আপনজন ডেস্ক: ফিলিস্তিনে দখলদার ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো গণহত্যার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভে ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করায় ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে ধাওয়া দিয়ে আটক করেছে জার্মান পুলিশ। গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দেশটির রাজধানী বার্লিনে এ ঘটনা ঘটে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ব্যবহারকারীরা। অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্য সেই শিশুটিকে ধাওয়া করছে। শিশুটি একটি ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করছিল। আশপাশের লোকজন তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। ছেলেটির চোখে-মুখে ভয় দেখা যাচ্ছিল, তবুও পুলিশ তাদের তাড়া করেছিল। অবশেষে তাকে ঘিরে ধরে একটি পুলিশ গাড়ির দিকে নিয়ে যায়।
পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফরম এক্স-এ অনেকে শিশুটির সুস্থতার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, ‘বার্লিন পুলিশ ১০ বছর বয়সী এক ছেলেকে ফিলিস্তিনের পতাকা বহন করার জন্য আটক করেছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক ও অস্বস্তিকর আর কিছু হয় না।’ অপর এক ব্যবহারকারী ব্যঙ্গাত্মকভাবে লিখেছেন, ‘সাহসী বার্লিন পুলিশ শহরের সবচেয়ে বিপজ্জনক শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে। সে তার পতাকা দিয়ে ফেডারেল সরকারকে উৎখাত করে একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ঘোষণা করতে চেয়েছিল।’ আরেকজন হতাশা ব্যক্ত করে লিখেছেন, ‘মাত্র ১০ বছর বয়সী এক শিশুকে তাড়া করেছে পুলিশ। কিছুই বলার নেই আসলে!’
জার্মান সাংবাদিক এবং লেখক হ্যানো হাউয়েনস্টাইন ঘটনাটিকে এক্স-এ ‘অস্বস্তিকর’ এবং ‘লজ্জাজনক’ বলে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে দক্ষিণ আফ্রিকার কর্মী অ্যান্ড্রু ফিনস্টেইন এ ঘটনাকে ‘দুঃখজনক এবং অপ্রতিরোধ্য’ বলে অভিহিত করেছেন।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে জার্মান সরকার ইসরায়েল-পন্থী অবস্থান নিয়েছে এবং ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভ দমন করে আসছে। ভিডিও প্রকাশের পর থেকে জার্মান কর্তৃপক্ষ কোনো মন্তব্য করেনি।
জার্মান পুলিশ এর আগেও জার্মানির রাজধানীতে ফিলিস্তিনপন্থী সমাবেশে শিশুদের ওপর হামলা করেছে বলে সংবাদমাধ্যম দ্য নিউ আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত জুন মাসে পতাকা দিয়ে একজন পুলিশ অফিসারের হেলমেটে আঘাত করার অভিযোগে সাত বছর বয়সী এক শিশুকে আটক করা হয়েছিল। গত জুলাই মাসে জার্মান কর্মীরা বার্লিনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পুলিশ প্রধানকে সম্বোধন করা একটি খোলা চিঠিতে শিশুদের বিরুদ্ধে পুলিশি সহিংসতা বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘অসংখ্য ঘটনা প্রমাণ করে যে পুলিশ শিশু ও যুবকদের জোরপূর্বক হাতকড়া লাগিয়ে হেফাজতে নিচ্ছে। অপ্রাপ্তবয়স্কদের সুরক্ষা এবং গুরুত্বপূর্ণ সুরক্ষা নিশ্চিত করা হয়নি।’ গাজায় ইসরায়েলি বর্বরতা নিয়ে সারা পৃথিবীতেই প্রতিবাদ চলছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ হামলায় এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct