আপনজন ডেস্ক: অসমে নাগরিকত্ব সমস্যা বহুদিনের। বিশেষ করে অনুপ্রবেশের অভিযোগ ঘিরে। এখনও বহু মানুষ নাগরিকত্বের গেরোয় বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। সেই সময় সুখবর বয়ে আনল সুপ্রিম কোর্ট। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত রাজীব গান্ধি আমলে হওয়া অসম চুক্তিকে মান্যতা দিয়ে নাগরিকত্ব আইন, ১৯৫৫-এর ধারা ৬এ কে সাংবিধানিক বলে ঘোষণা করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বিচারপতি সূর্য কান্ত, বিচারপতি এম এম সুন্দ্রেশ, বিচারপতি জে বি পারদিওয়ালা ও বিচারপতি মনোজ মিশ্রের বেঞ্চ এই রায় ঘোষণা করে। এই রায়ে বলা হয়েছে,
১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে যারা আসামে প্রবেশ করেছেন, তারা ভারতীয় নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তবে নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে যোগ্যতা প্রমাণ করতে হবে। আবেদনে ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের ৬–এ ধারা চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল। ধারাটি ১৯৮৫ সালে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ও আসামের আন্দোলনকারী রাজনৈতিক ও ছাত্রসংগঠনের মধ্যে স্বাক্ষরিত ‘অসম চুক্তি’র প্রধান ধারা।
প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ ৬–এ ধারা অক্ষুণ্ণ রেখেছেন।
সুপ্রিম কোর্ট ১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের মধ্যে আসামে আসা অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার ৬এ ধারার সাংবিধানিক বৈধতাকে মান্যতা দেয়। আসামে প্রবেশ ও নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কাট-অফ ডেট বহাল রাখে।
তবে পাঁচ সদস্যের বেঞ্চের মধ্যে মতবিরোধ ছিল। বিচারপতি জে বা পারদিওয়ালা বিপরীত মত পোষণ করেন। তিনি বলেন, ধারা ৬–এ ‘অসাংবিধানিক’।
প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় রায়ে বলেন, আসাম চুক্তি ছিল অবৈধ অভিবাসনের সমস্যার একটি রাজনৈতিক সমাধান। আর তার আইনি সমাধান সূত্র দেওয়া হয়েছিল ৬–এ ধারায়।
সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারপতির মতে, বিধানটি কার্যকর করার জন্য সংসদের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা রয়েছে। তাঁরা মনে করেন, ৬–এ ধারা স্থানীয় জনগণের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে সঙ্গে মানবিক উদ্বেগের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
সুপ্রিম কোর্টের অধিকাংশ বিচারপতি মনে করেন, ভারতের অনেক রাজ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে। তবে আসামকে পৃথকভাবে দেখার চেষ্টা যুক্তিসংগত। কারণ, আসামের স্থানীয় জনসংখ্যার মধ্যে অভিবাসীর সংখ্যা অন্যান্য সীমান্ত রাজ্যের তুলনায় বেশি। আসামে ৪০ লাখ অভিবাসী রয়েছে।
চারজন বিচারপতি বলেন, ১৯৭১ সালের ‘কাট-অফ’ তারিখটি যৌক্তিক ছিল। কারণ, এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুর দিন। প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় রায়ে আরও বলেন, একটি রাজ্যে বিভিন্ন জাতিগত গোষ্ঠীর উপস্থিতির অর্থ এই নয় যে সংবিধানের ২৯(১) অনুচ্ছেদ অনুসারে ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষার মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আবেদনকারীদের প্রমাণ করতে হবে, অন্য জাতিগোষ্ঠীর উপস্থিতির কারণে একটি জাতিগোষ্ঠী তাদের নিজস্ব ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করতে সক্ষম হচ্ছে না।
উল্লেখ্য, অসম চুক্তির বিরোধিতা করে মামলা করেছিল ২০১২ সালে আসামের নাগরিক সংগঠন আসাম সম্মিলিত মহাসংঘ। তার চরম বিরোধিতা করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের অসম শাখা ও সর্বভারতীয় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ। অসম জমিয়তের হয়ে আইনজীবী ছিলেন সলমান খুরশিদ। অপরদিকে সর্বভারতীয় জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন কপিল সিব্বাল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct