এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: ওবিসি সমস্যা নিরসনের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার জোর তৎপরতা শুরু করেছে বলে নবান্নে সূত্রে খবর। নবান্নে সূত্রে খবর, শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য সচিবের দফতরে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। জানা গেছে, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি সঞ্জয় বানসাল, সংখ্যালঘু দফতরের সচিব পিবি সালিম, বিধায়ক হুমায়ুন কবির প্রমুখ। সূত্রের খবর, এদিন এই বৈঠকের মাঝেই রাজ্যের মুখ্য সচিব ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস ওয়েলফেয়ার অ্যান্ড ট্রাইবাল ডেভেলপমেন্ট ডিপার্টমেন্ট-এর তৎকালীন সময়ের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি শেখ নুরুল হকের সঙ্গেও কথা বলেন। ওবিসি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় রাজ্য সরকারের পক্ষে না এলেও কীভাবে ওবিসি সমস্যা সমাধান করা যায় তা নিয়েও এদিনের বৈঠক আলোচনা হয়। সুপ্রিম কোর্টে ওবিসি মামলাটি যাতে দ্রুত শুনানি হয় সেজন্য ওই মামলায় রাজ্য সরকারের পক্ষে থাকা বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বালকে আগামী সোমবার কোর্টে মামলাটি মেনশন করার জন্য রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, নবান্ন সুত্র জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের শুনানি ও রায়দান বিলম্ব হলে এবং তা রাজ্য সরকারের পক্ষে না গেলেও আইনানুযায়ী ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস কমিশন নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্ভে প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে নতুন তালিকা তৈরি করে ওবিসি সমস্যার সমাধানের ক্ষেত্রে যাতে উদ্যোগী হয় সে বিষয়টিও তুলে ধরেন ডেবরার বিধায়ক প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবির। এ সম্পর্কে হুমায়ুন কবিরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ওবিসি সমস্যা দ্রুত সমাধান করার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা এবং তৎপরতার কথা উল্লেখ করে ‘আপনজন’কে বলেন, ‘ওবিসি মামলা সুপ্রিম কোর্টে বারবার পিছিয়ে যাওয়া এবং সংখ্যালঘু শিক্ষিত সমাজের উদ্বেগের বিষয়টি আমি সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানিয়েছিলাম। শুক্রবার রাজ্যের মুখ্য সচিবের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকও হয়। সেখানে আমি একটি প্রস্তাব রেখেছি। সেটি হল, ওয়েস্ট বেঙ্গল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস অ্যাক্ট ১৯৯৩-এর সেকশন-১১ এ স্পষ্ট বলা আছে নির্দিষ্ট লিস্ট পরিবর্তন করা যেতে পারে সার্ভের ভিত্তিতে। পাশাপাশি কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের ১৮৮ পাতার ৩৬০ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস কমিশন চাইলে নতুন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে সার্ভে করে নির্দিষ্ট নিয়ম অনুযায়ী নতুন লিস্ট তৈরি করতে পারে’। রাজ্য সরকার এই বিকল্প পথ অবলম্বন করতে পারে বলেও জানান হুমায়ুন কবির। ওবিসি মামলার সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন থাকা অবস্থায় রাজ্য সরকার সামান্তরালভাবে বিকল্প এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারবে কিনা এ বিষয়েও রাজ্য সরকার কপিল সিব্বালকে সুপ্রিম কোর্টে সোমবার বিষয়টি মেনশন করার কথা বলবেন বলেও নবান্ন সূত্র জানিয়েছে। প্রসঙ্গত, ওবিসি সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ে ‘২০১০ সালের পর থেকে জারি করা রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হয়’ ফলে সমস্যায় পড়ে রাজ্যের প্রায় ৫ লক্ষ ওবিসি শংসাপত্রধারীরা। মামলায় হেরে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় রাজ্য সরকার। সেইসঙ্গে মুসলিম সমাজে বেশ কয়েকজন বিদ্বজ্জন কয়েকটি সংখ্যালঘু সংগঠন ও ব্যক্তি এই মামলায় পার্টি হন । ওই মামলায় সুপ্রিম কোর্টে প্রথমদিন শুনানির পর রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে প্রখ্যাত আইনজীবী কপিল সিব্বালকে নিয়োগ করা হয় । পরবর্তী শুনানিতে কপিল সিব্বাল সুপ্রিম কোর্টে আরও প্রস্তুতি প্রয়োজন বলে সময় প্রার্থনা করেন। এরই মাঝে আরজি কর কান্ডের শুনানির ফলে এই গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানি পিছিয়ে যেতে থাকে। পরবর্তী শুনানির তারিখ রয়েছে ২২ অক্টোবর। তবে, আবারও শুনানি পিছিয়ে যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, ওবিসি মামলাটি রয়েছে শুনানিতে প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে। আগামী ১০ নভেম্বর প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের অবসর নেওয়ার কথা। তার আগে ওবিসি মামলার রায় ঘোষণা না হলে আরও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। কারণ, তখন আবার নতুন করে বেঞ্চ গঠন করতে হবে্ সেক্ষেত্রেও ওবিসি মামলাটি আরও বিলম্ব হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে। তাই রাজ্যের সংখ্যালঘু মহলে এ বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে। রাজ্যের বিভিন্ন সংখ্যালঘু সংগঠন এ নিয়ে আলোচনা সভা করে চলেছে। এই সব আলোচনা সভায় ওবিসি সমস্যা নিয়ে রাজ্যের সংখ্যালঘু জনপ্রতিনিধিদের সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানানো হয়। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায়ও রাজ্যের সংখ্যালঘু বিশেষত রাজ্যের সংখ্যালঘু সাংসদ, বিধায়ক প্রমুখদের এ বিষয়ে বিশেষ ভূমিকা নেওয়ার আর্জি জানানো হয়। এরপর সাংসদ সামিরুল ইসলাম এ বিষয়ে সরকারি মহলে সক্রিয় হলেও পরে পরিযায়ী শ্রমিকদের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই সন্ধিক্ষণে ডেবরার বিধায়ক প্রাক্তন আইপিএস অফিসার হুমায়ুন কবির বিষয়টি নিয়ে তৎপরতা গ্রহণ করার বিষয়টি সামনে আসতে শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, ২২শে মে ওবিসি সংক্রান্ত রায়ে কলকাতা হাইকোর্ট স্পষ্ট জানিয়েছিল, ‘২০১০ সালের পর থেকে জারি করা রাজ্যের সমস্ত ওবিসি সার্টিফিকেট বাতিল করা হলেও এই সার্টিফিকেট ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই চাকরি পেয়ে গিয়েছেন বা চাকরি পাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কোনও প্রভাব ফেলবে না।’ কিন্তু তা সত্ত্বেও চাকরির পরীক্ষা ও নিয়োগ, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং মেডিকেল কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ওবিসি ছাত্র-ছাত্রীরা চরম সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। সেই সমস্যার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কানে পৌঁছতেই কীভাবে ওবিসি সমস্যা মেটানো যায় তার জন্য রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct