আপনজন ডেস্ক: ‘আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন।’জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই লাইন কি পড়েছেন লিওনেল মেসি? না পড়ার সম্ভাবনা শতভাগ। পড়া থাকলে হয়তো মায়ামির সৈকতে দাঁড়িয়ে আটলান্টিকের বিস্তৃত জলরাশিতে তাকিয়ে আনমনে লাইনটি আওড়াতেন। খেলতে খেলতে মেসির ক্লান্তিতে ভেঙে পড়ার দৃশ্য তো নতুন নয়।গত বছরের সেপ্টেম্বরে ফেরা যাক। সেদিন এমএলএসে টরন্টোর বিপক্ষে ম্যাচে প্রথমার্ধে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। এমনকি মাঠ ছাড়ার আগেই স্বভাববিরুদ্ধভাবে পায়ের শিনগার্ডও (পায়ে থাকা সুরক্ষা গার্ড) খুলে ফেলেন। ক্লান্তিতে বিধ্বস্ত মেসির দিকে তখন যেন তাকানো যাচ্ছিল না। সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছিল বেঞ্চে বসা মেসির ক্লান্ত মুখের একটি ছবি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই ছবি ভাইরালও হয়েছিল।এটুকু তবু মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু কোপা আমেরিকা ফাইনালে যা ঘটল, তা হয়তো কারও প্রত্যাশায় ছিল না। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন মেসি। এমন চোট মোটেই অপ্রত্যাশিত ছিল না। কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে মেসি একরকম চোটের সঙ্গেই ঘর করছেন। কিন্তু সেদিন মেসিকে বেঞ্চে বসে শিশুর মতো কাঁদতে দেখা গেল। এভাবে ভেঙে পড়তে দেখা তাঁর ভক্ত-সমর্থকদের তো বটেই, সাধারণ দর্শকদের জন্যও ছিল হৃদয় ভাঙার মতো দৃশ্য।গত জুলাইয়ে কোপা আমেরিকার অথচ ফুটবলে মেসির আর কোনো অপূর্ণতা নেই। অধরা নেই কোনো শিরোপাও, জিতেছেন সম্ভাব্য সবকিছু। কাতার বিশ্বকাপের পর অবসরে চলে গেলেও মেসির অর্জনের ভান্ডার থেকে একটি শিশিরকণাও কেউ কেড়ে নিতে পারত না। মেসি নিজেই বলেছেন, ফুটবলে তাঁর আর চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। তবু কেন সেই কান্না!কে জানে, সেদিন হারের শঙ্কায়, চোটের বেদনায়, নাকি বিদায়ের চোখরাঙানিতে অঝোরে কেঁদেছিলেন মেসি! কান্নার পেছনে কারণটা যা–ই হোক, এই ঘটনা মেসির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন ভাবনাকে উসকে দিয়েছে। বিশেষ করে ২০২৬ বিশ্বকাপে মেসিকে দেখার যে প্রত্যাশা, সেটি জিইয়ে রাখতেই তাঁকে নিয়ে এত ভাবনা। মেসির চোটের ইতিহাস অন্তত তেমন কিছুই বলছে। ফুটবলবিষয়ক ওয়েবসাইট ট্রান্সফারমার্কেট জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত মেসি চোটে পড়েছেন ছয়বার। এর মধ্যে কোপার ফাইনালে চোটে পড়ে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ছিলেন মাঠের বাইরে। সর্বশেষ এই চোটে সব মিলিয়ে মেসি মাঠের বাইরে ছিলেন ৫৮ দিন। তবে সব মিলিয়ে ক্যারিয়ারে এর চেয়ে বেশি সময়ের জন্য মেসি মাঠের বাইরে ছিলেন মাত্র দুবার। বয়স ও ফিটনেস বিবেচনায় নিলে মেসির সাম্প্রতিক এই চোট দুশ্চিন্তায় ফেলার মতোই।চোট কাটিয়ে সেপ্টেম্বরে মেসি মাঠে ফিরলেও সব যে ঠিক হয়ে গেছে, তা নয়। তাঁর চোটের সাম্প্রতিক ইতিহাস বলছে, যেকোনো সময় আবারও একই বিপদ হাজির হতে পারে। ফলে মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টিনা ও ইন্টার মায়ামি—উভয় দলকেই থাকতে হচ্ছে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায়।আর্জেন্টিনা দলের কথাই ধরা যাক। কোপার ফাইনালের পর মেসিকে ছাড়াই খেলতে হয়েছে কোচ লিওনেল স্কালোনিকে। সেপ্টেম্বরে আন্তর্জাতিক বিরতিতে আর্জেন্টিনার ম্যাচে ছিলেন না মেসি। তবে এটাই হয়তো এখন আর্জেন্টিনা দলের জন্য ‘নিও নরমাল’ হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ দলের প্রয়োজন এবং অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে খেলাতে হবে অধিনায়ককে। মেসির চোট, ক্লান্তি ও বিশ্রাম—এ বিষয়গুলো মাথায় রেখেই কাজটি করতে হবে স্কালোনিকে। এ ক্ষেত্রে শুধু মেসির জায়গায় আরেকজনকে খেলানো নয়, কৌশল ও স্টাইলেও নতুনত্ব আনতে হবে আর্জেন্টাইন এই কোচকে। সেটি কেমন হতে পারে, সেই ইঙ্গিত সেপ্টেম্বরের ম্যাচ দুটিতেই দেখা গেছে। স্কালোনির অধীন আর্জেন্টিনা দলে মেসিকে দেখা গেছে মাঠজুড়ে খেলতে। কখনো মাঝমাঠে খেলা তৈরি করেছেন আবার কখনো ডান প্রান্তে সরে গিয়ে আক্রমণে উঠেছেন। পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়েই খেলেছেন মেসি।তবে কলম্বিয়া ও চিলির বিপক্ষে এই স্বাধীনতা উপভোগ করার সুযোগ ছিল না স্কালোনির।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct