আপনজন ডেস্ক: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে অবহেলা করছে এবং সমস্যা সমাধানে কোনও সহায়তা করছে না। উত্তরবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে রওনা হওয়ার আগে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, কেন্দ্র কিছুই করেনি। গোটা উত্তরবঙ্গ জলমগ্ন। নির্বাচনের সময় সবাই বড় বড় প্রতিশ্রুতি দেয় এবং তারপর উধাও হয়ে যায়।
এদিন শিলিগুড়ির উত্তরকন্যায় কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শিলিগুড়িতে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বলেন, আজ কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কালিম্পং, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, মালদা, মুর্শিদাবাদে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক করেছি। সবাইকে জরাজীর্ণ বাড়ি খালি করতে এবং বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বন্যায় সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত বিধান মার্কেটের ছয়টি দোকান পুনঃনির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর এই ছয়টি দোকানকে ১ লক্ষ টাকা করে দেবে। যে সব দোকানে কম ক্ষতি হয়েছে, তাঁদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। গজলডোবায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। সেই ঘটনায় উত্তরকন্যায় মৃতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রবিবার প্রশাসনিক বৈঠকের পর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রী। মৃতদের পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন তিনি। গজলডোবার এই ঘটনা খুবই মর্মান্তিক বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, শুক্রবার রাজগঞ্জ ব্লকের গজলডোবা সংলগ্ন টাকিমারির ধুপগুড়ি বস্তি এলাকায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় একই পরিবারের চারজনের। মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর পেয়ে শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন মেয়র গৌতম দেব এবং বিধায়ক খগেশ্বর রায়। এরপর আজ সেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে আর্থিক সাহায্য করলেন মুখ্যমন্ত্রী।
এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, বন্যার সম্ভাবনার পরিপ্রেক্ষিতে সমস্ত জেলাশাসক, জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত ও পুরসভাকে সতর্ক করা হয়েছে। ডিপিআর প্রস্তুত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যে নেপাল থেকে কোশী নদীর ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল যা রাজ্যের অনেক অঞ্চলকে প্রভাবিত করেছে।
তিনি বলেন, আমি উত্তরবঙ্গে যাচ্ছি। আমি দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সাতটি জেলা (বন্যাকবল) পরিদর্শন করেছি। দক্ষিণবঙ্গের দিকে জল ছেড়েছে ডিভিসি। উত্তরবঙ্গে নেপাল থেকে ৫ লক্ষ কিউসেক কোশী নদীর জল ছাড়া হয়েছে, যার ফলে সেই জল বিহার, বাংলার মধ্য দিয়ে গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হচ্ছে। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদ্বারে বন্যার সম্ভাবনা রয়েছে মালদা, মুর্শিদাবাদ, দক্ষিণ দিনাজপুরের কিছু এলাকায়। বন্যা কবলিত এলাকায় উদ্ধার তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, সবাইকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং পুলিশ ও রাজ্য প্রশাসন উদ্ধার ও সহায়তার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা এর আগেও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যে বন্যার ‘মূল কারণ’ বলে অভিযুক্ত করেছিলেন।
“ঝাড়খণ্ডে, বৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই আমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, কারণ তারা নিজেদের বাঁচাতে জল ছেড়ে দেয়, যার প্রভাব পড়ে গোটা বাংলা অঞ্চলে। গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান, ফ্লাড কন্ট্রোল, ডিভিসি সবই কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু তাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে লক্ষ লক্ষ বাড়ি প্লাবিত হচ্ছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct