এম মেহেদী সানি , বসিরহাট আপনজন: বসিরহাটের সাংসদ হাজী সেখ নুরুল ইসলাম চির বিদায় নিয়েছেন। বুধবার দুপুর ১.০৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশাস ত্যাগ করার পর রাজ্যের সংখ্যালঘু সহ রাজনৈতিক মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বিশিষ্টজনরা তার অকাল মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছে। অনেকে তার বাড়িতে গিয়েও তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে হাজী নুরুল ইসলামের বাড়িতে আসেন ফিরহাদ হাকিম ৷ তিনি পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দেন ৷ সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, আমাদের এমপি হাজী নুরুল ইসলাম আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেল, এমন মিষ্টিভাষী অহংকারহীন হেল্পফুল মানুষ খুব কম পাওয়া যায় ৷ আমি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে এবং আমি নিজে ওর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে এলাম, পরিবারের পাশে আছি৷ যে কোনো আপদে বিপদে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ওদের পরিবারের মাথায় উপর অভিভাবক হিসাবে আছে সেটা ওদেরকে জানাতে এলাম ৷
ভাঙড়ের বিধায়ক পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিকী বলেছেন, হাজী শেখ নুরুল ইসলামের জীবনাবসানে আমি গভীর শোকাহত ৷ তাঁর পরিবারের সঙ্গে ফুরফুরা শরীফে আমাদের পরিবারের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। তাঁর স্ত্রী ও চার পুত্র সহ পরিবারের সকলকে ও তাঁর দলকে আমি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।
হাজী নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা: ১৯৭৮ সালে জাতীয় কংগ্রেস দলে ছাত্র অবস্থায় রাজনীতির আঙিনায় হাতে খড়ি ৷ ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন লড়াই আন্দোলনে সাক্ষী হাজী নুরুল ৷ ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে, সে বারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, ২০০৩ সালের নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৷ ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন। রাজনৈতিক জীবনের উত্থানে কখনো পরাজয় বরণ করেননি হাজী নুরুল ইসলাম ৷ এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল, জঙ্গিপুরের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন হাজী নুরুল কে, সে বার তিনি পরাজয় বরণ করেন ৷ তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে পুনরায় জয়লাভ করেন ৷ ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ফের তাকে মনোনীত করেছেন ৷ এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দু’বার রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন। বর্তমানে তিনি তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য চেয়ারম্যান এবং বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে বহাল আছেন ৷ সম্প্রতি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ নির্বাচিত হন ৷
গত ২৬শে আগস্ট তিনি কিছুটা সুস্থতা অনুভব করায় ফেসবুক ওয়াল থেকে বসিরহাটবাসীর উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখেন ৷ বলেন, আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমত এবং আপনাদের দোয়া ও আশির্বাদে আমি এখন সুস্থ আছি , ভালো আছি । সমগ্র বসিরহাটবাসীকে অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন রইল । বিগত লোকসভা নির্বাচনে আমি আপনাদের কথা দিয়েছিলাম যে আপনারা আমাকে ভোট দিন,আমি উন্নয়ন করে আপনাদের ঋণ পরিশোধ করবো, আমি কথা মতো কাজ শুরু করে দিয়েছি।
কিন্তু তার সেই কাজ শেষ করার আগে চিরবিদায় নিলেন।
অবশেষে তা আর শেষ করতে পারলেন না। আমার সমগ্র বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের প্রত্যেকটি অঞ্চলে ইতিমধ্যে উন্নয়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে ।’ তবে সম্প্রতি হাজি নূরুল ইসলামের অবস্থার অবনতি হয় । বারাসতের বাড়িতেই চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন তিনি । বুধবার সকাল থেকেই তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে । দুপুরের দিকে চিকিৎসকের একটি দল তাঁর বাড়িতে পৌঁছন । শেষরক্ষা আর হলো না, আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে পাড়ি দিলেন পরকালে ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct