এম মেহেদী সানি, বসিরহাট, আপনজন: পরকালে পাড়ি দিলেন বসিরহাটের সাংসদ তৃণমূল নেতা হাজী শেখ নুরুল ইসলাম ৷ (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন) ১৯৬৪ সালে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের অন্তর্গত ছোট জাগুলিয়ার বাহেড়া শহরে জন্মগ্রহণ করেন । শেখ তফসের আলী ও নুরজাহান বিবির ১০ জন সন্তানের মধ্যে হাজী নুরুল একজন ৷ পত্নীর নাম রাসিদা বেগম, শেখ নুরুল ইসলামের ৪ জন পুত্র সন্তান রয়েছে ৷ সম্প্রতি ঘাড়ের অপারেশন হয়েছিল হাড় ক্ষয়ে যাওয়ার জন্য। সেই সঙ্গে লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাই দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন ছিলেন। বুধবার দুপুর একটা নাগাদ তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
প্রয়াত হাজী নুরুল ইসলামের ভাই শেখ সাইফুদ্দিন জানান, আজ বেলা ০১:০৫ এ নিজ গৃহে ইন্তেকাল করেন ৷ জানাযা হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১:৩০ মিনিটে, বহেড়া ঈদগাহ ময়দানে ৷
হাজী নুরুলের মৃৃত্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় শোকপ্রকাশ করে বলেছেন, আমার শ্রেষ্ঠ সহকর্মী, আমাদের বসিরহাটের সাংসদ হাজী শেখ নুরুল ইসলামের ইন্তেকালের খবর শুনে আমি মর্মাহত। তিনি প্রত্যন্ত সুন্দরবন এলাকায় একজন নিবেদিত সমাজসেবক ছিলেন এবং পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের দরিদ্র মানুষের উন্নয়নে কঠোর পরিশ্রম করেছেন। বসিরহাটের মানুষ তাঁর নেতৃত্ব মিস করবেন। আমি তার পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও সহকর্মীদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।
তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, আমাদের বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হাজী শেখ নুরুল ইসলামের মৃত্যুর খবর শুনে আমি গভীরভাবে দুঃখ পেয়েছি। তিনি মা, মাটি, মানুষ দর্শনের সত্যিকারের চ্যাম্পিয়ন ছিলেন, এমনকি তাঁর শেষ দিনগুলিতেও মানুষের সেবা এবং তাদের কল্যাণ রক্ষায় তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁর পরিবারের প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল এবং আমি তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।
হাজী নুরুল ইসলামের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা: ১৯৭৮ সালে জাতীয় কংগ্রেস দলে ছাত্র অবস্থায় রাজনীতির আঙিনায় হাতে খড়ি ৷ ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় কংগ্রেসের বিভিন্ন সাংগঠনিক দায়িত্ব সামলাচ্ছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিভিন্ন লড়াই আন্দোলনে সাক্ষী হাজী নুরুল ৷ ১৯৯৮ সাল থেকে তৃণমূল কংগ্রেসে, সে বারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, ২০০৩ সালের নির্বাচনে পঞ্চায়েত সমিতির আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৷ ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে জেলা পরিষদের আসনে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৷ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হন ৷ রাজনৈতিক জীবনের উত্থানে কখনো পরাজয় বরণ করেননি হাজী নুরুল ইসলাম ৷ এরপর ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল, জঙ্গিপুরের প্রার্থী হিসেবে মনোনীত করেন হাজী নুরুল কে, সে বার তিনি পরাজয় বরণ করেন ৷ তারপর ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে হাড়োয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে পুনরায় জয়লাভ করেন ৷ ২০২৪ এর লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হিসেবে ফের তাকে মনোনীত করেছেন ৷ এর পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে দু'বার রাজ্য হজ কমিটির চেয়ারম্যান, তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি, চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি ও চেয়ারম্যানের দায়িত্ব সামলেছেন ৷ বর্তমানে তিনি তৃণমূল সংখ্যালঘু সেলের রাজ্য চেয়ারম্যান এবং বসিরহাট সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি পদে বহাল আছেন ৷ সম্প্রতি বসিরহাট লোকসভা কেন্দ্রে সাংসদ নির্বাচিত হন ৷
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct