নায়ীমুল হক, বসিরহাট, আপনজন: অপার করুনার আধার আল্লাহতায়ালার সান্নিধ্যে চলে গেলেন উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের বিশিষ্ট সমাজ কর্মী ও আলেমে দ্বীন আব্দুল মাতিন। শনিবার সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ বসিরহাট বদরতলা হাসপাতালে ইন্তেকাল হয় তাঁর। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন।
আব্দুল মাতিন এর পিতা মাওলানা ফজলুর রহমান গাজী ছিলেন এলাকার বিশিষ্ট একজন আলেম, সুবক্তা ও সমাজকর্মী এবং সুবিখ্যাত মাওলানা বাগের পীর সাহেব আল্লামা রুহুল আমিন সাহেবের ভ্রাতুষ্পুত্র। দীর্ঘকাল বসিরহাট আমিনিয়া মাদ্রাসা হোস্টেলের সুপারিনটেনডেন্ট ছিলেন এবং তাঁর শিক্ষকতায় বহু আলেম ছাত্র আজ দেশ-বিদেশে দ্বীনের কাজে রত আছেন। তাঁর পাঁচ পুত্র ও সাত কন্যার সংসারে আব্দুল মাতিন ছিলেন তৃতীয় সন্তান। মৃত্যুকালে আব্দুল মাতিন এর বয়স হয়েছিল মাত্র ৫৫। রেখে গেলেন স্ত্রী সহ তিন পুত্র ও এক কন্যা।চিরকাল সমাজে স্রোতের বিপক্ষে থাকা মানুষ ছিলেন তিনি। অসামাজিক যেকোনো কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেন তিনি। দল-মত এসব বাদ-বিচার তিনি কখনোই করতেন না। সকলেই যখন স্রোতের পক্ষে গা ভাসিয়ে ক্ষুদ্র স্বার্থ আগলাতে ব্যস্ত, এতটুকু ত্যাগ করতে রাজি নন, ঠিক সেই সময়ে সর্বস্ব উজাড় করে কাজ করেছেন সমাজ গঠনের জন্য। পারতপক্ষে কখনো তিনি নিজের স্বার্থের কথা ভাবতেন না, ভাবতেন না নিজের শরীর স্বাস্থ্যের কথাও। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সম্ভ্রান্ত পরিবারের একজন প্রকৃত ‘দায়ী ইলাল্লাহ’ ছিলেন তিনি। শিক্ষিত, আল্লাহওয়ালা ঘরের সন্তান হওয়ার সুবাদে বড় একটা হৃদয়ের অধিকারীও হয়েছিলেন। পড়াশোনা করা রীতিমতো সংস্কৃতিবান একজন আলেম ছিলেন তিনি। কিন্তু এসব কখনো তিনি কাউকে বুঝতে দিতে নারাজ ছিলেন।
সমাজ গঠনের স্বার্থে নিজের অসুবিধেকে কখনো প্রাধান্য দেন নি, পরোয়াও করতেন না তিনি। যে কারো সাথে তিনি একবার মিশেছেন, অথচ তাঁর মধ্যে খোলামেলা, প্রশস্ত একটি বিবেকের সন্ধান পাননি এরকম একজনকেও পাওয়া যাবে না।
ছাত্র-ছাত্রীসহ সমাজের বিভিন্ন মানুষ তাঁর কাছে নানা রকম পরামর্শ ও সাহায্য-সহযোগিতার আবেদন নিয়ে আসতেন। অকৃপণভাবে তাদের সঙ্গ দিতেন তিনি, সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতেন সদা সর্বদা। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে কাজে লাগাতেন তাঁর ছোট্ট বইয়ের দোকানটি। দিন দিন এতে তাঁর ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে, তবু তিনি এই কাজ কখনো ব্যাহত হতে দেননি। সত্য সঠিক খবর পৌঁছে দিতে নিজে কাঁধে করে দৈনিক কলম, সাপ্তাহিক গতি, সাপ্তাহিক মিজান, মাসিক আপনজন পত্রিকা সহ বিভিন্ন পুস্তিকা, পত্র-পত্রিকা ও বই পত্র কোথায় না পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। এছাড়া বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলেম মাওলানা মুহিউদ্দিন খান সম্পাদিত উচ্চমানের ইসলামি ম্যাগাজিন ‘মাসিক মদীনা’ আমদানি করে তিনি রাজ্যের ইসলাম মনস্ক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন। এছাড়া, বাংলাদেশের বিভিন্ন ইসলামি পত্রপত্রিকা এ রাজ্যে তিনি পাঠকের হাতে তুলে দিতেন। সেই লক্ষ্যেই তিনি বসিরহাটের ত্রিমোহনীতে প্রিয় বইঘর নামে পুস্তক বিপণি খুলেছিলেন। সেই পত্রপত্রিকা প্রিয় আবদুল মাতিন আমাদের মধ্যে নেই। তাঁর মৃত্যু সংবাদে রাজ্যের সংখ্যালঘু মহল ব্যথিত ও শোকাহত। তার মতো সরল, সাদাসিধে, খুশি মনের, বড় হৃদয়ের মানুষ বিদায় নেওয়ায় তার রুহের মাগফিরাত করেন তারা। শনিবারই তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। বহু মুসল্লি তার নামাজ এ জানাজায় শরিক হন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct