আপনজন ডেস্ক: হামাস এবং অন্যান্য ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ইসরায়েলের নজিরবিহীন আগ্রাসনের প্রত্যুত্তর দিতে শুরু করার এক বছর পর মধ্যপ্রাচ্য একটি বিস্তৃত এবং সম্ভাব্য ভয়ঙ্কর যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ঠিক এক বছর আগে, ২০২৩ মালের ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলে হামাসের পাল্টা হামলা এবং তেল আবিবের আক্রমণের ঘটনাগুলি ছিল এই অঞ্চলের অশান্ত ইতিহাসের আরও একটি বিপর্যয়কর মুহূর্ত, যা বিভিন্ন আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সাথে তুলনীয়।
পশ্চিমা জোট অনেকেই ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিষ্কার ও বিপজ্জনক পটভূমিটিকে ধামাচাপা দিয়ে উল্টো, আধুনিক ইতিহাসে কিছু উদাহরণ যোগ্য বর্বরতার মতো ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়াকে আকৃষ্ট করার জন্য ফিলিস্তিনি পক্ষকে দোষারোপ করে থাকে। তারা সহিংসতা ছড়ানোর জন্য ফিলিস্তিনকে দায়ী করে থাকে।
কিন্তু পশ্চিমারা ভুলে যায় যে, ফিলিস্তিনি জনগণের দুর্ভোগ এবং নিপিড়ন ৭ অক্টোবরের বহু আগে থেকে এবং ১৯৪৮ সালের নাকবা এবং ঐতিহাসিক প্যালেস্টাইনের পূর্বে জিয়নবাদী তথা ইহুদীবাদী উপনিবেশের মধ্যে গ্রোথিত। কয়েক দশক ধরে ইসরায়েলিরা ফিলিস্তিনি জনগণকে অকাতরে হত্যা এবং লুটতরাজ করে এসেছে। গত বছরের অক্টোবরে যা ঘটেছে, তা একটি জনসংখ্যা থেকে আগ্নেয়গিরি সমান ক্ষোভের বিস্ফোরণ, যেখানে একটি ক্রূর আগ্রাসন ও অবরোধ তাদেরকে কোনঠাসা করে ফেলেছিল।
এই অঞ্চলে সীমাহীন আগ্রাসন চালানোর অজুহাত হিসাবে ৭ অক্টোবরের হামলাকে ব্যবহার করে ইসরায়েল যেকোনও যুদ্ধের সমস্ত নৃশসংতার সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করেছে। অবশ্য, এমন নয় যে এটি পূর্বের সঙ্ঘাতগুলোতে এটি যুদ্ধের আইনকে খুব একটা মান্য করেছে।
ইসরায়েল এই পর্যন্ত প্রায় ৪২হাজার লোককে হত্যা করে গাজাকে একটি কবরস্থানে পরিণত করেছে। এটি এই ক্ষুদ্র ভূখ-ে সহিংসতার মধ্যযুগীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে হাসপাতাল, স্কুল এবং শরণার্থী শিবিরগুলি, সমস্তই রক্ত এবং ধ্বংসস্তূপের এক ভয়াবহ মিশ্রণে পরিণত করেছে।
যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলের কথিত লক্ষ্য ছিল হামাসকে নির্মূল এবং ইসরায়েলি জিম্মিদের প্রত্যাবাসন করা। এই উভয় ক্ষেত্রেই বিশ্বের অন্যতম সেরা সশস্ত্র সামরিক বাহিনীটি, যা যুক্তরাষ্ট্র এবং অনেক ইউরোপীয় রাষ্ট্র দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত, চরম ব্যর্থ হয়েছে।
গাজার পাশাপাশি, তেল আবিব হিজবুল্লাহকে ধ্বংস করার জন্য লেবাননের দিকেও দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। কিন্তু লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে মারাত্মকভাবে আঘাত করা হলেও এর যোদ্ধারা ইসরায়েলি হানাদারদের প্রতিহত করে চলেছে। লেবানন জানিয়েছে, গত বছর ইসরায়েলি সহিংসতায় দুই হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এদিকে, পশ্চিমারা মানবাধিকার রক্ষার জন্য অগ্রণী হতে ভালোবাসে, কিন্তু সম্ভবত এই দেশগুলির কাছে গাজা এবং লেবাননের জনগণ হল উনমানুষ। জাতিসঙ্ঘের কর্মকর্তা ফ্রান্সেস্কা আলবানিজের পর্যবেক্ষণ অনুসারে, ইসরায়েলের দৃষ্টিতে ফিলিস্তিন ও লেবাননে ‘কোনো বেসামরিক নাগরিক নেই’। ৭ অক্টোবর-পরবর্তী দৃশ্যপট ইসরায়েলি বর্বরতা তুলে ধরার পাশাপাশি, পশ্চিমা জোটের ভ-ামি এবং মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর অসারতাকেও উন্মোচিত করেছে। ইহুদিবাদী রাষ্ট্র ইসরাইল তার গণহত্যামূলক প্রচারণা চালিয়ে গেলেও, ইসরাইল ও তার সমর্থকদের বিরুদ্ধে কোনো অর্থবহ পদক্ষেপ নিতে অস্বীকার করেছে তথাকথিত ইসলামিক ‘ভ্রাতৃ সমাজ’। এই পরিস্থিতিতে, ইসরায়েলি আগ্রাসন এবং পশ্চিমা তুষ্টির কল্যাণে মধ্যপ্রাচ্য একটি বিস্তৃত যুদ্ধের দাবানল দ্বারা গ্রাস হতে পারে, বিশেষ করে যদি তেল আবিব ইরানে আঘাত করে। আরও বিপর্যকর যুদ্ধের সম্ভবনা ফিলিস্তিনি স্বাধীনতার স্বপ্নে গ্রহণ লাগিয়ে তাদের ভাগ্য গ্রাস করে নিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct