সারিউল ইসলাম, মুর্শিদাবাদ, আপনজন: মুর্শিদাবাদের আজিমগঞ্জ থেকে কাশিমবাজার এবং কৃষ্ণনগর থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত যাত্রীবাহী ট্রেনের উদ্বোধন হয় বুধবার। সেদিন নশিপুর রেল ব্রিজের উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবার সূচনা হয়। তবে এতদিনে প্রথমবারের মতো এক মঞ্চে তৃণমূল সাংসদ ও বিজেপি বিধায়ককে দেখা গেল। এর আগে একাধিক সরকারি অনুষ্ঠানে তৃণমূল সাংসদ উপস্থিত থাকলে বিজেপি বিধায়ক উপস্থিত না, বা বিজেপি বিধায়ক উপস্থিত থাকলে তৃণমূল সাংসদ উপস্থিত থাকতেন না। তবে কৃতিত্বের লড়াই সব দ্বন্দ্ব ভুলিয়ে বুধবার একমঞ্চে হাজির করালো দু’জনকেই। মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান এবং মুর্শিদাবাদ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক গৌরী শঙ্কর ঘোষ বুধবার আজিমগঞ্জ জংশন রেলস্টেশনে এক মঞ্চে নতুন ট্রেনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন। একসঙ্গে পতাকা দেখিয়ে ট্রেনের সূচনাও করেন তারা। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তারা ভিন্ন দলের হলেও এটি যেহেতু সরকারি অনুষ্ঠান, তাই তারা উপস্থিত হয়েছেন বলে উভয়ের দাবি। তবে প্রথমবারের মতো তাদের এক মঞ্চে দেখে অবাক হয়েছেন অনেকেই।
গত সোমবার রেলের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর থেকে কৃতিত্ব নিয়ে বাকযুদ্ধ চালাচ্ছিল প্রত্যেকেই। প্রত্যেকেই দাবি করছিল ‘তার’ জন্য নসিপুর আজিমগঞ্জ রেল ব্রীজের উপর দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা শুরু হয়েছে। তবে কৃতিত্বের অন্ধকারে কোথায় হারিয়ে গেল পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো। হারিয়ে গেল অসংখ্য গোপন লড়াই। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালে ১৯৪৫ সালে মালগাড়ি সহ কাঠের রেলব্রিজটি ভেঙে পড়েছিল ভাগীরথী নদীতে। তারপর থেকেই রেল ব্রিজের দাবি ওঠে। কয়েক দশক ধরে চিঠিপত্র আদান-প্রদান করে মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতি সহ অন্যান্য সংগঠনগুলি। তবে ৯০ এর দশকে সক্রিয়ভাবে আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন সেনাকর্মী তথা মুর্শিদাবাদ শহরের এক বাসিন্দা আব্দুর রউফ খান বা এ.আর খান। ১৯৯১ সাল থেকে নশিপুর রেল ব্রিজের আন্দোলন শুরু করেন তিনি। শুরুতেই নারকেলের দড়ি দিয়ে ভাগীরথীর গভীরতা মেপেছিলেন। সেই ঘটনার সাক্ষী ছিলেন লালবাগের এক চিত্র সাংবাদিক। তিনিই ফ্রেমবন্দি করেছিলেন নারকেল দড়ি দিয়ে ভাগীরথীর গভীরতা মাপার দৃশ্য। পরবর্তীতে একের পর এক আন্দোলন, রেল অবরোধ হতে থাকে। অবশেষে ২০০১ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নসিপুর আজিমগঞ্জ রেল ব্রিজ তৈরির অনুমোদন করে এক লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেন। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে লালু প্রসাদ যাদব রেলমন্ত্রী হয়ে কাজের শিলান্যাস করেন। ধীরে ধীরে সময় পার হয়, ২০১০ সালে ব্রীজের কাজ শেষ হয়। তবে বাকি অংশের কাজ বাধাপ্রাপ্ত হয় জমি জটের কারণে। আবারো শুরু হয় একাধিক আন্দোলন। মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন হোক বা মুর্শিদাবাদ রেলযাত্রী নাগরিক মঞ্চ অথবা কখনো মুর্শিদাবাদ ব্যবসায়ী সমিতি, সকলেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন নসিপুর রেল ব্রিজের বাকি কাজ দ্রুত শেষ করে ট্রেন চালুর দাবিতে। সংসদে সোচ্চার হয়েছিলেন আবু তাহের খান। মুর্শিদাবাদ বিধানসভার বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ রেলমন্ত্রীকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছেন। ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রিজের কাজ শেষে কমিশন অব রেলওয়ে সেফটি অনুমোদন দেয়। ২ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কৃষ্ণনগর থেকে ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন নসিপুর আজিমগঞ্জ রেলসেতুর। অবশেষে ৪ অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু হবে আজিমগঞ্জ থেকে কাশিমবাজার এবং কৃষ্ণনগর থেকে আজিমগঞ্জ পর্যন্ত। এই কাজের কৃতিত্ব কার, তা নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct