আয়াজ আহমদ মাঝারভূঁইয়া, আপনজন: পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা ও ঝাড়খণ্ড প্রমুখ রাজ্যে বাঙালি বসবাস করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাঙালির সাড়াজাগানো নেতৃত্ব তেমন দেখা যায়নি। বলা চলে, পশ্চিমবঙ্গের কতক বাঙালি নেতা ছাড়া বিশাল ভারতের অন্য জায়গায় প্রথিতযশা বাঙালি নেতা বের হননি। ধর্মে দুটকরো ভারতীয় বাঙালির ঘরের নেতা ছাড়া অন্য ভাষাভাষী বা জাতির নেতা বাঙালির ভবিষ্যৎ ও এলাকাবাসীর উন্নয়ন নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় কৈ? নিজের ভাববেন না বাঙালির ভাববেন! জাত্যাভিমান, ভাষাপ্রেম , দেশপ্রেম, বংশটান , জাতিপ্রেম বা জাতিসত্তার চেতনা রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে থাকে। অতীতে ছিলো বর্তমানেও পাওয়া যায়। অপ্রিয় হলেও সত্য, “ বর্তমান বাঙালি নেতাদের মধ্যে জাতিসত্তার চেতনা ও জাতি প্রেম শূন্যের কোঠায়। অবশ্য আসামে এনআরসি’র শেষ দিনগুলোতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালি-জাতিসত্তার পরিচয় দেন। তবে লোকদেখানো বা রাজনৈতিক মুনাফা লাভে বাঙালি জাতিসত্ত্বার প্রমাণ দাঁড় করানো নেহাত স্বার্থ ছাড়া আর কিছু নয়। এতে বাঙালিয়ানা, জাতিপ্রেম মাথা উঁচু অপ্রতিরোধ্য চীনের প্রাচীর রূপে চিত্রিত হবে না। ধর্মের উর্ধ্বে বাঙালি পরিচয় এক ও অভিন্ন হবে না। বাঙালির কোমর শক্ত হবে না। বাঙালি রাজ্যগুলো , অবাঙালি অধ্যুষিত রাজ্যের বাঙালি এলাকার নজরকাড়া আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন আসবে না। বাঙালি ধর্মই খুঁজবে। জাতি ও ভাষা ভুলে যাবে। বাঙালি হিন্দু, বাঙালি মুসলমান রূপে ফেটে পড়ে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নেবে। নিজের মধ্যে মারামারি করবে। বাস্তবে করছেও। যেমন: আসাম, ত্রিপুরায় এমনকি পশ্চিমবঙ্গেও। যদিও আসাম, ত্রিপুরার তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির মধ্যে ধর্মাশ্রিত আচরণ বা হিন্দু-মুসলমান করা সামান্য মেলে। ইদানিং বাঙালিরা নিজেদের মধ্যে ধর্মকেন্দ্রীক চেতনার জলাতঙ্কে ভোগছেন। যা বাঙালির ভবিষ্যৎ ও জাতিসত্তার জন্য সুখকর নয়। মুসলিম আমল থেকে ভারত স্বাধীন হওয়া পর্যন্ত বাঙালির বিভিন্ন অবদান কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। বাঙালির মেধা, প্রতিবাদী মনোভাব, দেশপ্রেম, ভাষাপ্রেম, জাতিপ্রেম অন্যান্য জাতির চেয়ে বেশি। বিজ্ঞান, সাহিত্যে , চিকিৎসায় , খেলাধুলায় , দেশ ও সমাজ গঠনে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার। বাঙালির কাছে অন্যান্য জাতি শিশু মাত্র। মায়ের কোলে সদ্যজাত। বাঙালি অতীত এরকমই ছিলো। বাঙালি জাতি কি পারে না? বাঙালি সব পারে, সব জানে। চালকের অভাবে বাঙালি তাঁর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করতে পারেনি। গণনেতা বা শক্তিশালী বাঙালির নেতৃত্বাধীন বাঙালি মহা-ঐক্য গঠন করা হলে বাঙালি বিশ্ব শাসন করতে পারতো। যাই হোক, খন্ডিত ভারতে স্বাধীনতার প্রায় ৮০ বছর পর আজ বাঙালি মহা-ঐক্য বা বাঙালিয়ানার কথা মনে আসার কারণ — শ্রদ্ধেয় বাঙালি শ্রদ্ধা হারিয়েছে। বিপ্লবী বাঙালি বিপ্লব ভুলে গেছে। জ্ঞানী বাঙালি জাতিসত্ত্বার চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হয়ে ধর্মে টুকরো হয়ে অজ্ঞানী সেজেছে। বিশ্বে বা ভারতে বাঙালির কথা চলে না। প্রশংসিত বাঙালির প্রশংসা আজ হয় না। ছন্দের যাদুকর, সুকান্ত, জীবনানন্দ, জসীমউদ্দীন, নজরুল ও রবিঠাকুর অস্তমিত। তবে কি বাঙালির ভবিষ্যৎ অন্ধকার? না আঁধারে আলো জ্বালাবে কেউ? বেড়ে ওঠবে বিপ্লবী বাঙালির ভারতীয় সংস্করণ? তৈরি হবে বাঙালি জাতিসত্ত্বার ভিত্তিতে রাজনীতি করা প্রজন্ম? যে প্রজন্ম ভারত সহ পুরো বিশ্বের বাঙালিদের নিয়ে রাজনীতি করবে! ধর্মকে রাজনীতিতে আনবে না। কে হিন্দু কে মুসলিম সে কথা আর কেউ বলবে না? বলবে আমরা বাঙালি, ‘দুর্গম গিরি কান্তার-মরু দুস্তর পারাবার হেলঙ্ঘিতে হবে রাত্রি নিশীথে যাত্রীরা হুশিয়ার!’ আরো বলবে, ‘বাঙালির প্রাণ, বাঙালির মন, বাঙালির ঘরে যত ভাই বোন– এক হউক, এক হউক, এক হউক হে ভগবান।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct