরা একত্রিত হয়ে ক্ষোভ উগরে দিলেন ইছামতি ও যমুনা নদীর মধ্যবর্তী টিপির ঘাট এলাকায় নদীর বাঁধ কেটে দিয়ে ৷ টিপির বাঁধ কাটার সমর্থনে বাঁধ উপর কয়েক হাজার মানুষ উপস্থিত হন ৷ বিক্ষুব্ধ সাধারণ মানুষ কোদাল দিয়েই শুরু করে দেন বাঁধ কাটা ৷ স্বরূপনগর ব্লকের পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েত সহ গাইঘাটা ব্লকের একাংশের মানুষ যারা দীর্ঘ দু মাস যাবত জলবন্দী অবস্থায় থাকা দুর্গত মানুষেরা জানায় ‘শারদ উৎসবের দিনগুলো কিভাবে গেল তা বুঝতে পারেনি। সামনে কালীপুজো, ওদিকে আবার আবহাওয়া দপ্তর ঘূর্ণিঝড়ের খবর দিচ্ছে আমরা আতঙ্কিত, উৎকণ্ঠায় আছি ৷’ জলমগ্ন দুর্গত এলাকাবাসীর চাপা ক্ষোভ এদিন যেন ফেটে পড়লো টিপির বাঁধের উপর ৷ তাদেরই সম্মিলিত উদ্যোগে টিপি নামক স্থানে যমুনা তীরে বাঁধ কেটে দিয়ে জল বের করার প্রয়াস গ্রহণ করে নিজেরাই কোদাল চালানো শুরু করেন ৷ হাত লাগান কয়েকশ মানুষ ৷ এ দিন বিকালে অবশ্য বাঁধ ভাঙতে জেসিবিও আনা হয় ৷ তাদের আশা এই বাঁধ কেটে দেয়ার ফলে তারা অচিরেই জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাবে। তবে তাদের আরও দাবি জল যন্ত্রণার অবসান করতে ইছামতি নদী পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের করতে হবে। সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন হল আন্তর্জাতিক নদীটি স্রোত, নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায়। বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার একাংশে বছরের বেশিরভাগ সময়ে নদী কচুরিপানায় ভরা থাকে। নদীর এই অবস্থার ফলে জীবিকাও হারিয়েছেন বহু মানুষ। ভোট আসে ভোট যায়, সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে ইছামতি সংস্কারের ৷ যদিও ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার সময় তাদের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল প্রতিবছর জল যন্ত্রণা নিরসন করতে বাম আমলের নির্মিত টিপির বাঁধ কেটে দেওয়া হবে ৷ তবে প্রতিশ্রুতি সার, শেষমেষ ক্ষোভের মধ্যে দিয়েবাঁধ কাটালেন জলমগ্ন দুর্গত সাধারন মানুষেরা ৷ তবে তাদের পক্ষে তো আর চাইলেই ইছামতি সংস্কার সম্ভব নয় ৷ তাই বাঁধ কাটলেও ইছামতি এবং তার শাখা নদীগুলি সংস্কার না হলে জল নিকাশি ব্যবস্থা উন্নত হবে কিনা তা নিয়েও চিন্তিত তাঁরা ৷ তবে সরকারি উদাসীনতা সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন স্থানীয় বিদ্বজ্জনরা ৷ সম্প্রতি স্বরূপনগরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কৃষ্ণপদ রায় জানান, ‘স্বরূপনগরের বিভিন্ন এলাকায় কম করে ১৫ হাজার বাড়ি জলমগ্ন ৷ ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ সমস্যার সম্মুখীন ৷ আনুমানিক দু হাজার একর কৃষি জমে জলের তলায় ৷ সব মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জমির পরিমাণ কয়েক হাজার বিঘা ৷ জেলা পরিষদ সূত্রে জানা গিয়েছে ইছামতি সংস্কারের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই রিপোর্ট তৈরি চলছে ৷ খুব দ্রুত এর নিষ্পত্তি হবে ৷ তবে কবে চিরতরে এই জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে তারই দিন গুনছে এলাকাবাসী ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct