আপনজন ডেস্ক: মহারাষ্ট্রের লাতুরে ‘ইসলাম বিদ্বেষের’ শিকার হলেন এক পরিবার। সামান্য বচসাকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫ কিমি ধাওয়া করে বাইককে পিষে দেয় এক চার চাকার গাড়ি। তার ফলে বাইকে থাকা পরিবারের সদস্যদের এক শিশু কন্যা ও তার মায়ের মৃত্যু হলেও বরাত জোরে বেঁচে গেছেন শিশু পুত্র ও তার বাবা। তারা এখন গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এ ব্যাপারে ইংরেজি দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাাশিত খবরে বলা হয়েছে, এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে গত ২৯ সেপ্টেম্বর মহারাষ্ট্রের লাতুরে। খুন হওয়া এক মুসলিম মহিলা ও তাঁর তিন বছরের মেয়ের পরিবার এই ঘটনাকে ‘ইসলাম বিদ্বেষ বা ইসলামফোবিয়া বলে দাবি করেছে। পরিবারের দাবি, পুলিশ প্রাথমিকভাবে মামলাটিকে নিয়মিত ট্র্যাফিক ঘটনা হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিল। পরে, সমাজকর্মী ও আইনজীবীদের হস্তক্ষেপের পরে লাতুর পুলিশ পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে।
ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, গাড়ি চালানো নিয়ে বচসার জেরে পাঁচ কিলোমিটার বাইকে করে একটি পরিবারকে ধাওয়া করে পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয় পাঁচ দুষ্কৃতী। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, বাইক আরোহী সাদিক শেখ (৩৫) ও তাঁর ছয় বছরের ছেলে গুরুতর জখম অবস্থায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। সাদিক তাদের বলেছেন, চার চাকার প্রাইভেট কারে থাকা আরোহীরা আমাদের ধর্ম তুলে গালিগালাজ করছিল। তারা বাইকে ধাক্কা দেওয়ার আগে বলেছিল, ‘মুসলমানদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার।’
লাতুরের পুলিশ সুপার সোমে মুন্ধে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আমরা পাঁচজনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ এনেছি। এটি একটি সড়ক দুর্ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় লাতুর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে আউসায় বোনের সঙ্গে দেখা করে ফিরছিলেন সাদিক শেখ ও তাঁর স্ত্রী ইকরা (২৪), তাঁদের ছয় বছরের ছেলে আহাদ ও তিন বছরের মেয়ে নাদিয়া।
লাতুর পুলিশের কাছে দায়ের করা এফআইআর অনুসারে, রাত ৮টা নাগাদ আউসার উপকণ্ঠে একটি গাড়ি আচমকা সাদিক শেখের বাইকের সামনে এসে পড়ে। কিছুক্ষণ তর্কাতর্কির পর তিনি বাইক নিয়ে এগোতে থাকেন। তবে তারা প্রায় ৫ কিলোমিটার ধাওয়া করে ওই গাড়িটি বুধাদা গ্রামের কাছে বাইককে ধাক্কা মারে।
দুর্ঘটনার ফলে ইকরা ও নাদিয়ার মৃত্যু হয় এবং শেখ ও আহাদকে লাতুরের একটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে পরিবারের পক্ষ থেকে ধারণা করা হয়েছিল এটি নিছকই দুর্ঘটনা। কিন্তু পরদিন জ্ঞান ফেরার পর শেখ তার বড় ভাইকে জানান, ধর্মের কারণে তাদের টার্গেট করা হয়েছে।
গাড়ির আরোহীদের সঙ্গে বচসার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, তার স্ত্রী বোরকা পরা থাকায় তারা ধর্মীয় গালাগাল দিচ্ছিল। তারা বলছিল, মুসলমানদের উচিত শিক্ষা দেওয়া দরকার। পরিবারের আইনজীবী আলতাফ কাজি বলেন, স্ত্রীর জোরাজুরিতে তিনি ওই স্থান থেকে সরে যান, কিন্তু প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পথ তাঁদের পিছু নেয় ওই ব্যক্তিরা।
এফআইআরে অবশ্য ধর্মীয় গালিগালাজের কোনও উল্লেখ নেই। দিগম্ভর পান্ডোলে, কৃষ্ণা ওয়াঘ, বাসবরাজ ধোত্রে, মনোজ মানে এবং মুদামে নামে পাঁচ অভিযুক্তকে ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই গ্রেফতার করে পুলিশ। হাসপাতালে অভিযুক্তদের একজনের ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি স্বীকার করেছেন, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবারটির উপর গাড়ি চালিয়ে দিয়েছিলেন।
ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘ওই ব্যক্তির সঙ্গে আমাদের ঝগড়া হয় এবং সে চলে যাওয়ার পর আমাদের গাড়ির চালক দিগম্বর পান্ডোলে তার পিছু নেয় ও ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে চাপা দেয়।’
পরিবার এবং তাদের আইনজীবীরা অভিযোগ করেছেন যে প্রাথমিকভাবে পুলিশ গুরুতর অভিযোগ দায়ের করতে অনিচ্ছুক ছিল এবং ঘটনাটিকে একটি সাধারণ দুর্ঘটনা হিসাবে শ্রেণিবদ্ধ করার চেষ্টা করছিল। বিশেষ করে সেদিন উদগিরে সিনিয়র মন্ত্রীর বৈঠক থাকায় পুলিশ মামলা করতে দ্বিধা করছিল। পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে টার্গেট করা হয়েছে বলে দাবি করা সত্ত্বেও পুলিশ তা খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ। ধৃতদের তিন দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এই ঘটনাকে ‘ঘৃণ্য অপরাধ’ হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্র জানিয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct