মোঃ সাহিদুল ইসলাম, আপনজন: কলকাতার RG Kar মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের নৃশংস পৈশাচিক ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ তথা গোটা ভারত বর্ষের বুকে বিরলতম ঘটনা। এই ঘটনার নেপথ্যে গত দুই মাস থেকে বিভিন্ন তথ্য ও ষড়যন্ত্র এবং প্রশাসন ব্যবস্থার উদাসীনতার প্রতিচ্ছবি প্রতিদিন ভেসে বেড়াচ্ছে। বিভিন্ন স্লোগান থেকে শুরু করে পদত্যাগের দাবিতে দিন-রাত্রি জনগণ ও ডাক্তারবাবুদের প্রতিবাদ সভা চলতেই আছে। মহিলাদের উদ্যোগে রাত্রি দখলের দাওয়াতে গোটা বাংলা শোক পালন থেকে শুরু করে ডাক্তার বাবুদের গণ ইস্তফা বিচাররের দাবিটা খুব ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
কর্মস্থলে একজন কর্মীর ধর্ষণ ও খুন! শুনেই ছোট থেকে বৃদ্ধ, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলকেই অন্তর থেকে ঘৃণার দীর্ঘশ্বাস ফেলতে বাধ্য করেছে। নারী নিরাপত্তা কর্মস্থলে খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন খাড়া করে দেয়। একদিকে যেমন মর্মান্তিক ঘটনাটি খুব লজ্জাকর, তেমনি বাংলার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও প্রশাসন ব্যবস্থা বিশ্ব দরবারে নগ্ন হয়ে গেল।
এ পর্যন্ত আমাদের সামনে ঘটনার চারটে দিক খুব স্পষ্ট: খুন, ধর্ষণ , স্বাস্থ্য দুর্নীতি এবং পুলিশ-প্রশাসনিক ব্যর্থতা। খুনের কারণ কি ? কোথায় খুন হয়েছে ? খুনের সঙ্গে কে বা কারা যুক্ত? খুন আর দুর্নীতির কি গভীর সম্পর্ক ? তদন্তকারী এজেন্সী (CBI ) এগুলির মধ্যে সম্পর্ক-রহস্য উন্মোচন ও উদ্ঘাটনে নিরন্তর প্রচেষ্টায় যুক্ত।
পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থার চূড়ান্ত ব্যর্থতা সেটা নিয়েও সন্দেহ কেটে গেছে জন সাধারণের যখন পুলিশের উচ্চ পদস্থ অফিসার সহ অনেক কে ট্রান্সফার হয়ে অন্য জায়গায় যেতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে প্রমান লোপাটের কলাকৌশল সামনে এসেছে যার জন্যে R G হাপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ ও টালা থানার আধিকারিক গ্রেফতার হয়ে যান। রাজ্য-প্রশাসন- পুলিসি ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস হারিয়ে কলকাতা উচ্চ আদালত কেন্দ্রীয় তদন্ত এজেন্সী কে দায়িত্ব সপেঁ দিয়েছে। তার কিছু দিন পর দেশের সর্বোচ্চ আদালত স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে নিজের এক্তিয়ারে নিয়ে তত্বাবধান করছেন স্বয়ং দেশের প্রধান বিচারপতি। কয়েকদিন আগে রাজ্যের কিছু প্রসিদ্ধ দৈনিক পত্রিকাতে এরকমও তথ্য আসলো যে ১৫ লক্ষ টাকা দাবি করা হয় পরীক্ষায় পাশ করানোর জন্যে। এটাও সামনে আসলো, মৃতা নাকি ঔষুধের কালোবাজারি সমন্ধে জেনে গেছিলো।
এই ঘটনা থেকে তিনটে জিনিস খুব স্পষ্টভাবে উল্লেখযোগ্য। ক) রাজ্য স্তরে আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলি যেমন সরকারি শাসন ব্যবস্থা, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, পুলিশ-প্রশাসন ইত্যাদি ব্যর্থ হচ্ছে। খ) সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে অসহায় অবস্থা যেখানে পরিকাঠামো ও অবকাঠামোর অভাবের ফলে কতই না প্রাণ যাচ্ছে। গ ) অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠান যেমন গণ আন্দোলন, নাগরিক মঞ্চ, মিছিল ইত্যাদি সক্রিয় ভূমিকা এই নারকীয় ঘটনার মোড় কে ঘুরিয়ে বিচারের দাবিকে ত্বরান্বিত করতে সাহায্য করেছে। অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলি জেগে না উঠলে সত্যি কি আমরা প্রকৃত বিচারের দিশায় পোঁছাতে পারতাম না?
বঙ্গে যদিও কর্মস্থলে অসুরক্ষিত ও আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলির চূড়ান্ত ব্যার্থতা খুব নিন্দনীয় এবং দুর্ভাগ্যজনক, তবুও এই প্রসঙ্গে মহামতি গোখলের উদ্ধৃতি টি খুব প্রাসঙ্গিক মনে হলো: বলেছিলেন, ‘আজকে যেটা বাংলা ভাবে, সেটা গোটা ভারতবর্ষ কালকে ভাবে’।
উল্লেখ্য রাজ্যের সাধারণ জনগণ সহ মহিলাগণ রাত্রি দখল ডাক দিয়ে রাজ্যের প্রতিটি কোনায় কোনায় হাতে মশাল নিয়ে প্রতিবাদ জানাই। এরকম গণ আন্দোলন ও প্রতিবাদ সভা খুব কমই দেখা গেছে, যখন দেশের অন্য রাজ্যেও একই ধরণের অপরাধ মূলক ঘটনা ঘটেছিলো, হাত্রাস হোক বা উন্নাও হোক। যাইহোক, এই নারকীয় পৈশাচিক ঘটনা র পরিপেক্ষিতে, আমাদের মনে কিছু প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে: প্রথমত, সরকার ও সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার যে ব্যর্থতা, দুর্বলতা, অনিয়ম, অসুরক্ষিত যার কারণে পশ্চিমবঙ্গ আজ বিশ্ব দরবারে কালিমালিপ্ত, সরকার কি শিক্ষা নেবে? দ্বিতীয়ত, আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলি ব্যর্থ কেন কুকীর্তি ও দুর্নীতি নিরাময়ে? তৃতীয়ত, অনানুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলি গুলি কি আনুষ্ঠানিক প্রতিষ্ঠানগুলির থেকে বেশি গুরত্বপূর্ণ? চতুর্থত, ক্ষমতালোভী অনৈতিক স্বৈরাচারী সরকারিত্ব কি সকল স্তরে বিরাজমান যার ফলফরূপ আজকের সমাজ ব্যবস্থায় বর্বরতা বর্তমান?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct