সঞ্জীব মল্লিক, বাঁকুড়া, আপনজন: শিক্ষকের অভাবে দফায় দফায় দুবার বন্ধ হয়েছে স্কুল, ফের ডেপুটেশনে থাকা শিক্ষক তুলে নেওয়ায় বন্ধের মুখে জুনিয়ার হাইস্কুল। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়ে করুণ মুখে পড়ুয়াদের মুখে “যেতে নাহি দিব”।
২০১৩ - ১৪ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে কোনোদিনই স্থায়ী শিক্ষক মেলেনি। জোড়াতালি দিয়ে চালানো স্কুল বিভিন্ন সময়ে দু’বার বন্ধ হয়েছে শিক্ষকের অভাবে। ফের দুই শিক্ষককে ডেপুটেশন থেকে তুলে নেওয়ায় বন্ধের মুখে বাঁকুড়ার খাগ জুনিয়ার হাইস্কুল। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখে পড়ে আজ করুণ মুখে আন্দোলনে নামল স্কুলের প্রায় ৯০ জন পড়ুয়া। তাদের মুখে এখন একটাই শ্লোগান “যেতে নাহি দিব”।
বাঁকুড়ার খাগ সহ আশপাশের গ্রামের অবস্থান একেবারে ঘন জঙ্গলের মাঝে। ২০১৩ - ১৪ সালের আগে খাগ সহ আশপাশের গ্রামের কেউ পড়াশোনা করতে চাইলে তাকে প্রায় ৮ থেকে ৯ কিলোমিটার জঙ্গলপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হত পাঁচাল হাইস্কুলে। হাতির আনাগোনার সেই রাস্তায় দুর্ঘটনার আশঙ্কার কথা চিন্তা করে খাগ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত হয় খাগ জুনিয়ার হাইস্কুল। কিন্তু স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেই তো আর হবে না। স্কুলটি কোনোদিনই পায়নি স্থায়ী শিক্ষক। ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত স্কুল চালানো হয় অবসরপ্রাপ্ত দুই অতিথি শিক্ষক দিয়ে। ২০১৮ সালে ওই শিক্ষকদের কাজের মেয়াদ শেষ হলে ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকে স্কুল। ফের ২০১৯ সালে স্থানীয় পাঁচাল হাইস্কুল থেকে ২ জন শিক্ষককে খাগ জুনিয়ার হাইস্কুলে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে স্কুল চালু করে শিক্ষা দফতর।
২০২১ সালে তাঁদের ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ফের বন্ধ হয়ে যায় স্কুলটি। ২০২১ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকার পর ২০২৩ সালে ফের ৩ জন শিক্ষককে ডেপুটেশনে পাঠিয়ে আবার স্কুলটি চালু করা হয়। তাঁদের মধ্যে ২ শিক্ষকের ডেপুটেশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আজই। ফলে আগামীকাল থেকে নিজের নিজের স্কুলে ফিরে যাবেন দুই শিক্ষক মলয় ঘাটি ও শান্তনু সিংহ মহাপাত্র। আপাতত স্কুলে ডেপুটেশনে একমাত্র থাকছেন সুদিন মন্ডল। কিন্তু ওই একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত ৯০ জন পড়ুয়ার কীভাবে পঠন পাঠন সম্ভব তা বুঝে উঠতে পারছেন না অভিভাবকরা। তবে কী আবার বন্ধ হয়ে যাবে স্কুলের পঠন পাঠন? ফের ছিনিমিনি খেলা হবে স্কুলের ৯০ জন পড়ুয়ার অনিশ্চিত ভবিষ্যত নিয়ে? সেই আশঙ্কাগুলিকে সঙ্গী করে আজ দুরুদুরু বুকে স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক চাই, আমরা পড়তে চাই পোস্টার লিখে স্কুলে এলো পড়ুয়ারা। একরাশ আশঙ্কা নিয়ে পড়ুয়াদের আন্দোলনে যোগ দিলেন অভিভাবকরাও। একরাশ মন খারাপকে সঙ্গী করে শিক্ষকদের দাবী এভাবে স্কুলটি শিক্ষকহীন হয়ে পড়লে এলাকায় ফের হু হু করে বাড়বে স্কুলছুটের সংখ্যা। পড়ুয়া, অভিভাবক ও শিক্ষকদের এই কাতর আর্তি কী পৌঁছাবে শিক্ষা দফতরের কর্তাদের কানে?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct