সারিউল ইসলাম ,মুর্শিদাবাদ, আপনজন: দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু হতে চলেছে নসিপুর রেলব্রিজের উপর দিয়ে। মুর্শিদাবাদ জেলাবাসীর স্বপ্ন পূরণের একধাপ।
দীর্ঘ আন্দোলনের পর ২০০১ সালের ২১শে জুলাই তৎকালীন সময়ের রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভাগীরথী নদীর উপর নসিপুর রেলব্রিজ নির্মানের অনুমোদন দেন। ২০০৪ সালের ৩০শে ডিসেম্বর কাজের শিলান্যাস করেন রেলমন্ত্রীর লালু প্রসাদ যাদব। ২০১০ সালে ব্রিজের কাজ শেষ হলেও জমি-জটে থমকে যায় বাকি কাজ। শেষ পর্যন্ত ২০২২ সালের ৩০ শে নভেম্বর আবারো শুরু হয় বাকি অংশের কাজ। কাজ শেষে এবছর ২রা মার্চ কৃষ্ণনগর থেকে নসিপুর রেল ব্রিজের ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তবে উদ্বোধনের পর মালগাড়ি চলাচল করলেও যাত্রীবাহী ট্রেন কবে চলবে সে প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছিল মানুষের মনে। অবশেষে যাত্রীবাহী ট্রেনের ঘোষণা করলো রেল। সোমবার দুপুরে রেলমন্ত্রী শিয়ালদহ থেকে আগামী ২রা অক্টোবর নতুন ট্রেনের উদ্বোধন করবেন, সেই কথা ছড়িয়ে পড়ে। আর তাতেই জেলা বাসি তো বটেই রাজ্যজুড়ে খুশির হাওয়া। পুজোর আগে শিয়ালদহ ডিভিশনের সঙ্গে হাওড়া ডিভিশনের মেলবন্ধনের নতুন রাস্তা খুলে যাওয়ায় খুশি সকলেই। এ বিষয়ে মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিক হোসেন বলেন, ‘খান সাহেবের দীর্ঘদিনের আন্দোলন আজ সফল হয়েছে। যাত্রীবাহী ট্রেন চলায় আমরা ভীষণ আনন্দিত। ’ মুর্শিদাবাদ হেরিটেজ এন্ড কালচারাল ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘জেলাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হতে চলেছে। আশা করছি এবছর রেকর্ড পরিমাণ পর্যটক উত্তরবঙ্গ থেকে মুর্শিদাবাদে আসবে। পর্যটন ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি বাণিজ্য ক্ষেত্রেও মুর্শিদাবাদ জেলার উন্নতি হবে এবার। আগামী দিনে হয়তো দিল্লিগামী ট্রেন এই পথেই চলবে। ’
সোমবার সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে রেল বোর্ড।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ৪ঠা অক্টোবর থেকে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন পরিষেবা চালু করবে পূর্ব রেল। প্রাথমিকভাবে দু’জোড়া আজিমগঞ্জ থেকে কাশিমবাজার পর্যন্ত মেমু প্যাসেঞ্জার ট্রেন এবং একজোড়া আজিমগঞ্জ থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার ট্রেন চালানো হবে। ওই বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, ৪ঠা অক্টোবর সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে বাণিজ্যিকভাবে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন আজিমগঞ্জ জংশন থেকে ছেড়ে যাবে। সকাল ৭ টা ৩২ মিনিটে মুর্শিদাবাদ জংশন ছাড়বে এবং কাশিমবাজার পৌঁছাবে সকাল ৭ টা ৪০ মিনিটে। সেই ট্রেনটি কাশিমবাজার ছেড়ে আজিমগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেবে সকাল ৮ টার সময়। মুর্শিদাবাদ জংশন স্টেশন ছাড়বে সকাল ৮ টা ৮ মিনিটে। আজিমগঞ্জ পৌঁছাবে ৮ টা ২০ মিনিটে।
কাশিমবাজারের উদ্দেশ্যে দ্বিতীয় ট্রেনটি রাত্রি ৯ টা ১০ মিনিটে আজিমগঞ্জ জংশন থেকে ছাড়বে। মুর্শিদাবাদ জংশন থেকে ছাড়বে ৯ টা ২২ মিনিটে, কাশিমবাজার পৌঁছাবে রাত্রি ৯ টা ৩০ মিনিটে। কাশিমবাজার থেকে আজিমগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে সেই ট্রেনটি রওনা হবে রাত্রি ৯ টা ৪৫ মিনিটে। মুর্শিদাবাদ জংশন ছাড়বে ৯ টা ৫৩ মিনিটে, আজিমগঞ্জ জংশন পৌঁছাবে রাত্রি ১০ টা ৫ মিনিটে।
আজিমগঞ্জ থেকে কৃষ্ণনগরের উদ্দেশ্যে যে ট্রেনটি চলবে সেটি আজিমগঞ্জ জংশন থেকে ছাড়বে বিকেল ৪ টে ৫ মিনিটে। মুর্শিদাবাদ জংশন ছাড়বে ৪ টে ১৬ মিনিটে, বহরমপুর কোর্ট স্টেশন ছাড়বে ৪ টে ৩৪ মিনিটে। ট্রেনটি কৃষ্ণনগর সিটি জংশন পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৬ টা ২৫ মিনিটে। কৃষ্ণনগর থেকে আজিমগঞ্জ এর উদ্দেশ্যে ট্রেনটি ছাড়বে সন্ধ্যা ৭ টা ৩০ মিনিটে। বহরমপুর ছাড়বে রাত ৯ টা ২২ মিনিটে, মুর্শিদাবাদ জংশন ছাড়বে ৯ টা ৪১ মিনিটে। ট্রেনটি আজিমগঞ্জ জংশন পৌঁছাবে রাত্রি ৯ টা ৫৫ মিনিটে।
ফলে খুশি জেলার সাধারণ মানুষ।
আগামী দিনে আরও প্রত্যাশা রাখছে জেলাবাসী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct