নিজস্ব প্রতিবেদক, ফুরফুরা, আপনজন: ওয়াকফ সম্পত্তিগুলি হাতিয়ে সেগুলি ধ্বংস করে দেওয়াই হল কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধান কেন্দ্রের উদ্দেশ্য। ওয়াকফ সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে কেন্দ্রীয় সরকার নানান ধরণের ফন্দিফিকির করছে। সেই জন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সারা দেশে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও রেল বাদ দিয়ে ওয়াকফ বোর্ডের হাতে সবথেকে বেশি বিষয় সম্পত্তি আছে। সেইগুলি হাতিয়ে কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেওয়ার চক্রান্ত করছে এই সরকার। মঙ্গলবার ফুরফুরা শরীফ আহলে সুন্নাতুল জামাত (এ)- এর নবম বার্ষিকী অধিবেশনে এই কথা বলেন সংগঠনের কর্ণধার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী। তিনি ওয়াকফ সম্পত্তি হাতানোর চেষ্টার পেছনে আরো একটি কারণ আছে বলে মনে করেন। তাঁর মতে, এই দেশ থেকে মুসলমানদের তাড়িয়ে দিলে তারা যাতে এই দেশে প্রায় হাজার বছর আগে থেকে তৈরি হওয়া মসজিদ, দরগা, মাদ্রাসাগুলির ওপর কোন দাবী না করতে পারে। কেননা এগুলির বেশিরভাগই ওয়াকফ সম্পত্তির ওপর নির্মিত। সম্পত্তিগুলি হাতিয়ে নিয়ে এগুলি ধ্বংস করে দেওয়াই হল সরকারের মূল উদ্দেশ্য। তিনি বলেন, ওয়াকফ সম্পত্তি নিয়ে এত দুর্নীতি হয়েছে যে বৃহত্তর মুসলমান সমাজ এর সুফল পাচ্ছে না। এই প্রসঙ্গে তিনি তুলনা টানেন আদিবাসীদের জল-জঙ্গল-জমিনের হাতানোর সঙ্গে। আব্বাস সিদ্দিকী এদিন বলেন, ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অথচ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় যারা আছেন, তারা ধর্ম নিয়েই মাতামাতি করছেন। অথচ তাদের দেখা দরকার জনগণের শিক্ষা, কর্মসংস্থান, বাসস্থান, স্বাস্থ্য পরিষেবার মতন মৌলিক চাহিদাগুলি। আসলে ধর্মের নামে বিভাজন করে মানুষের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা করাতেই তাদের ফায়দা। পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী এদিন ২০১৬ সালে পথচলা শুরু করে এ যাবৎ কিভাবে সংগঠন কাজ করছে এবং আগামীতে কিভাবে কাজ করবে তা তিনি ব্যাখ্যা করেন। রাজ্যের প্রায় ৭ হাজার গ্রামে ফুরফুরা শরীফ আহলে সুন্নাতুল জামাত সংগঠনের কাজ চলছে এবং আগামীতে ২০ হাজারেরও বেশি গ্রামে এই সংগঠনকে পৌঁছানোর লক্ষ্যের কথা তিনি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, সংগঠনকে আরো বেশি মানব সেবার কাজ করতে হবে। হিন্দু, মুসলিম, দলিত আদিবাসী সকল মানুষের পাশে থাকার কথাও তিনি বলেন।বর্তমান সময়ে রাজ্যে যে সকল অন্যায় সংঘটিত হচ্ছে তার বিরুদ্ধেও তিনি প্রতিবাদে সরব হন। আরজি কর ও সম্প্রতি কুলতলী ধর্ষণের বিরুদ্ধেও তিনি গর্জে উঠেন ও সুবিচারের দাবি তোলেন। এছাড়াও ওবিসি সংরক্ষণের বিষয়ে রাজ্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন।এদিন ছোট হুজুর পীর কেবলা (রহ:)-এর ওফাত দিবসও পালিত হয়। আব্বাস সিদ্দিকী তাঁর বক্তব্যে ছোট হুজুর (রহ:)-এর ঐতিহ্যপূর্ণ ইতিহাসও তুলে ধরেন।পীরজাদা বাইজিদ আমিন সংগঠনের শুরু থেকে সমস্ত ইতিহাস সংক্ষেপে তুলে ধরেন। তিনি সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে আরো সক্রিয় ভাবে কাজ করার পরামর্শ দেন ।
এর আগে, আজ সকালে কেরাত পাঠ, নাতে রাসুল পাঠ এবং দাদা হুজুর রহমাতুল্লাহ আলাইহির শানেও একটি গজল পাঠ করার মাধ্যমে অধিবেশন শুরু হয়। সংগঠনের কর্ণধার পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের রাজ্য কমিটির সহ সম্পাদক পীরজাদা বাইজিদ আমিন, হাফেজ নাজিম উদ্দিন, মুফতি নিজাম উদ্দিন, মনজুর হোসেন, আবু সালেহ মুসা প্রমুখ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct