এম মেহেদী সানি, গোবরডাঙ্গা, আপনজন: একই স্থানে ঈদের নামাজ, দুর্গাপুজোর মণ্ডপ, বড়দিনের মেলা নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত হয় দীর্ঘ বছর ধরে ৷ সম্প্রীতির এই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত দেখা যাবে গোবরডাঙ্গা শহরে ৷ উত্তর চব্বিশ পরগণা জেলার ঐতিহ্যবাহী শহর গোবরডাঙ্গার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গড়পাড়া এলাকায় ১৮৮৫ সালে তৈরি হয়েছিল একটি মসজিদ। সেই মসজিদের প্রাঙ্গণ বলতে সামনেই রয়েছে ছোট মাঠ, সেখানেই ঈদের সময়ে নামাজ আদায় করেন স্থানীয় মুসলিমরা। সেই প্রাঙ্গণেই আবার প্রতি বছর তৈরি হয় দুর্গাপুজোর মণ্ডপ। পুজো আসতেই দর্শনার্থীদের ভিড়ে জমজমাট থাকে মসজিদ প্রাঙ্গণ। মসজিদের পিছনেই রয়েছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী মানুষের বাড়ি, সেখানে আবার প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ধুমধাম করে পালন করা হয় বড়োদিন। সেদিনেও মেলা বসে ওই মসজিদ প্রাঙ্গণেই। সব মিলিয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এ এক বেনজির মেলবন্ধন।
মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থিত ইয়ংস্টার ক্লাব, ক্লাবটি ১৯৬৫ সালে তৈরি হয়, পুজোর আয়োজনে করে তাঁরাই। ক্লাবের সভাপতি সুজয় গাইন বলেন, দীর্ঘ ৪৯ বছর ধরে আমরা এখানে পুজো করছি, এখানে আমরা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসাথেই থাকি, আমাদের পুজো কমিটির মধ্যে মুসলিম ভাইয়েরা থাকেন আবার ঈদে তেমনই আমরা ওঁদের সহযোগিতা করি। অন্যদিকে এই পুজো কমিটির সহ-সভাপতি হলেন একজন খ্রিস্টান তার নাম সুনীল জন ৷' ২০১৭ সালে ঈদের নামাজের কারণে মন্ডপ খুলে স্থানটিতে নামাজের জন্য জায়গা করে দিয়েছিল পূজো কমিটি ৷
এ বছরও দেখা গেল একেবারে ব্যতিক্রমী চিত্র, স্থানভাবে মসজিদের বাইরে মসজিদেরই ছাউনির নিচে রাখা হয়েছে পুজো প্যান্ডেলের বিদ্যুতের সরঞ্জাম, প্যান্ডেল তৈরির বেশ কিছু সামগ্রী ৷ তাতে অবশ্য আপত্তি নেই মসজিদ কমিটির ৷
পুজো কমিটিও স্বতঃস্ফূর্তভাবে পুজোর কটা দিন মসজিদের সৌন্দর্যায়নে আলো দিয়ে সজ্জিত করে দিয়েছেন ৷ একদিকে যখন মন্ডপে পুজোর কাজ সারছেন পুরোহিত, অন্যদিকে তখন মসজিদে এবাদাতে মশগুল মুসলিম ধর্মপ্রাণ মানুষেরা ৷ এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির বহন করে চলেছে গোবরডাঙ্গা। গোবরডাঙ্গা পৌরসভার চেয়ারম্যান শংকর দত্ত এ প্রসঙ্গে জানান "গোবরডাঙ্গা সম্প্রীতির জায়গা, আর গড়পাড়া এলাকার এমনই চিত্র দীর্ঘদিন ধরে আমরা দেখে আসছি, হিন্দু- মুসলমান পাশাপাশি বসবাস করছেন ৷ হিন্দুরা পুজো করছেন, মুসলিমরা মসজিদে নামাজ পড়ছেন এটাই গোবরডাঙ্গার সংস্কৃতি, আগামী দিনেও এই সম্প্রতি বজায় থাকবে" বলে আশা প্রকাশ করেন শংকর বাবু। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় ১৯৬০ এর দশকে সাম্প্রদায়িক অশান্তির কারণে বহু মুসলিম পরিবার এখান থেকে চলে যায়। থেকে গিয়েছিল হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার, দীর্ঘ দিন সংস্কারের অভাবে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে ওই মসজিদটি। পরবর্তীতে মসজিদ সংস্কারের কাজে হাত লাগিয়েছিলেন হিন্দুরাও। গড়পাড়া জামে মসজিদের মোয়াজ্জিন মোহাম্মদ সুরাদ বলেন আমরা গড়পাড়াবাসী সর্বধর্ম সমন্বয়ে মিলেমিশে বসবাস করি, আমাদের কোনো সমস্যা নেই, আমরা একে অপরের বিপদে আপদে পাশে দাঁড়ায়, ভালোই আছি আমরা। সব মিলিয়ে এই গোবরডাঙ্গা শহর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় রাজ্যে নজির সৃষ্টি করল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct