ধর্ষণ কোন নতুন ঘটনা নয়, ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৬ জন ধর্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তার নিকট আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠ লোকজন। আর এই অপরাধকে বিভিন্ন সময়ে সরকার ধামাচাপা দিতে যাই নানা রাজনৈতিক কারণে ও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সকলেই নানা কারণে একই পথে চলেন।তবে এই ধামাচাপার কাজে বারবার কাজে লাগানো হয় ডাক্তার বাবু ও পুলিশদের। লিখেছেন ড. মুহাম্মদ ইসমাইল...
ধর্ষণ কোন নতুন ঘটনা নয়, ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৮৬ জন ধর্ষিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযুক্ত তার নিকট আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠ লোকজন। আর এই অপরাধকে বিভিন্ন সময়ে সরকার ধামাচাপা দিতে যাই নানা রাজনৈতিক কারণে ও নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে। বিজেপি, তৃণমূল, কংগ্রেস থেকে প্রতিটি রাজনৈতিক দল সকলেই নানা কারণে একই পথে চলেন। তবে এই ধামাচাপার কাজে বারবার কাজে লাগানো হয় ডাক্তার বাবু ও পুলিশদের। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট মিথ্যে লেখা হয় প্রভাবশালীদের আড়াল করতে। এমন অভিযোগ হাজার হাজার মেডিক্যাল কলেজ ও নানা ডাক্তারের বিরুদ্ধে। খেয়াল খুশি মত কেস সাজানোর জন্য মেডিক্যাল সার্টিফিকেট দেওয়া হয় টাকা ও নানা সুযোগ সুবিধার লোভে। পুলিশ তদন্ত করে মিথ্যা সিলমোহর লাগায় বহু সত্যি ঘটনার। আর জি কর নিয়ে পশ্চিম বাংলা উত্তল প্রায় দুই মাস ধরে। তা নিয়ে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্ম বিরতি চলছে বিচারের দাবিতে। শুধু তাই নয়, তাদের সাথে শামিল হয়েছে ডান, বাম থেকে গেরুয়া শিবিরসহ নাগরিক বিন্দু। হা তবে, এবারের আন্দোলন এক নতুন চেহারা মেয়েদের রাত দখল বিভিন্ন শহর ও সেমি শহরগুলোতে। পশ্চিমবাংলার ইতিহাসে এত জনজোয়ার ও জোরদার প্রতিবাদের চেনা চিত্র মনে পড়ছে না। আরজিকর মেডিকেল থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়েছে সকল মেডিক্যাল কলেজ ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে নানা সামাজিক সংগঠনে। খুন করে মেডিক্যাল ছাত্রীকে ধর্ষণ বা ধর্ষণ করে খুন যা অত্যন্ত বেদনা দায়ক ও সভ্যতার ইতিহাসে বর্বরোচিত দিনক্ষণ। শুধু তাই নয়, তাও আবার অভিযুক্তরা তার সহকর্মী জুনিয়র ডাক্তার। কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবের বিরুদ্ধে ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ। তারজন্য রাজ্য জুড়ে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোতে কর্মবিরতি চলছে ধর্ষণে অভিযুক্ত দোষীদের শাস্তি চেয়ে। কিন্তু শুরু থেকে অভিযোগ কলেজের অধ্যক্ষ নাকি তথ্য লোপাট করছেন ঘটনার ধামাচাপা দিতে। দুইবার মেডিক্যাল রিপোর্ট করা হয় ও মেডিক্যাল রিপোর্টে নানা অযৌক্তিক ফলাফল নিয়ে প্রশ্ন উঠছে নানা মহলে। তবে এটা প্রথম নয়, এমন বহু অসৎ ডাক্তার ও চিকিৎসা কর্মী আছেন রাজ্যজুড়ে যারা নয় কে ছয় করতে পারে। তার ফলে আসল অপরাধী ছাড়পত্র পায় ভুয়ো রিপোর্টের দৌলতে। শুধু তাই নয়, বহু অভিযোগ ডাক্তারদের বিরুদ্ধে রয়েছে, ধর্ষিত মেয়েদের রিপোর্ট দেওয়া হয় না রাজনৈতিক চাপে ও মোটা টাকার বিনিময়ে। আবার কখনো মিথ্যে কেস সাজানোর জন্য একাধিক মিথ্যা ধর্ষণ, খুন, ও আহত হওয়ার রিপোর্ট দেওয়া হয় মোটা টাকা এবং রাজনৈতিক নেতাদের পরামর্শে মর্যাদাপূর্ণ পদের লোভে। প্রতিদিন সাধারণ মানুষ চোখের জল ফেলছেন ডাক্তারদের নানা কর্মকাণ্ডে। কখনো চিকিৎসা না পেয়ে রোগী মারা যায়, কখনো চিকিৎসায় গাফিলতি, কখনো ভুল চিকিৎসা, কখনো মুমুর্ষ রোগীকে ভর্তি না নিয়ে, দালালচক্রের মাধ্যমে হসপিটালে ভর্তি করানো, কখনো মৃত্যু ব্যক্তিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আইসিইউতে রেখে অতিরিক্ত বিল করা, আবার কখনো কখনো নানা কোম্পানির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে নানা কমজোর ওষুধ ব্যবহারের নির্দেশনা নিয়ে। তারপরও গ্রাম-বাংলার, হতদরিদ্র মানুষের কাছে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ করার মত কোন পথ নেই। কারণ সাধারণ ও খেটে খাওয়া অধিকাংশ মানুষ সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা করান। আর এই চিকিৎসকদের মূল্য সাধারণ মানুষের কাছে ভগবানের সমান। অথচ ভগবানদের দুর্ব্যবহার ও নানা অপরাধে সাধারণ মানুষেরা চুপ থাকে। এইভাবে বহু রোগী স্বর্গ বাসী হন ও আত্মীয়স্বজন হারা হন সাধারণ মানুষ গুলো। রাজ্যজুড়ে ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে আবার সাধারণ মানুষেরা অসহায়। সাধারণ, গরিব, হতদরিদ্র রোগীর আত্মীয়-স্বজনেরা বিভিন্ন হসপিটাল ও মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন। অথচ জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির ফলে মুমূর্ষু রোগীরা চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত। তার ফলে আবার চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। অথচ যাদের নিয়ে আন্দোলন তারা বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে পরিষেবা গ্রহণ করছেন এবং অধিকাংশ ডাক্তার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা প্রদান করছেন। যারা এমন জঘন্য ঘটনার কারিগর, যারা সরকারি ক্ষমতার শীর্ষ বসে এমন অপরাধ করছেন ও অপরাধীদের আড়াল করছেন তারা দিব্যি চিকিৎসা পাচ্ছে। যারা আন্দোলন করছেন সরকারি নানা পদে বসে, তাদের কোন অসুবিধা নেই। প্রথমে চিকিৎসা বন্ধ করুন প্রভাবশালীদের, কেন সাধারণ মানুষের চিকিৎসার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছেন। ২০২১ সালের একটি ঘটনা, বিধানসভা ভোটের পর কোরণা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। হঠাৎ এক বৃদ্ধার কোরণা পজেটিভ ধরা পড়লো এবং অক্সিজেন লেভেল মাত্র ৮২ শতাংশ। শহরের বিভিন্ন সরকারি হসপিটাল ও মেডিক্যাল কলেজে ঘোরা ফেরার পর ভর্তি করানোর ব্যবস্থা হল না। অবশেষে এক নিকট পরিচিত ডাক্তারি পড়ুয়ার হাত ধরে কোনোক্রমে এক নামি মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হলো। কিন্তু ডাক্তার বাবুরা জানিয়ে দিলেন আইসিইউ সাপোর্ট ছাড়া কোনোভাবে রোগীকে বাঁচানো যাবেনা। শুধু তাই নয়, কোরণা পজেটিভ ওয়ার্ডে বেড খালি না থাকার কারণে সাধারণ ওয়ার্ডে রাখা হয় প্রাথমিক ভাবে কয়েকজন কোরণা পজেটিভ রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়ে। আবার হসপিটালে পরীক্ষা নিরীক্ষার পরে মোবাইলে রিপোর্ট আসে করুণা পজেটিভ। তা কর্মরত পিজিটি ডাক্তারকে দেখানো হলে তিনি রসিকতা শুরু করেন অমানবিক ভাবে এবং বলতে থাকেন দারুণ খবর। এবার আপনি বাইরে যান, আর রিপোর্টের কপি প্রিন্ট করে নিয়ে আসুন। আমি সাথে সাথে লিখে দেবো যেখানে খুশি নিয়ে যান। একজন ডাক্তারের হাবভাব ও ভঙ্গিমা দেখে রীতিমতো হতভম্ব হয়ে পড়ি ও অবাক হয়ে যায়। একজন ডাক্তার কতটা অমানবিক হলে একজন মুমূর্ষু রোগীর নিজ আত্মীয়ের সঙ্গে এমন ব্যবহার করতে পারেন। অবশেষে বাধ্য হয়ে তা করতে হয়। কিন্তু আমাদের কাছে কোন উপায় না থাকায় বারবার কাকুতি মিনতি করার পর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ রোগীকে রাখার নির্দেশ দেয়। তবে কোথাও খালি পেলে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। রাত দশটার সময় শেষ দেখা হলে বলা হয় অক্সিজেন লেভেল বৃদ্ধি পেয়ে ৯৬ এর মধ্যে রয়েছে। তা শুনে আমরা স্বস্তি পায় ও সকাল সাড়ে ছটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। কিন্তু সকাল সাড়ে ছটায় ওয়ার্ড গিয়ে দেখি অক্সিজেন খোলা অবস্থায় রোগী পড়ে রয়েছে নিথর হয়ে। কিছু বুঝতে না পেরে আমরা চেষ্টা করি অক্সিজেন লাগিয়ে দিতে, কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স, তখন তাদের বেডরুমে ঘুমাচ্ছেন। আয়া জানালো তিনি পাঁচটার সময় তাকে স্নান ও চুল বেঁধে গেছেন তখন তিনি সুস্থ ছিলেন এবং অক্সিজেন লাগানো ছিল, পাশের বেডের রোগী জানাই অক্সিজেন খুলে যায়, চিৎকার করতে থাকে কিন্তু কেউ আসেনি। শেষমেষ নিশ্চুপ হয়ে যায়। এমন সন্দীপ ঘোষের মতো বহু চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন যারা চিকিৎসাকে মহান পেশা ও সেবামূলক হিসেবে গ্রহণ করতে পারেনি। আর তাদের জন্য হয়রানির শিকার সাধারণ মানুষ ও বদনাম হচ্ছে বহু কর্তব্যরত মানবিক চিকিৎসকেরা। কর্মবিরতির সময় কল পেয়েছিলাম এক ছাত্র থেকে- তার আত্মীয় অসুস্থ। দরিদ্র আত্মীয়কে সরকারি হসপিটালে নিয়ে গেলে কর্ম বিরতির ফলে চিকিৎসা পায়নি। অবশেষে পরিচিত ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি কয়েকদিন ধরে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। তাই চিকিৎসকদের কাছে বিশেষ আবেদন আপনারা কর্মবিরতি করুন কিন্তু চেম্বার, নার্সিংহোম থেকে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে রোগী দেখা বন্ধ করুন। বড়লোকদের আপনারা চিকিৎসা পরিষেবা বজায় রেখেছেন, আর অসহায়, হতদরিদ্র, গরিব মানুষজন টাকার অভাবে বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যালে চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর ডাক্তারেরা কর্মবিরতি ও পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে জন সাধারণতকে বাধ্য করছে সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে। সাধারণ মানুষের ওপর ভর করে বিচার চাইছেন বকলেম। জনসাধারণ ছাড়া যে কোনো গতি নেই তা অন্তত খেয়াল রেখে জনসাধারণ যাতে চিকিৎসা অঙ্গনে সুচিকিৎসা ও মর্যাদা তা খেয়াল রাখা বাঞ্ছনীয়। একবার জনরোষের মুখে পড়লে সরকার থেকে শুরু করে সকলের আস্ফালন চিরতরে শেষ হবে।
মতামত লেখকের নিজস্ব
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct