এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: মাদ্রাসা সার্ভিসের গ্রুপ ডি পদে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ফের স্থগিতাদেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট ৷ নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনিয়ম এবং ডিভিশন বেঞ্চের রায়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যতার অভিযোগ তুলে হাইকোর্টে দায়ের হওয়া মামলার শুনানিতে বিচারপতি পার্থসারথি সেন ওই নির্দেশ দিয়েছেন৷ সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সাত নম্বর কোর্টে শুনানির শেষে বিচারপতি পার্থসারথি সেন বলেন, পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখের নোটিশ অনুসারে ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বা পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়া করা যাবে না। ১৪ বছর পর সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া মাদ্রাসা সার্ভিসের 1st SLST গ্রুপ ডি পদের মেইন পরীক্ষার ফলাফলে চূড়ান্ত অস্বচ্ছতা রয়েছে বলে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন মামলাকারী আব্দুল লতিফ, মোহাম্মদ হাবিল, মুহাম্মদ হাবিব মণ্ডল সহ প্রায় ৬০জন। পৃথক দুটি মামলা একত্রীকরণ করে শুনানি হয়। মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন সৌম্য মজুমদার এবং গোলাম মহিউদ্দিন। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের তরফে আইনজীবী ছিলেন কমলেশ ভট্টাচার্য এবং প্রসেনজিৎ মুখার্জি ৷
আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী সৌম্য মজুমদার বলেন, ডিভিশন বেঞ্চ ২০২০ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি তার আদেশে পশ্চিমবঙ্গ মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে 1st SLST (NT) নিয়ে আর লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখের উদ্ধৃত নোটিশটি মাননীয় ডিভিশন বেঞ্চের আদেশের চেতনার পরিপন্থী এবং এটি স্থগিত করা দরকার।
যদিও মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের আইনজীবী রিট আবেদনকারীরা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। তাই মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের ৫ আগস্ট, ২০২৪ তারিখের উল্লিখিত বিজ্ঞপ্তিটিকে চ্যালেঞ্জ করার কোনও অধিকার নেই। তাই তারা ডিভিশন বেঞ্চের দেওয়া আদেশের সুবিধা নিতে পারবেন না। ভট্টাচার্য আরও বলেন, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চ ওই পরীক্ষার ফলাফল তিন মাসের মধ্য প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয় মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনকে। তারপর লিখিত পরীক্ষা ইতিমধ্যে পরিচালিত হয়েছে এবং সফল প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ইতিমধ্যে মেধা তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ, আবেদনটি প্রত্যাখ্যান করা যেত। কিন্তু লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের কথা বিবেচনা করে এবং কর্তৃপক্ষের অসতর্ক আচরণের কারণে তাদের ভাগ্য এখনও অন্ধকারে ও অনিশ্চিত। আমরা মনে করি যে একক বেঞ্চ বা ডিভিশন বেঞ্চের রায়কে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে। নির্দেশনাটিতে স্পষ্ট এবং সহজ ছিল যে লিখিত পরীক্ষা পরিচালনার পরে উত্তরপত্রগুলি মূল্যায়ন করতে হবে এবং সফল প্রার্থীদের নির্দেশ করে প্যানেল প্রস্তুত করতে হবে। উপরোক্ত আদেশটি পর্যালোচনা করার পরে, আদালতের কাছে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত মামলাটি নিষ্পত্তির সময় ডিভিশন বেঞ্চ কমিশনকে পূর্বোক্ত নিয়োগ পরীক্ষার ক্ষেত্রে আরও লিখিত পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়নি। যদিও ইতিমধ্যে ১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পুনরায় লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং সফলদের তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এরপর বিচারপতি নির্দেশ দেন, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২৪ পর্যন্ত বা পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত কোনও নিয়োগ প্রক্রিয়া করা যাবে না। উল্লেখ্য, মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের কাউন্সেলিংয়ের কথা ছিল ২২ থেকে ২৪ অক্টোবর ৷
এ ব্যাপারে আবেদনকারীদের পক্ষে আইনজীবী গোলাম মহিউদ্দিন ‘আপনজন’কে বলেছেন, কোর্টের রায়কে অমান্য করেছে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন। রায় উপেক্ষা করে পুনরায় পরীক্ষা নিয়েছে।
অবেদনকারীদের অন্যতম মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা মুহা. হাবিল ‘আপনজন’কে বলেন, মাদ্রাসার সার্ভিস কমিশনের বিরুদ্ধে চাকরির বয়স থাকা পর্যন্ত আইনি লড়াই লড়ে যাব। মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন স্পষ্ট ভাবে রেজাল্টও প্রকাশ করেনি। সবকিছুই অন্ধকারে রাখা হয়েছে ৷ আগেরবার মেইন পরীক্ষা দিয়েছিলাম ৷ পাস করা সম্ভাবনা ছিল ১০০ শতাংশ বলে তার দাবি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct