অভয় মিশ্র, আপনজন: বিশ্বের বৃহত্তম সংসদীয় গনতন্ত্রের অদ্বিতীয় নজির ভারত। এই ভারতে যেমন বহুল প্রজাতির মানুষের বাস তেমনি তাদের মত আদান প্রদানের জন্য রয়েছে বিভিন্ন ভাষা। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। মাতৃভাষা হচ্ছে মায়ের ভাষা।জন্মের পর মায়ের মুখ দিয়ে এই ভাষা শোনা ও তা অনুকরন করেই পথচলা। বিশ্বের কুড়ি কোটির বেশি মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন। সারা বিশ্বে সপ্তম বৃহত্তর বলা ভাষায় সাম্মানিক আসন বাংলা ভাষার দখলে। ভাষার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের জন্ম এই কৃতিত্বও বাংলা ভাষার ঝুলিতেই।
বাংলা ভাষার জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে বিতর্কের অন্ত নেই। কেউ কেউ মনে করেন বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার দুহিতা। আবার অনেকে বলেন দুহিতা নয় রয়েছে শুধু আত্মীয়তার সম্পর্ক। ধ্রুপদী সভ্যতা হল ভূমধ্যসাগরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা একটা সাংস্কৃতিক ঐতিহাসিক যুগ
যা প্রাচীন গ্রিস ও রোমের সাথে তুলনীয়। মহাভারতে দ্রোপদীর পিতা ধ্রুপদ। সেই আদি বোঝাতেই নাকি ধ্রুপদী শব্দের আগমন। ধ্রুপদী ভাষা বলতে বোঝায় অতি প্রাচীন ভাষা (আজ থেকে ১৫০০ বছর বা তার বেশি ), স্বাধীন ও স্বাবলম্বী।যার রয়েছে সমৃদ্ধ সুপ্রাচীন সাহিত্যের ভান্ডার।
শারদীয়ার মরসুমে ভাষাপ্রান বাঙালির শারদ সন্মান- “বাংলা ভাষার ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা।” কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্কৃতিমন্ত্রক নতুন করে পাঁচটি ভাষাকে ধ্রুপদী ভাষার মর্যাদা দিল।এই পাঁচটি ভাষার মধ্যে বাংলা ভাষার নামও জুড়ল। সারা ভারত জুড়ে বাংলা ভাষার বিকাশ, গবেষণা ও সরকারি ক্ষেত্রে ব্যবহারের দ্বার উন্মুক্ত হল। আশাবাদী বাংলা ভাষার প্রচার ও প্রসারের পথ আরো প্রশস্ত হবে। যে ভাষা দেশকে“ জন গন মন অধিনায়ক” দিয়েছে ওপার বাংলার জাতীয় সঙ্গীত যে সুরে ধাবিত সেই ভাষার এই সন্মান প্রাপ্তির সময়ের দুরত্ব বিলম্বিত বোধদয়।
প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে প্রচারে এসে বাংলা ভাষার মধুরতা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। এমনকি তিনি আরো এক পা বাড়িয়ে বাংলা ভাষা শেখার আগ্রহও দেখিয়েছিলেন। যেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বার বার বাংলা বলার চেষ্টা করেছেন। লোকসভা ভোটেও বাংলা ও বাঙালির মন কাড়তে ব্যর্থ কেন্দ্র সরকার ২০২৬ এর নির্বাচনের আগে পথের কাঁটা পরিষ্কার করতে নামছেন বলে একশ্রেণীর অভিমত।
ভাষা নদীর মত বহমান। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর নিঃসন্দেহে আজ খুশির দিন। বাঙালির অধিকার আদায়ে তিনি সফল। তবে গর্বের পাশাপাশি দায়বদ্ধতাও বাড়ল। বেশিরভাগ ধ্রুপদী ভাষায় আজ মৃত। এগুলোতে কেউ আর সাহিত্য রচনা করেন না। এর বিস্তার ও প্রসারে রাস্তাঘাট, হসপিটাল, অফিস আদালত, সরকারি কাজে বাংলার অন্তর্ভুক্তি জোরালো করতে হবে। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকার বাংলার একাধিক সরকারি পরীক্ষায় বাংলা লেখা,পড়া ও বলাকে যোগ্যতার মাপকাঠি করেছেন। ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রেও বাংলাচর্চার দিকটিতেও আলোকপাত করতে হবে। তবে বড় প্রশ্ন চিহ্নের (?) কাছে আমরা যে, বাংলিশ বাঙালির কথায় কথায় সরি বলা অভ্যাসে ধ্রুপদী কতটা দাগ কাটতে পারবে!
তবে আজ খুশিতে আত্মহারা বাঙালির কণ্ঠে এই সুর স্পষ্ট যে এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটে যতদূর চলুক রবি-নজরুল-জীবনানন্দের ছবি বুকে ধরে বলবেই “বাংলা আমার তৃষ্ণার জল, তৃপ্ত শেষ চুমুক”। মহামতি গোখলের চিরন্তন বাণী “বাংলা আজ যা ভাবে,ভারত আগামীকাল তা ভাববে” তাতে আরো একবার সীলমোহর পড়ল।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct