আপনজন ডেস্ক: ইরানের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে বিবেচিত লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহর ওপর গত কয়েকদিন ধরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে হানাদার ইসরায়েলি বাহিনী। অথচ এখনও চুপ রয়েছে ইরান। প্রতিশোধমূলক কোনও পদক্ষেপ নিচ্ছে না তারা। আর বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছেন ইরানের কট্টরপন্থী রক্ষণশীলরা। তাহলে কি ইরান সংযম দেখাবে নাকি প্রতিশোধ নেবে, তা নিয়ে দোটানায় রয়েছে? সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেওয়ার সময় গাজা ও লেবানন যুদ্ধে ইসরায়েলের সমালোচনা করেন। তবে তার পূর্বসূরিদের তুলনায় অধিকতর সমঝোতামূলক সুরে কথা বলেন এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আগ্রাসী ধ্বংসাত্মক মন্তব্য থেকে বিরত থাকেন। গত জুলাই মাসে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন পেজেশকিয়ান।
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলের জন্য শান্তি চাই এবং কোনও দেশের সঙ্গে সংঘর্ষে যাওয়ার ইচ্ছা নেই।’
তিনি আরো জানান, ‘ইরান ২০১৫ সালের পারমাণবিক চুক্তির অংশগ্রহণকারীদের সাথে আলোচনা পুনরায় শুরু করতে প্রস্তুত।’
ইরানের অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তা এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) এর কমান্ডাররাও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়ে অস্বাভাবিকভাবে সংযত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন।
যদিও হিজবুল্লাহ এবং হামাস উভয়কেই অস্ত্র, অর্থ ও প্রশিক্ষণ দিয়েছে ইরান। হিজবুল্লাহকে শক্তিশালী সামরিক শক্তিতে রূপান্তর করতে ইরানের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ছিল, বিশেষ করে ১৯৮০ এর দশকে আইআরজিসি যখন দলটি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করে। এটির প্রধান অস্ত্র সরবরাহকারী হিসেবে কাজ করে যা হিজবুল্লাহ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারে, বিশেষ করে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ইরান প্রতি বছর প্রায় ৭০০ মিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তাও প্রদান করে।
গত সপ্তাহে, লেবাননে ইরানি রাষ্ট্রদূত মজতবা আমানি বৈরুত দূতাবাসে পেজার বিস্ফোরণে মারাত্মকভাবে আহত হন। হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহৃত হাজার হাজার পেজার এবং ওয়াকি-টকি দুটি বিস্ফোরিত হয় ও ৩৯ জন নিহত হয়।
এই হামলার জন্য ইরান ইসরায়েলকে দায়ী করলেও, তাৎক্ষণিকভাবে কোনও প্রতিশোধের হুমকি দেয়নি।
অথচ এপ্রিলে দামাস্কাসে ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি হামলায় ৮ কমান্ডার হত্যার ঘটনায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান। এমনকি ইসরায়েলকে লক্ষ করে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাও চালায়।
তেহরানে হামাসের রাজনৈতিক নেতা ইসমাইল হানিয়েহকে হত্যার জন্যও ইসরায়েলকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ইরান। যদিও তারা এখনো কোনও পদক্ষেপের ঘোষণা দেয়নি। এ বিষয়ে সাবেক আইআরজিসি কমান্ডার বলেন, ইসরায়েলকে বারবার হুমকি দিয়েও কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি সমর্থকদের মধ্যে বাহিনীর বিশ্বাসযোগ্যতাকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সোমবার প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ান নিউ ইয়র্কে মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ইসরায়েল ইরানকে যুদ্ধে টেনে নেয়ার চেষ্টা করছে।
ইসরায়েলের সঙ্গে উত্তেজনা কমানোর বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির ঘনিষ্ঠ কিছু কট্টর রক্ষণশীলরা। ইরানের সর্বোচ্চ ক্ষমতা আয়াতুল্লাহ খামেনি এবং আইআরজিসির হাতে। তারাই মূল কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, প্রেসিডেন্ট নন। তবে খামেনিও বুধবার প্রবীণদের উদ্দেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার কোনো পরিকল্পনা উল্লেখ করেননি বা কোনো হুমকি দেননি, যা তার জন্য বেশ অস্বাভাবিক। ইসরায়েলি সাংবাদিক বারাক রাভিদ জানিয়েছেন, দুই ইসরায়েলি কর্মকর্তা এবং পশ্চিমা কূটনীতিকরা ইঙ্গিত দিয়েছেন, হিজবুল্লাহ ইরানের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যাতে ইরান তাদের সাহায্য করতে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ করে। তবে ইসরায়েলি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন যে ইরান হিজবুল্লাহকে জানিয়েছে এটি সঠিক সময় নয়।
কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ইরান উদ্বিগ্ন যে ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিক্রিয়া উসকে দিতে পারে, যা দেশটিকে একটি বৃহত্তর সংঘাতের দিকে টেনে নিতে পারে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অর্থনীতি এবং চলমান অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যদি আইআরজিসির ওপর আঘাত হানে, তবে তা দেশটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো দুর্বল করতে পারে। এতে ইরানে বিরোধীদের আবারো অস্থিরতা তৈরির সাহস জোগাতে পারে।
তবে যদি ইরান হিজবুল্লাহর সাথে ইসরায়েলের সংঘাতে সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে, সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের অন্যান্য মিত্র মিলিশিয়াদের কাছে বার্তা যেতে পারে যে সংকটের সময় ইসলামি প্রজাতন্ত্র তাদের নিজেদের স্বার্থ এবং টিকে থাকার দিকে বেশি মনোযোগ দেয়।
এর ফলে প্রকৃতপক্ষে ইরান কি করবে, তা নিয়ে বেশ দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct