এম মেহেদী সানি , বনগাঁ আপনজন: উত্তর ২৪ পরগনা জেলার ইছামতীর ও তার শাখা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক নদীর তীরবর্তী স্বরুপনগর, গাইঘাটা, হাবড়া-১, বনগাঁ ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন ৷ প্রায় প্রতিবছরই একই চিত্র ধরা পড়ে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে ৷ ইছামতী ও তার শাখা নদী গুলি সংস্কার না হলে আগামী দিন আরও বাড়বে দুর্ভোগ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দুর্গত এলাকাবাসী ৷ ভোট আসে ভোট যায়, সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রধান প্রতিশ্রুতি থাকে ইছামতি সংস্কারের ৷ তবে প্রতিশ্রুতি সার, সংস্কার বিশবাঁও জলে ৷ বর্ষা একটু বেশি হলেই ইছামতী তীরবর্তী এলাকা জলমগ্ন হয়, জলমগ্ন হয় হাজার হাজার একর কৃষি জমি ৷ জল যন্ত্রণার অবসান করতে দীর্ঘদিন ধরেই নদীর পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের দাবি করে আসছে স্থানীয় বাসিন্দারা । সেই দাবি অবশ্য আজও পূরণ হয়নি । সংস্কারের অভাবে দীর্ঘদিন হল আন্তর্জাতিক নদীটি স্রোত, নাব্যতা হারিয়ে মৃতপ্রায় । বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার একাংশে বছরের বেশিরভাগ সময়ে নদী কচুরিপানায় ভরা থাকে । নদীর এই অবস্থার ফলে জীবিকাও হারিয়েছেন বহু মানুষ ।
২০২৩ সালের ৫ই অক্টোবর তেতুলিয়া শ্মশানের কালীমন্দিরে পূজা অর্চনা করে বনগাঁর সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় বন্দর, জাহাজ ও জলপথ প্রতিমন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর স্বরূপনগরের তেঁতুলিয়া থেকে গাইাঘাটার কালাঞ্চি পর্যন্ত ২৩.৮১ কিলোমিটার ইছামতি নদীতে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে পলি তুলে নদী সংস্কারের কাজের সূচনা করেছিলেন ৷ সূচনায় যেন শেষ, সংস্কার আর হলো কই এমনই স্পষ্ট বক্তব্য নদী তীরবর্তী এলাকাবাসীর ৷ ওই কাজে খরচ ধরা হয়েছিল আনুমানিক ৫ কোটি টাকা । সেসময় নদী সংস্কারের পর বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরে, ইছামতীর উপরে কয়েকটি সেতু তৈরি করা হবে বলেও কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী শ জানিয়েছিলেন । বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস গত লোকসভা ভোটের প্রার্থী হয়ে শান্তনুর বিরুদ্ধে ইছামতী সংস্কারের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ তুলেছিলেন, বলেছিলেন, নির্বাচনে তৃণমূল জয়ী হলে ইছামতি সংস্কার করা হবে ৷ যদিও তিনি পরাজিত হন ৷
এই সমস্ত রাজনৈতিক কচকচানি, প্রতিশ্রুতি, সরকারি উদাসীনতা সাধারণ মানুষকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বলেই মনে করছেন বিদ্বজ্জনরা ৷ অগভীর নদীর কারণে ভারী বৃষ্টি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বহু মানুষ ৷ এবারও ইছামতির ও তার শাখা নদীর সঙ্গে সংযুক্ত স্বরূপনগর, গাইঘাটা, হাবরা-১, বনগাঁ, সহ একাধিক ব্লকের কয়েক হাজার একর জমি জল মগ্ন ৷ ইছামতি সংস্কার না হওয়ার কারণে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত স্বরূপনগর ব্লক এলাকা ৷ চারঘাট পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম জলের নিচে, দিয়াড়া গ্রামের স্বরূপনগর পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ আসমা খাতুনের বাড়ির দরজায় জল ৷ সাধারণ মানুষের সমস্যার শেষ নেই, কেবল এই পঞ্চায়েতে জল যন্ত্রণায় ভুগছে দশ হাজারেরও বেশি মানুষ, কয়েকশো বাড়ি জলমগ্ন ৷ চারঘাট গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান টুম্পা সরদার বলেন, ‘এ পর্যন্ত চারঘাট পঞ্চায়েত এলাকার জন্য মাত্র পাঁচ কুইন্টাল চাল এসেছে ৷’ জলমগ্ন এলাকাবাসীর অভিযোগ ত্রাণ পৌছায়নি, নেই ত্রাণ শিবিরও, অসুস্থ হয়ে পড়ছি মেডিকেল ক্যাম্পেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে না ৷’ প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ উঠছে ৷ একাধিক গ্রামে গিয়ে দেখা যায় মাটির বাড়ির টালির চাল পেলা দিয়ে রেখেছেন বাড়িওয়ালা, সরকারি ঘরের তালিকায় নাম নেই বলেও অভিযোগ করেছেন অনেকে ৷ এ প্রসঙ্গে স্বরূপনগরের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক কৃষ্ণপদ রায় জানান, ‘স্বরূপনগরের বিভিন্ন এলাকায় কম করে ১৫ হাজার বাড়ি জলমগ্ন ৷ ৬০ থেকে ৭০ হাজার মানুষ সমস্যার সম্মুখীন ৷ আনুমানিক দু হাজার একর কৃষি জমে জলের তলায় ৷ আমরা কন্ট্রোলরুম খুলেছি এবং ইছামতী বাঁধের উপর নজরদারি চালানো হচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে জলমগ্ন এলাকাবাসীর জন্য শুকনো খাবার এবং বেবি ফুট পাঠানো হয়েছে ৷’ অন্যদিকে হাবরা-১ ব্লকের এডিও কুসুম কমল মজুমদার বলেন, ‘ব্লকে কমবেশি ১১০০ হেক্টর জমি জলমগ্ন ৷’ যার অন্যতম কারণ হলো ইছামতী নদী এবং সংলগ্ন খাল সংস্কার না হওয়া ৷ স্বরূপনগর এর বিধায়ক বীনা মন্ডল বলেন, ‘ইছামতী সংস্কারের বিষয়টি আমরা ইরিগেশন দপ্তরকে জানিয়েছি ৷ আশা করছি ফলপ্রসু হবে ৷’ চারঘাট এলাকার বিশিষ্ট অ্যাথলেট ও সমাজকর্মী ইসমাইল সরদার বলেন, ‘অনুন্নত নিকাশি ব্যবস্থার জন্যই আজ এই বন্যা পরিস্থিতি, সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা ইছামতীকে সামনে রেখে নির্বাচন বৈতরণী পার হলেও সংস্কারের দিকে কারোরই খেয়াল নেই ৷ সমস্যায় পড়ছে সাধারণ মানুষ ৷ যেভাবেই হোক ইছামতীর হাল ফিরুক ৷’ কবে ফিরবে ইছামতীর হাল অপেক্ষায় আছেন বনগাঁ ও বসিরহাট মহকুমার বাসিন্দারা ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct