আপনজন ডেস্ক: আফ্রিকান নেশনস কাপের বাছাইপর্বে লিবিয়া-নাইজেরিয়া ফিরতি লেগের ম্যাচটি হওয়ার কথা আগামীকাল বাংলাদেশ সময় রাত একটায়। প্রথম লেগে লিবিয়ার বিপক্ষে ১-০ গোলে জেতার পাশাপাশি বাছাইপর্বে নিজেদের গ্রুপে শীর্ষেও নাইজেরিয়া। তাই ফুরফুরে মেজাজেই লিবিয়ার উদ্দেশে উড়াল দিয়েছিল দলটি। কিন্তু কে জানত, বিভীষিকাময় এক সময় অপেক্ষা করছিল নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের সামনে! জানা গেছে, লিবিয়ার আল আবরাক বিমানবন্দরে খাবার ও পানি ছাড়া ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে আটকা পড়ে আছেন নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়েরা। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ, সেটা নাইজেরিয়ার অধিনায়ক উইলিয়াম ট্রোস্ট-একংয়ের ‘এক্স’ অ্যাকাউন্টে তাকালেই বোঝা যায়। পরিস্থিতির বর্ণনা করে একাধিক পোস্টের পাশাপাশি বেশ কিছু ছবিও শেয়ার করেছেন তিনি। সেই ছবিতে দেখা যায়, ভিক্টর বোনাফাইস, কালভিন বাসেইসহ নাইজেরিয়ার কয়েকজন খেলোয়াড় ক্লান্তিতে ভেঙে পড়েছেন। তাঁদের কেউ চেয়ারে বসে ঘুমাচ্ছেন, কেউ লম্বা চেয়ারে শুয়ে পড়েছেন, আবার কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে বিধ্বস্ত চোখে চেয়ে আছেন। হয়তো পুরো ঘটনা হজম করতেই বেগ পেতে হচ্ছিল তাঁদের। এ ঘটনার জেরে পরবর্তীতে ম্যাচ বাতিল করে নাইজেরিয়া। লেস্টার সিটির উইলফ্রেদ এনদিদি তো দাবি করেছেন, তাঁদের ‘জিম্মি’ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলো কীভাবে? এর আগে নাইজেরিয়ার মাঠে ১-০ গোলে ম্যাচ হারের পর লিবিয়া দাবি করেছিল, ম্যাচজুড়ে তাদের সঙ্গে বাজে আচরণ করা হয়েছে। এখন সেই ঘটনার প্রতিশোধে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলো কি না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কেউ কেউ।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নাইজেরিয়া অবশ্য ম্যাচ বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে। নাইজেরিয়া ফুটবল ফেডারেশনের (এনএফএফ) ডিরেক্টর অব কমিউনিকেশনস আদেমোলা ওলাজিরে বলেছেন, ‘খেলোয়াড়েরা ম্যাচে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং এনএফএফ কর্তারা তাদের নাইজেরিয়ায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।’ পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে কনফেডারেশন অব আফ্রিকান ফুটবলকে (সিএএফ) আনুষ্ঠানিক অভিযোগও দিয়েছে এনএফএফ। জানা গেছে, নাইজেরিয়ার খেলোয়াড়দের নিয়ে চার্টার্ড ফ্লাইটটি নামার কথা ছিল বেনগাজিতে। কিন্তু আকাশে থাকতে বিমানকে লিবিয়া সরকার আল-আবরাক বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দেয়। সেখানে খেলোয়াড়দের বিমানবন্দর ত্যাগ করতেও বাধা দেওয়া হয়। সড়কপথে আল-আবরাক থেকে বেনগাজিতে যেতে এমনিতেই সময় লাগে ৪ ঘণ্টার মতো, সেখানে নাইজেরিয়ার স্কোয়াড আটকে আছে ১৬ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে।
একাধিক পোস্টে পরিস্থিতি বর্ণনা করেছেন ট্রোস্ট-একং। ৬ ঘণ্টা আগে দেওয়া প্রথম পোস্টে নাইজেরিয়ান অধিনায়ক লিখেছেন, ‘আমরা নিজেদের সম্মান করি এবং প্রতিপক্ষকেও সম্মান করি, যখন তারা নাইজেরিয়ায় অতিথি হিসেবে আসে। ভুল হতেই পারে, কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ফুটবলের কোনো সম্পর্ক নেই।’ একই সময়ে পৃথক পোস্টে ট্রোস্ট-একং আরও লিখেছেন, ‘এ ধরনের আচরণের পর তারা পয়েন্ট পাক। আমরা সড়কপথে ভ্রমণ মেনে নেব না, এমনকি নিরাপত্তার স্বার্থেও এটা ঠিক নয়। আমরা ভাবতেও পারছি না, কেমন হোটেল কিংবা খাবার দেওয়া হবে যদি আমরা যাত্রা অব্যাহত রাখি।’ পরবর্তী সময়ে আরেকটি পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘নামার সময় আমাদের বিমান দিক পাল্টানোয় ১২ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে লিবিয়ার পরিত্যক্ত বিমানবন্দরে (আটকে আছি)। লিবিয়া সরকার কোনো কারণ ছাড়াই বেনগাজিতে আমাদের অনুমোদিত অবতরণ বাতিল করেছে। তারা এয়ারপোর্টের গেটে তালা দিয়ে রেখেছে এবং আমাদের ফোনেও কোনো সংযোগ নেই। এমনকি খাবার কিংবা পানি নেই। মানসিকভাবে নাজেহাল করতে এটা করা হচ্ছে।’ এরপর সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আবারও একাধিক টুইট করে ট্রোস্ট-একং জানান, তাঁরা তখনো বিমানবন্দরে আটকে আছেন এবং কখন সেখান থেকে বের হতে পারবেন, সেটাও জানেন না। এ সময় তিনি লিখেছেন, ‘এ মুহূর্তে আমি কাঁদার বদলে হাসার চেষ্টা করছি।’ পরবর্তীকালে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ছয়টার দিকে নাইজেরিয়ান অধিনায়ক জানান, সংকটের সমাধান হয়েছে। তাঁরা কিছুক্ষণের মধ্যে নাইজেরিয়ার উদ্দেশে রওনা দেবেন বলে আশা করছেন। এনদিদি ইনস্টাগ্রাম স্টোরিতে লিখেছেন, ‘এটা ফুটবল নয়, খুবই বিব্রতকর। একটি জাতীয় দলের কাছে জিম্মি, লজ্জা।’ বোনাফাইস তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘খাবার ছাড়া, ওয়াই–ফাই ছাড়া এবং ঘুমানোর কোনো জায়গা ছাড়া বিমানবন্দরে প্রায় ১৩ ঘণ্টা ধরে আছি। আফ্রিকা আমরা ভালো কিছু করতে পারি।’ স্কোয়াডে না থাকা নাইজেরিয়ান তারকা ভিক্টর ওসিমেনও নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে, ‘লিবিয়া এয়ারপোর্টে গতকাল রাতে আমার ভাই এবং কোচরা যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে, তা নিয়ে আমি হতাশ। এমন কাজ স্পোর্টম্যানশিপের সঙ্গে যায় না। দলের পাশে আছি এবং আমি জানি যে বাধাই আসুক, তারা শক্ত থাকবে। আমি সিএএফকে হস্তক্ষেপের আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রথম লেগের পর লিবিয়া অভিযোগ করে জানায়, নাইজেরিয়া ভ্রমণে বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়েছে তাদের। লিবিয়ার অধিনায়ক ফয়সাল আল-বাদরি দাবি করেছেন, এনএফএফ তাঁদের নির্বিঘ্নে চলাচল করতে দেয়নি। আল-বাদরি বলেন, ‘আমরা সকাল ছয়টায় হোটেল ত্যাগ করি এবং বিমান উড়াল দেয় ৯টায়। ফ্লাইটে আমাদের চার ঘণ্টা লাগে। লিবিয়ার সময় অনুযায়ী আমরা নাইজেরিয়ায় পৌঁছাই বেলা একটায়।’
আল-বাদরি আরও বলেছেন, ‘এক ঘণ্টা ধরে বিমানে আমাদের লাগেজ চেক করা হয়। আমাদের এক শহর থেকে অন্য শহরে যেতে তিন ঘণ্টা বিলম্ব হয়, যদিও আমরা প্রাইভেট বিমানে করে গিয়েছিলাম। আর আমরা যে শহরে খেলতে চেয়েছিলাম, তার পাশেই বিমানবন্দর ছিল।’ তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এনএফএফের সহকারী পরিচালক এমানুয়েল আয়ানবুনমি। উল্টো তিনি লিবিয়ার ফেডারেশনকে ঠিকঠাক তথ্য না দেওয়ার জন্য এবং সাহায্য না করার জন্য দায়ী করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct