জাইদুল হক, আপনজন: রাজ্য বিধানসভার চতুর্থ সেশন চলে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যদিও মৌখিক প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষ দিন ছিল ২আগস্ট। তার মধ্যে অনেক জল গড়িয়েছে। দি অপরাজিতা ওম্যান অ্যান্ড চাইল্ড বিল, ২০২৪ পাশ হয় এই অধিবেশনে। তা নিয়ে বহু আলোচনা হয়। আর জি কর কাণ্ডে আবহে পাশ হওয়া এই অপরাজিতা বিলের বিশেষত্ব হল নয়া শাস্তির বিধান, যার মধ্যে অন্যতম হল: ধর্ষণে শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা অথবা মৃত্যু, গণধর্ষণের ক্ষেত্রে জরিমানা ও আমৃত্যু কারাদণ্ড ও মৃত্যু ইত্যাদি।
আরজি কর কাণ্ডের জেরে এই বিল পাশ করতে বাধ্য হয় শাসক দল। তবে, রাজ্যে আরও যেসব বিষয় বহুল চর্চিত তার মধ্যে অন্যতম হল কলকাতা হাইকোর্টোর রায়ে রাজ্যের ওবিসি শংসাপত্র বাতিল, কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী বিল প্রভৃতি। ওবিসি বাতিল নিয়ে আর ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে রাজ্য জুড়ে সংখ্যালঘুদের মধ্যে প্রতিবাদের ঢেউ চলছে অনেক আগে থেকেই। অথচ, এই দুটি প্রসঙ্গ নিয়ে রাজ্য িবধানসভায় কোনও আলোচনাই হয়নি। কলকাতা হাইকোর্টের পরামর্শ মতো রাজ্য বিধানসভায় ওবিসি বিল পাশ করানো নিয়ে কিংবা কেন্দ্রীয় সরকারের ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য শোনা যায়নি। এমনকী কোনও সংখ্যালঘু বিধায়ককেও ওবিসি বাতিল কিংবা ওয়াকফ সংশোধনী বিলের বিরোধিতা করে নিদেনপক্ষে মৌখিক প্রশ্নের কথা শোনা যায়নি। যদিও এই সব সংখ্যালঘু বিধায়ক বিধানসভার বাইরে এসে বিভিন্ন মিটিং, মিছিল, সেমিনারে গিয়ে যথেচ্ছ উদ্বেগ প্রকাশ করে চলেছেন। তারা হয়তো ভুলে গেছিলেন বিধানসভায় রাজ্যের সংখ্যালঘুদের ওবিসি আর ওয়াকফ নিয়ে চিন্তার কথা তুলে ধরতে। তািই বিধানসভা অধিবেশনের পরে প্রতিবাদের ঢাল হিসেবে সোশ্যাল মিডিয়াকেও ব্যবহার করে চলেছেন।
তবে, সংখ্যালঘু বিধায়করা ওবিসি বিল বাতিল কিংবা ওয়াকফ সংশোধনী বিল নিয়ে বিধানসভায় কোনও আলোচনার প্রয়োজন মনে না করলেও অন্য নানা জরুরি বিষয়ে কিন্তু কতিপয় সংখ্যালঘু বিধাযক বিধানসভায় সরব হয়েছেন। তার মধ্যে অনেকেই নিজের বিধানসভা ক্ষেত্রের উন্নয়নের বিষয় যেমন তুলেছেন তেমনি রাজ্যের সামগ্রিক বিষয়ের ক্ষেত্রও তুলে ধরেছেন। এমনকী কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের সংখ্যালঘু উন্নয়নে কোনও বৈসম্য করছে কিনা তার জন্য তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। ৩১ জুলাই, ২০২৩ সওকাত মোল্লা জানতে চান, বিগত পাঁচ বছরের তুলনায় ২০২১-২২ ও ২০২২-২৩ বর্ষে রাজ্যে সংখ্যালঘু উন্নয়নে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ কত পরিমাণ হ্রাস বা বৃদ্ধি পেয়েছে।
ঐতিহ্য বা ঐতিহাসিক বিষয় নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। রফিকুল ইসলাম মণ্ডল জানতে চান, কলকাতা শহরে ঐতিহ্যবাহী ট্রামকে বাঁচাতে সরকার কি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। উপেক্ষিত স্বাধীনতা সংগ্রামী তিতুমিরের জন্মভিটে উত্তর ২৪ পরগনার নারকেলবেড়িয়ার কথা প্রথম কিস্তি তার উল্লেখ করলেও পুনরায় জানাই, ২০২৪ সালের ১ আগস্ট বিধানসভায় মৌখিক উত্তরের জন্য প্রশ্নাবলি তুলে ধরেন নওশাদ সিদ্দিকী। তিনি বিধানসভায় জানতে চান, ঐতিহাসিক নারকেলবেড়িয়া গ্রামকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার কোনও পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা। আর থাকলে তা কবে নাগাদ বাস্তবায়িত হবে বলে আশা করা যায়।
শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এ বিষয়ে গত ২ আগস্ট নওশাদ সিদ্দিকী বিধানসভায় জানতে চান, ২০২৪-এর ৩১ মের মধ্যে রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকদের নাম নথিভুক্তকরণের সংখ্যা কত? (জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান সহ)। ওইদিন কেতুগ্রামের বিধায়ক সেখ শাহনওয়াজ জানতে চান, পূর্ব বর্ধমান জেলায় বর্তমানে অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও সহায়িকার শূন্যপদের সংখ্যা কত, আর তার পূরণ করার পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা। ৩০ জুলাই, ২০২৪ সেখ শাহনওয়াজ জানতে চান, সর্বশিক্ষা অভিযান খাতে কেন্দ্রীয় সরকার গত দু বছরে রাজ্যের জন্য কত অর্থ মঞ্জুর করেছে।
লালগোলার বিধায়ক মুহাম্মদ আলি মূলত লালগোলা নিয়ে প্রশ্ন করেন, গত পাঁচ বছরে লালগোলার ব্লকে স্বাক্ষরতার অগ্রগতি কীরূপ। ওই সময়কালে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক (মাদ্রাসা বোর্ড সহ) পরীক্ষার্থীদের সংখ্যার কী পরিবর্তন হয়েছে।
২৬ জুলাই, সেখ শাহনওয়াজ জানতে চান, ২০১৯ সালে আইসিডিএস প্রকল্প রূপায়ণে কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রদত্ত অর্থের সরকারি অনুপাত কত ছিল।
৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ভগবানগোলার প্রয়াত বিধায়ক ইদ্রিশ আলি জানতে চেয়েছিলেন, ২০২৩ এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত মুর্শিদাবাদ জেলায় ডিগ্রি কলেজের সংখ্যা কত। ভগবানগোলা বিধানসভা এলাকায় কোনও ডিগ্রি কলেজ স্থাপনের পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা। থাকলে তা তা গায়ত্রী দেবীর নামে করা সম্ভব কিনা।
৩০ নভেম্বর ২০২৩ নওশাদ সিদ্দিকী জানতে চান, অলচিকি লিপির উন্নতি সাধনের জন্য রাজ্য সরকার কি কি পদক্ষেপ করেছে। সাঁওতালি ভাষায় পৃথক শিক্ষা বোর্ড গঠনের কোনও পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা। ১ আগস্ট ২০২৩ ডেবরার বিধায়ক হুমায়ুন কবির জানতে চান, ২০২৩-২৪-এর নতুন শিক্ষা নীতি রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগু করা হয়েছে কিনা। হলে বিস্তারিত চাই। রফিকুল ইসলাম মণ্ডল জানতে চান, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কতজন স্যাক্ট শিক্ষক আছেন। তাদের সাম্মানিক ভাতা বাবদ সরকারের কত টাকা খরচ হয়।
৩ আগস্ট সওকাত মোল্লা জানতে চান, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং দক্ষতা উন্নয়ন দফতর কারিগরি শিক্ষার উন্নয়নে কি কি পরিকল্পনা নিয়েছে। ৪ আগস্ট ২০২৩ নওশাদ সিদ্দিকী জানতে চান, ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনায় অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের সংখ্যা কত, কর্মী ও সহায়িকার সংখ্যা কত।
২৮ আগস্ট ইটাহারের বিধায়ক মোশারফ হোসেন জানতে চান, মালদা মেডিকেল কলেজে হার্টের জন্য নতুন কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে কিনা। নেওয়া হলে তার বিস্তারিত চাই।
২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ সওকাত মোল্লা জানতে চান, রাজ্যে কতগুলি সরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল উচ্চমাধ্যমিকের অনুমতি পেয়েছে। কেতুগ্রামের বিধায়ক সেখ শাহনওয়াজ জানতে চান, বিগত পাঁচ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার সর্বশিক্ষা মিশনে রাজ্যকে কত অর্থ বরাদ্দ করেছে।
১৩ জুন ২০২২ হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক তজমুল হোসেন জানতে চান, মালদায় আইসিডিএসের সংখ্যা কত। তার মানোন্নয়নে কি কি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
১৪ জুন, ২০২২ রফিকুল ইসলাম মণ্ডল জানতে চান, রাজ্যে ২০২১-২২ বর্ষের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত কতগুলি সরকারি, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ও সরকার অনুমোদিত বেসরকারি কলেজ চালু রয়েছে।
২১ জুন, ২০২২ নওশাদ সিদ্দিকী জানতে চান, ২০১১ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২২-এর ৩১ মার্চ পর্যন্ত রাজ্যে চালু হওয়া উর্দু, হিন্দি, সাঁওতালি ভাষা মাধ্যমের স্কুল সংখ্যা কত। এই সব স্কুলে ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক ও কর্মীর সংখ্যা কত। তজমুল হোসেন জানতে চান, মালদা জেলার কলেজগুলির উন্নয়নে সরকার কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে। ২৩ জুন, ২০২২ মুহাম্মদ আলি জানতে চান লালগোলায় কোনও নতুন আইটিআই খোলার পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা। ২২ মার্চ ২০২২ প্রয়াত ইদ্রিশ আলি জানতে চেয়েছিলেন, মুর্শিদাবাদ জেলায় ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট বালিকা বিদ্যালয়ের সংখ্যা কত।
মুহাম্মদ আলি জানতে চান, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক সহ অন্যন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার উত্তরপত্রে নামের পরিবর্তে শুধু রোল নম্বর বা কোড ব্যবহার করা যায় কিনা। ২০২২ সালের ১৪ মার্চ, প্রয়াত ইদ্রিশ আলি জানতে চেয়েছিলেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত কন্যাশ্রী প্রকল্পে প্রাপকদের সংখ্যা কত। (ক্রমশ...)
পড়ুন: মুসলিম বিধায়কদের সিংহভাগই বিধানসভায় নীরব কেন?/১
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct