আপনজন ডেস্ক: কাশ্মীরকে সবাই চেনে ‘ভূস্বর্গ’ নামে। ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে সবচেয়ে বেশি আয়ও হয় পর্যটন থেকে। এই কাশ্মীরই ক্রিকেট–বিশ্বে পরিচিত ব্যাটের অন্যতম জোগানদাতা হিসেবে। উন্নত মানের ব্যাট তৈরি হয় উইলো কাঠ থেকে, যা পাওয়া যায় কাশ্মীরে। তবে যে উইলোগাছ থেকে কাঠ হয়, কাশ্মীরে তা গত কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। ব্যাট প্রস্তুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের মতে, কাশ্মীরে উইলোগাছ বিলুপ্তির পথে। বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট খেলুড়ে দেশ বাড়ছে, লিগ বাড়ছে। কিন্তু চাহিদা অনুসারে ব্যাট তৈরি করা যাচ্ছে না। এর ফলে এই খাতে কর্মরত ৪০০ কারখানার প্রায় দেড় লাখ কারিগরের জীবিকা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সোমবার ভারতের বার্তা সংস্থা এএনআইয়ের এক প্রতিবেদনে এসব বিষয় উঠে এসেছে। কাশ্মীরে ব্যাট প্রস্তুত খাতে স্থানীয়দের পাশাপাশি উত্তর প্রদেশ ও পাঞ্জাবের শ্রমিকেরা কাজ করেন। এটি কাশ্মীরের তৃতীয় সর্বোচ্চ আয়ের খাত, স্থানীয় অর্থনীতিতে যার অবদান প্রায় ৭০০ কোটি রুপি। কাশ্মীরের ক্রিকেট ব্যাট প্রস্তুতকারক অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র ফাওজুল কবির বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, ‘ব্যাটশিল্পের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৫ গুণের বেশি। কিন্তু আমরা চাহিদার মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ পূরণ করতে পারি। ব্যাট বানানোর কাঁচামাল অনেক বছর ধরেই কমছে, যা এখন বিলুপ্তির পথে।’
ফাওজুল কবির কাশ্মীরে ব্যাট প্রস্তুতকারক কোম্পানি জিআরএইট ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক। নিজের প্রতিষ্ঠানকে আইসিসি অনুমোদিত কাশ্মীরের প্রথম কোম্পানি দাবি করে ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি, ‘কাঁচামালের স্বল্পতা ব্যাটশিল্পে খুব বাজে প্রভাব ফেলেছে। আমরা ভয় করছি, সামনের পাঁচ বছরের মধ্যে শুধু কাঁচামালের অভাবেই এই খাতটা ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।’
ফাওজুল কবির জানান, ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের গভর্নর মনোজ সিনহাকে উইলোগাছ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিতে অনুরোধ করা হয়েছে। এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়াও পাওয়া গেছে, ‘গভর্নর আমাদের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি হাতে নেওয়ার কথা বলেছেন। ‘মায়ের জন্য একটি গাছ’ নামে উদ্যোগের কথাও শুনেছি। এই কর্মসূচিতে সরকার এ বছর আড়াই কোটি গাছ লাগাবে। আড়াই কোটি মানে অনেক, আমাদের বছরে উইলোগাছ দরকার এক লাখ। সরকার আমাদের জন্য উইলোগাছ লাগালে দুটো কাজই কিন্তু বাস্তবায়ন হয়। জম্মু–কাশ্মীর আবার সবুজ হয়ে উঠবে, আর আমাদের দেড় লাখ মানুষের এই শিল্পটাও বেচে থাকবে।’
কাশ্মীরের ব্যাটের চাহিদা কেমন জিজ্ঞেস করলে ফাওজুল কবির বলেন, ‘১০ বছর আগেও ক্রিকেট খেলত শুধু টেস্ট খেলুড়ে দলগুলো। কিন্তু আইসিসি বিশ্বজুড়ে ক্রিকেট ছড়িয়ে দিতে বড় উদ্যোগ নিয়েছে। এখন সারা বিশ্বে ১৬২টি দেশ ক্রিকেট খেলে। এই দলগুলো বেড়ে যাওয়ার কারণে ১০ বছর আগের তুলনায় ব্যাটের চাহিদা ২০ থেকে ২৫ গুণ বেড়েছে। যে কারণে কাশ্মীরের ব্যাটশিল্পে চাহিদা বেড়েছে। মানুষ কাশ্মীরের উইলো পছন্দ করে।’ কিন্তু পছন্দ করলেই তো কাশ্মীরের ব্যাটশিল্প উপকৃত হচ্ছে না, উইলোগাছই যে থাকছে না!
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct